পার্থপ্রতিম বিশ্বাস
চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান -৩ অভিযান সফল। ফলে চন্দ্রযানের এবার চাঁদের মাটি চিনতে খুব ভুল হয়নি। কিন্তু চাঁদের মাটি চিনতে পারলেও এই অভাবনীয় অগ্রগতির যুগে আধুনিক প্রযুক্তি হিমালয়ের পাথর- মাটি চিনতে কেন ব্যর্থ হল সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে লোকের মুখে মুখে। কারণ এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত গত তেরো দিন ধরে উত্তরকাশীর কাছে ভেঙে পড়া এক সুড়ঙ্গের অন্ধ কুপে দিন কাটাচ্ছেন ৪১ জন শ্রমিক, যার মধ্যে রয়েছে এ রাজ্যের তিন পরিযায়ী শ্রমিক। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ ভেঙেছে বর্বর ইজরায়েলের বোমারু বিমানের বোমাবর্ষণে নয়, সুড়ঙ্গ ভেঙেছে দেশের সরকারের নির্দেশে বিস্ফোরক দিয়ে পাহাড় ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ বানাতে গিয়ে।
ইতিমধ্যে দেশ বিদেশের যাবতীয় প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে সুড়ঙ্গের মাথা ফুটো করে কিংবা তার পেট কেটে অবরুদ্ধ শ্রমিকদের বের করে আনার যাবতীয় চেষ্টা চলছে। আশা করা যায় দ্রুত সেই নির্মাণ কর্মীরা সূর্যের আলোর মুখ দেখবেন। কিন্তু উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গের অন্ধকার থেকে সেই মানুষেরা বেরিয়ে এলেও দেশের পাহাড়বাসী কোটি কোটি মানুষ উন্নয়নের নামে এমন অন্ধকার সুড়ঙ্গের মুখে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কিনা সেই প্রশ্ন আবারও উঠল এই বিপর্যয়ের সাথেই হিমালয় জুড়ে এমন বিকৃত নগরায়নের বীভৎস দৃশ্যে ! কার্যত হিমালয়ের মতো নরম, ভঙ্গুর শিলাস্তরে আবৃত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়েই প্রসারিত এদেশের বহু পাহাড় ঘেঁষা অঙ্গরাজ্য। কাশ্মীর থেকে সিকিম অবধি সেই রাজ্যগুলিতে নগরায়নের লক্ষ্যে এমন বেপরোয়া নির্মাণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নের স্বার্থে নাকি মানুষকে মৃত্যু মুখে ঠেলার লক্ষ্যে সেটাই হয়ে উঠছে সাম্প্রতিক বিতর্কের অন্যতম উপাদান। সেই প্রেক্ষিতে উত্তরকাশীর এই সুড়ঙ্গ বিপর্যয় প্রকৃত অর্থেই ‘মানুষের তৈরি বিপর্যয়’-এর জীবন্ত উদাহরণ।
নিষিদ্ধ নির্মাণ তবুও …
গত বছর ওই রাজ্যের অন্যতম শহর জোশিমঠ অঞ্চলটাই ভূমিধসের কবলে পড়ে ভূপৃষ্ঠের নিচে তলিয়ে গেছে অনেকটাই। এখন সেই গোটা জোশিমঠ অঞ্চলটাকেই ‘ নো কনস্ট্রাকশন জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। হাতে গরম বিপর্যয়ের ধাক্কায় যখন জোশিমঠে নির্মাণ নিষিদ্ধ করছে সরকার অথচ সেই রাজ্যেরই উত্তরকাশীতে ঘটে চলেছে সড়ক–সুড়ঙ্গ নির্মাণ যজ্ঞ। ফলে পাহাড় জুড়ে বেলাগাম নির্মাণ এবং নগরায়নের মাসুল গুনছে মানুষ কখনও হিমবাহ ফেটে, হড়পা বানে কিংবা ভূমিধসের কবলে পড়ে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও পর্যটন কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে সরকারি মদত থাকায় বেলাগাম নির্মাণে রাশ টানা যাচ্ছে না। গত বছর সওয়া কোটি জনসংখ্যার রাজ্য উত্তরাখণ্ডে তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের সংখ্যা ছুঁয়েছে ১০ কোটি। পাহাড়ে এমন ক্রমবর্ধমান জনবিস্ফোরণের প্রেক্ষিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পাহাড়ে নির্মাণ অনুমোদনের আগে সেখানকার ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে সরকারকে। উদ্দেশ্য হল পাহাড়ের বিভিন্ন অংশের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সেখানে নির্মাণ কিংবা বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া। এখানেই উঠে আসছে জরুরি প্রশ্ন যে অবরুদ্ধ সেই সুড়ঙ্গ নির্মাণের আগে সেই পাহাড়ের পাথর কিংবা মাটির কাঙ্ক্ষিত ধারণ ক্ষমতার যাচাই হয়েছিল কিনা? হয়ে থাকলে নির্মাণ চলাকালীন কেন সেই সুড়ঙ্গ তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল তার প্রবেশ দ্বারের কাছেই ?
ধাম যাত্রার ধূম
এখন এদেশে উন্নয়নের সাথে পরিবেশের সম্পর্কের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে ধর্মীয় রাজনীতির সম্পর্ক। তাই দেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ভাবনার চেয়ে ঢের বেশি প্রয়োজন হচ্ছে অযোধ্যায় সরযূ নদীর ধারে কিংবা কলকাতায় হুগলী নদীর পাড়ে দীপ দীপাবলির উদযাপন। মানুষের অন্ন বস্ত্রের চেয়ে সরকারি দৃষ্টিতে কখনও জরুরি হয়ে উঠেছে অযোধ্যায় রামমন্দির আবার দিঘার সমুদ্রতটে জগন্নাথের মন্দির। ঠিক একই মডেলে দেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার তীর্থযাত্রার পথ। হিন্দু তীর্থস্থানে তীর্থযাত্রার পথ মসৃণ করতে দেশের হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া শাসক মরিয়া। ভোট রাজনীতিতে জয়ের রাস্তা মসৃণ করতে হিমালয় চেঁছে , জঙ্গল ছেঁটে প্রয়োজন তাঁদের কখনও ‘ চার ধাম যাত্রার’ সড়ক যোগ আবার কখনও প্রয়োজন অমরনাথ যাত্রার জন্য চার লেনের তীর্থ পথ । এই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে উত্তরাখণ্ডে , দেশের ডবল ইঞ্জিন সরকারের স্বপ্নের চার ধাম যাত্রার ১২০০০ কোটি টাকার ৮৮৯ কিলোমিটার লম্বা সড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। সেই প্রকল্প উৎসর্গ করা হয় ২০১৩ সালে কেদারনাথে হড়পা বানে নিহত হাজার হাজার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। কেদারনাথের সেই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ ছিল হিমবাহ ধস নামা। হিমবাহের এমন ধসের মূল কারণ ছিল সেই অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তনের ধাক্কা আর গোটা কেদারনাথ তীর্থক্ষেত্রে বাণিজ্যের প্রয়োজনে বেলাগাম নগরায়ন । যে বেলাগাম নির্মাণ আর নগরায়নের ধাক্কায় হিমালয়ের বুকে কেদারনাথের বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছিল পাঁচ হাজার মানুষ সরকারি উদাসীনতার বলি হয়ে। আর সেই বিপর্যয়ের মোকাবিলার স্বার্থে না কি সারা বছর তীর্থযাত্রা নিশ্চিত করার ধুম পড়েছে এমন ধাম যাত্রার সড়ক নির্মাণে। সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ ! পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানানোর উপায় সরকার বের করে আরও পাঁচ কোটি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে।
পরিবেশ সংঘাতে সুড়ঙ্গ
বর্তমানে ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গ হচ্ছে সেই চার ধাম যাত্রার এক অংশ। আনুমানিক সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা এই সুড়ঙ্গের খরচ হবে ৮৫৩ কোটি টাকা। সুড়ঙ্গ মুখের কাছে পাহাড় ভেঙে ধস নেমে অবরুদ্ধ হয়েছে সেই সুড়ঙ্গ। ভূতাত্ত্বিক ভাবে ভঙ্গুর হিমালয়ের এই অংশের শিলাস্তর। ফলে এমন চুনাপাথরের শিলাস্তরে জমে থাকা মাটি জলের মিশ্রণের চরিত্রের আগাম অনুমান করা যথেষ্ট কঠিন। হিমালয় অঞ্চলের ভুবৈশিষ্ট অনুযায়ী এই পাহাড়ের শিলাস্তরের বয়স তুলনামুলক ভাবে কম এবং ভূপৃষ্ঠের গভীরে থাকা সেই শিলাস্তরগুলির স্থায়িত্ব এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত সেই শিলাস্তরের সরণ এবং সংঘাত লেগে থাকার কারণে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের স্থায়িত্ব ততোটা পোক্ত নয়। ফলে এমন পাহাড়ের ঢাল কিংবা উপত্যকা জুড়ে থাকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল অবস্থিত জোন -৪ থেকে জোন -৫ এর মতো অতি উচ্চ থেকে উচ্চ মানের ভুমিকম্প প্রবণ এলাকায়। এছাড়াও সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় প্রকাশিত যে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল প্রবল ভূমিধসের ঝুঁকি সম্পন্ন। এটা জেনেও পাহাড়ের ঢাল জুড়ে রাস্তা এবং সুড়ঙ্গ নির্মাণ এক আত্মঘাতী উন্নয়নের দৃষ্টান্ত!
আধুনিক সভ্যতায় সড়ক যোগাযোগ খুবই জরুরি। কিন্তু সেই সড়ক যদি পরিবেশের দফা রফা করে পাহাড়ের ‘ নো ম্যানস ল্যান্ড’- এ নতুন বসতি স্থাপনের রসদ জোগায় তখন সেই বিপদ রুখবে কে ? পাহাড়ের ঢাল জুড়ে তিন থেকে চার লেনের সড়ক বানানোর গোঁয়ার্তুমির মাশুল গুনতে হচ্ছে সেই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান ভূমিধসের ঘটনায়। পাহাড়ে বারো মিটার পিচের রাস্তা বানাতে গেলে পাহাড় কাটতে হয় কম করে চব্বিশ মিটার। ফলে রাস্তা যত চওড়া হবে পাহাড় জুড়ে সাথে চওড়া হবে সেখানে ভূমিধসের আশঙ্কা। এটা জেনেও সীমান্তে চীনের জুজু দেখিয়ে এই ধাম যাত্রার সড়কের প্রস্থ বাড়িয়ে বাহবা পেতে চেয়েছে দেশের সরকার ।
নির্মাণ: মৃত্যু উপত্যকা
পাহাড়ে নির্মাণের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত পাহাড়ের ঢালের স্থায়িত্ব । সেই ঢালের স্থায়িত্ব নির্ভর করে পাহাড়ের পাথর-মাটির শক্তির ওপর এবং তার ভারবহন ক্ষমতার ওপর। আবার সেই ভারবহন ক্ষমতার সাথে জুড়ে থাকে পাহাড় জুড়ে গাছপালার উপস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীর এমন সাধের ধাম যাত্রা প্রকল্পের ধাক্কায় কাটা পড়েছে ৫৬০০০ গাছ আর নষ্ট হয়েছে ৬৯০ হেক্টর বনাঞ্চল। পাহাড়ে গাছের শেকড় সেই অঞ্চলে ভূমিধস রোধে বিশেষ কার্যকরী এবং আলগা মাটিকে বেঁধে রাখতেও উপযোগী ( geo-reinforcement) বলে প্রমানিত । ফলে সড়ক-সেতু–হোটেল–বাড়ি যে কোনো নির্মাণের কারণেই যখন সবুজ পাহাড় নেড়া হয় তখন সেই আলগা মাটি–নরম পাথরের পাহাড়ে অনিশ্চিত হয় সেই নির্মাণের স্থায়িত্ব এবং অস্তিত্ব । তখন বিপর্যয় নেমে আসাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। পাহাড়ি অঞ্চলে নির্মাণের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে মাটির নিচে জলপ্রবাহের গতিপথের ওপরও। বাড়তি নির্মাণের চাপে জলপ্রবাহের পথ ক্রমাগত অবরুদ্ধ হতে থাকলে জলের বাড়তি চাপে সেই অঞ্চলের মাটির ভারবহন ক্ষমতা কমতে থাকে। ক্রমাগত নির্মাণের চাপে ভূস্তরের জলপ্রবাহ বিঘ্নিত হলে অতি বৃষ্টিতে সেই অঞ্চল জুড়ে ভূমিধসের বিপদ বেড়ে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পর্যটন কেন্দ্রিক অর্থনীতির দাপটে নগরায়নের বাড়তি গতি, বাড়তি নির্মাণ সেই অংশের বাস্তুতন্ত্রের বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে ।
প্রস্তুতিহীন সুড়ঙ্গ নির্মাণ
কলকাতা শহরের ইস্ট- ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকাজে বৌবাজারের কাছে টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে সুড়ঙ্গ বানানোর সময় সেই অঞ্চলের ভুস্তরের মাটির বৈশিষ্ট আগাম অনুমান না করতে পারার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ে ধস নেমেছিল সন্নিহিত অঞ্চল জুড়ে। ফলে সুড়ঙ্গ মাটির নিচেই হোক কিংবা পাহাড়ের ওপরে , সেই নির্মাণে প্রাথমিক প্রয়োজন সেই সুড়ঙ্গ অঞ্চলের পাথর–মাটির ভূতাত্ত্বিক এবং ভূ-প্রাযুক্তিক বৈশিষ্ট সম্পর্কে বোঝাপড়া। সেই বোঝাপড়া ব্যতিরেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া আত্মঘাতী পদক্ষেপের সমান । এক্ষেত্রেও সুড়ঙ্গের রুট বরাবর পাথর-মাটি–জল প্রবাহের সম্মিলিত ঝুঁকি সম্পর্কে নির্মাণকারী সংস্থা কিংবা বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির সময় সম্যক গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই মনে হয় বিপর্যয়ের চরিত্র দেখে।
পাহাড়ের এই সুড়ঙ্গ নির্মাণে টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহার করা হয়নি । পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে পাহাড় ফাটাতে বিস্ফোরক। সুড়ঙ্গের রুট বরাবর পাহাড়ের মধ্যে সরু ফুটো করে তার মধ্যে বিস্ফোরক ভরে নিয়ন্ত্রিত মাত্রার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়। এইভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আলগা- ভঙ্গুর পাহাড় কাটার ফল কেবল সুড়ঙ্গ পথে আটকে থাকে না বরং সেই কাটা সুড়ঙ্গের আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পাথর- মাটির চালু সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হয়। ফলে এমন বিঘ্নের ফলে পাথর- মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে নেমে আসতে পারে পাহাড়ের ধস। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ পথ বরাবর এমন দুর্বল আলগা শিলাস্তরের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষত ‘ফলট’ জোনের শিলাস্তরে নির্মাণের ধাক্কা পৌঁছালে সেখানে ধস নামা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনকি হালের এই সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের আগেও ২০১৯ সালে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণেই ধস নেমেছিল কিন্তু সে যাত্রায় শ্রমিকদের এমন মৃত্যুফাঁদে আটকে পড়তে হয়নি । কার্যত শুরু থেকেই ধসের ঝুঁকি সঙ্গী করেই চলেছে এই বিপজ্জনক প্রকল্প । মনে রাখা দরকার যে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ধসের ঝুঁকি শেষ হয় না । বরং রাস্তা দিয়ে ভারী এবং বেশি সংখ্যায় যান চলাচল শুরু হলে বাড়তে থাকে ধসের এমন ঝুঁকি ।
বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত পাহাড়
এছাড়াও বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাহাড় ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ করতে গেলে পাহাড়ের জলস্তরে জলপ্রবাহের ভয়াবহ বিঘ্ন ঘটে। সাম্প্রতিক অতীতে জোশিমঠের অদূরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সুড়ঙ্গ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নির্মাণ করতে গিয়ে সেখানকার জলস্তর ফেটে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ জল অতিদ্রুত পাহাড়ের ঢাল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। ফলে দ্রুত জল বেরোনোর কারণে মাটির মধ্যে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তার ফলে ভূমিধস নেমেছিল জোশিমঠে যেমন , তেমনটা এই উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকতে পারে। আসলে পাহাড়ে দ্রুত সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রয়োজনে যদি বিস্ফোরকের পরিমাণ এবং বিস্ফোরণের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় তখন এমন বিপর্যয় আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়। কলকাতায় পোস্তা উড়ালপুল নির্মাণের সময় বিলম্বিত প্রকল্পের কাজ হুড়োহুড়ি করে শেষ করতে গিয়ে নির্মাণ সুরক্ষায় আপসের কারণে যে বিপর্যয়ে সেতু ভেঙে পড়েছিল ঠিক তেমন কিছু হয়েছিল কিনা অবিলম্বে তদন্ত করা উচিত। এখন সুড়ঙ্গ নির্মাণ চলাকালীন সুড়ঙ্গের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ‘ সেন্সর’ লাগানো থাকে যার মাধ্যমে কেটে ফেলা পাহাড়ের শিলাস্তর এবং মাটির নড়া চড়া কিংবা বসে যাওয়ার তথ্য জানা যায়। ফলে বিপর্যয় নামার আগে তার ন্যূনতম পূর্বাভাস নির্মাণ তদারকি সংস্থা কেন পেলো না সেটাও একটা জরুরি প্রশ্ন যার উত্তর খোঁজা প্রয়োজন ভবিষ্যৎ নির্মাণে শ্রমিক সুরক্ষার স্বার্থেই।
Comments :0