আদিবাসীদের প্রতি মেকি দরদ দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁর বাহিনী লুট চালাচ্ছে আদিবাসীদের বস্তিতে। গবাদী পশু লুট হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শিশুদের পড়ার বই। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে আদিবাসী মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই। রবিবার প্রেস বিবৃতিতে এই ভাষাতেই তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করল আইএসএফ। একইসঙ্গে অভুক্ত শ্রমিকদের জন্য কমিউনিটি কিচেনও চালু করেছে আইএসএফ।
সোমবার উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের একটি বন্ধ চা বাগানের জমি দখল করতে যায় তৃণমূল আশ্রিত মাটি মাফিয়ারা। চা বাগানের একটি অংশে দর্মার ঘর বানিয়ে বসবাস করেন বাগানের চা শ্রমিকরা। তৃণমূলের বাহিনী সেই ঘরগুলিকে জ্বালিয়ে দেয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে শনিবার চোপড়া যান আইএসএফ’র চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী। তিনি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এই বর্বর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানান। রবিবার প্রেস বিবৃতির মাধ্যমেও তৃণমূলী বাহিনীর এই বর্বরতার নিন্দা জানাল আইএসএফ।
বিবৃতিতে আইএসএফ জানিয়েছে, শনিবার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার অন্তর্গত আমবাড়ি- লোধাবাড়ি এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত আদিবাসী শ্রমিক পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেন নওসাদ সিদ্দিকী। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত সোমবার (২১ আগষ্ট) বন্ধ হওয়া একটি চা বাগানের শ্রমিক বস্তিতে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস মদতপুষ্ট জমি মাফিয়াদের গুন্ডা বাহিনী ভয়াবহ হামলা চালায় বন্দুক-বোমা নিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বস্তি থেকে শ্রমিকদের উচ্ছেদ করে জমি দখল। বেপরোয়া এই নৃশংস হামলায় বহু মানুষ আহত হন।
আইএসএফ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা বাড়িঘর ভাঙচুর করে, রান্না করার সরঞ্জাম ভেঙে তছনছ করে, ঘরে রাখা চাল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করে দেয়। এমনকি শ্রমিকদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ বাকি সব গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং পোষা গবাদী পশুগুলিও লুট করে নিয়ে চলে যায় তৃণমূলী বাহিনী। দুষ্কৃতিরা শিশুদের বই খাতাকে পর্যন্ত ছাড় দেয়নি। সেগুলিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রেস বিবৃতিতে আইএসএফ জানাচ্ছে, এই নৃশংস ঘটনায় রাজ্যসরকারের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন নওসাদ সিদ্দিকী। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মেকি আদিবাসী দরদকে কটাক্ষ করে বলেছেন, আদিবাসীদের ব্যবহার করে উৎসব-অনুষ্ঠান করতে তিনি পারেন। কিন্তু এই অসহায় মানুষগুলির জন্য তাঁর কোন সহানুভূতি নেই।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের নওসাদ বলেন, কাজ না পেয়ে এই রাজ্যের মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে যাচ্ছেন আর প্রায়ই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তিনি এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা ও মিজোরামের রেলসেতু ভেঙে পড়ে রাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিকের অকাল মৃত্যুর উল্লেখ করেন।
নওসাদ আরও বলেছেন, অবিলম্বে এই আদিবাসী শ্রমিকদের অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থানের স্থায়ী সমাধানের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। এরা কয়েকদিন ধরে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। পরণের কাপড়ও দুষ্কতীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। আপাতত আইএসএফের উদ্যোগে ঐ এলাকায় একটি যৌথ রান্নাঘর স্থাপন করা হয়েছে। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার মূল চক্রীরা গ্রেপ্তার হয়নি কেন, এটাই আশ্চর্যজনক।
চোপড়ার পাশাপাশি নওসাদ সিদ্দিকী ইসলামপুরে যান। সেখানে চন্দ্রযান-৩ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী অনুজ নন্দীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। অনুজ নন্দী চন্দ্রযান-৩ এর ক্যামেরা ডিজাইনার।
Comments :0