Saheb Bandh

দূষণের গ্রাসে সাহেববাঁধ, মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ী পাখির দল

রাজ্য জেলা

ভাস্কর দাশগুপ্ত- পুরুলিয়া

অদ্ভুত এক সমাপতন। গত কয়েক বছরে এই জেলায় বেড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা। আর গত কয়েক বছরে পুরুলিয়া শহরের গর্বের সাহেব বাঁধে কমেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। শীত আসলেই কমনটেল গার্ডোয়াল, হিরণ, গ্রীন সান, পন্ড হিরণ প্রজাতির পাখিরা সাইবেরিয়া, শ্রীলংকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, চীন সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে উড়ে এসে কয়েক মাসের অতিথি হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে অদ্ভুতভাবে কমে গেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। গোটা সাহেব বাঁধ মুখ ঢেকেছে কচুরিপানায়। কচুরিপানাময় সাহেব বাঁধকে দূর থেকে দেখলে বোঝা যাবে না সেটা জলাশয় নাকি খেলার মাঠ। জল মারাত্মকভাবে দূষিত। অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে। সাহেব বাঁধের এক প্রান্তে থাকা জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রে এক সময় বহু মানুষ আসত পাখি দেখতে। সেখানে বাইনোকুলার রাখা ছিল। পাখি যখন কমে গেছে তখন দেখার লোক আর নেই। সাহেব বাঁধের উন্নয়ন নিয়ে পুরুলিয়া পৌরসভার প্রতিশ্রুতি যত বেড়েছে সাহেব বাঁধের জলে ততই বেড়েছে কচুরিপানা। সাহেব বাঁধের থেকে যেমন মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ী পাখির দল, ঠিক তেমনি সাহেব বাঁধে কিছু স্থায়ী পাখি বসবাস করত। তারাও এখন দূষণের জেরে ভিন জায়গার বাসিন্দা হয়ে উড়ে চলে গেছে।


 

একটা সময় ছিল যখন সাহেব বাঁধের পাড়ে দাঁড়ালে দেখা যেত শয়ে শয়ে পাখি জল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করছে। বাঁধের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে পরিযায়ী পাখির দল। তখন জলের বুকে ভেসে বেড়াতো সেই পরিযায়ী পাখির দল। সাহেব বাঁধের ঠিক মাঝখানের দ্বীপে বাসা বাঁধত সেই পরিযায়ী পাখির দল। সেখানে ডিম পারতো। বাচ্চাকে একটু বড় করত। তারপর একটু গরম পড়তেই বাচ্চা নিয়ে ফের উড়ে যেত অজানার পথে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আর পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। অক্সিজেনের অভাবে উদ্ভিদ গেছে কমে জলজ প্রাণীর সংখ্যা। পাখির দলের খাদ্যের অভাব। মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, চারিদিকে বড় বড় অট্টালিকা এবং শব্দ দূষণের কারণে সাহেব বাঁধ  থেকে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ী পাখির দল। এক সময় বাম পরিচালিত পুরুলিয়া পৌরসভার থেকে গোটা সাহেব বাঁধ জুড়ে বোর্ড লাগিয়ে পক্ষী শিকারীদের সতর্ক করা হয়েছিল। নিয়মিত পাহারার ব্যবস্থা ছিল যাতে পরিযায়ী পাখিকে কেউ শিকার না করতে পারে। এখন পরিযায়ী পাখিও নেই সেই সতর্কীকরণ বোর্ডও নেই, পাহারাও নেই। এমনকি সাহেব বাঁধের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে কমন টেল, ওয়াটার কক, পিন, টেল পারপেল মুহরান প্রভৃতি প্রজাতির পাখিরা থাকত। সাহেব বাঁধের দূষণের কারণে সেই স্থায়ী পাখির দলকেও এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না। 
বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক ডা: নয়ন মুখার্জি জানিয়েছেন, সাহেব বাঁধ থেকে পরিযায়ী পাখির দলের মুখ ফেরানোর অন্যতম কারণই হচ্ছে দূষণ। প্রশাসনকে বারে বারে জানানো সত্বেও সাহেব বাঁধের হাল ফেরাতে কেউই উদ্যোগী ভূমিকা নেয়নি। যার ফলে সাহেব বাঁধের পরিযায়ী পাখি এখন সুদূর অতীতের গল্প।

Comments :0

Login to leave a comment