RAHUL GANDHI MANIPUR

পুলিশের বাধা উড়িয়েই সন্ত্রস্তদের কাছে রাহুল

জাতীয়

manipur rahul gandhi bjp congress ethnic violence bengali news

বিশ্বজিৎ দাস

আশঙ্কাই সত্যি হলো। দিনভর চাপানউতোর, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মণিপুর সফরে বাধা তৈরি করল রাজ্যের বীরেন সিং সরকারের পুলিশ। কংগ্রেস নেতাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ল পুলিশ। 

তবে দিনভর উত্তেজনার মধ্যেই হেলিকপ্টার করে চুরাচাঁদপুর জেলায় পৌঁছে ত্রাণশিবিরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল। রাতে ইম্ফলে ফিরেও আরেকটি ত্রাণশিবিরে যান তিনি। 

সেখানে গিয়ে বলেন,‘‘সরকারের সব বাধা সত্ত্বেও আপনাদের রাহুল গান্ধী মণিপুরে হিংসায় বিপন্নদের কাছে পৌঁছেছেন।’’ অপেক্ষমাণ মানুষের কাঁধে হাত রেখে তাঁদের আশ্বস্ত করতেও দেখা যায় কংগ্রেস নেতাকে। সন্ত্রস্ত মানুষকে বলেন,‘‘আপনাদের পাশে আমি সবসময় আছি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। নিভে যাবে ঘৃণার আগুন, ফুটবে ভালোবাসার বাগান।’’  

দু’দিনের মণিপুর সফরে বৃহস্পতিবার সকালে ইম্ফল এসে পৌঁছান রাহুল গান্ধী। সেখান থেকে সড়কপথে বিষ্ণুপুর জেলা হয়ে চুরাচাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় তাঁর কনভয়। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার যাওয়ার পরে বিষ্ণুপুরে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেয় পুলিশ। 

বিষ্ণুপুর জেলার সেপু থানার সামনে সহস্রাধিক পুলিশের বিশাল ব্যারিকেড রাহুলের কনভয় আটকায়। রাহুলকে স্বাগত জানাতে তখন সেখানে হাজির ছিলেন আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ। বেশিরভাগই মহিলা। ব্যারিকেড ভেঙেই তাঁরা রাহুলকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। 

বিজেপি সরকারের অত্যাচারের কথা বলে রাহুলের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায় বহু মহিলাকে। এই অবস্থায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুঁড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 
 

বিজেপি সরকারের পুলিশের এই হামলার মুখেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন রাহুল গান্ধী। তাঁর সঙ্গী কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল ও অজয় সিং এবং মণিপুর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে মেঘচন্দ্র বিষ্ণুপুরের পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন। 

কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন সড়কপথে রাহুলের গতিরোধে অনড় থাকে। শেষপর্যন্ত বিকেল চারটেয় বিষ্ণুপুর থেকে ইম্ফল বিমানবন্দরে ফিরে এসে হেলিকপ্টারে চুরাচাঁদপুর যান রাহুল এবং তাঁর সঙ্গীরা। চুরাচাঁদপুর জেলা সদর লামকায় দু’টি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন কংগ্রেস নেতা। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে লামকায় প্রচুর মানুষের জমায়েত দেখা যায়।
 

উল্লেখ্য, প্রায় দু’মাস ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুরে। কিন্তু হিংসাবিধ্বস্ত রাজ্যটিতে এখনও যাওয়ার সময় হয়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর! এমনকি মণিপুর সম্পর্কে এখনও একটি শব্দও তিনি খরচ করেননি! দেখা যাচ্ছে, নিজেরা তো যাচ্ছেনই না, বিরোধী নেতাদেরও মণিপুরে যেতে দিতে চাইছেন না। দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে মণিপুর সফরের দাবি উঠলেও কেন্দ্র তা অগ্রাহ্য করেছে। অবশেষে রাহুল গান্ধী মণিপুর সফরের কথা ঘোষণা করায় তাঁর সফর আটকাতে উঠেপড়ে লাগে বিজেপি। 

এমনকি রাহুলকে মণিপুর ঢুকতে বাধা দিতে রাতারাতি ভুঁইফোড় ‘মণিপুর পেট্রিওটিক পার্টি’ তৈরি করে প্রচার চালায় বিজেপি। বৃহস্পতিবার সকালে বিষ্ণুপুর জেলায় ঢোকার রাস্তায় গাছ ফেলে বিজেপি’র এই ভুঁইফোড় দল ‘রাহুল গান্ধী গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকে। কিন্তু তারা বেশি লোক জড়ো করতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষপর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার অজুহাত তুলে পুলিশবাহিনীকে কাজে লাগায় বিজেপি সরকার।

রাহুলের সফরে পুলিশি বাধা নিয়ে সোচ্চার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মেঘচন্দ্র বলেন, কংগ্রেস নেতাকে মণিপুরের জনতা স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ নামিয়ে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। এআইসিসি নেতা বেণুগোপাল প্রশ্ন তোলেন, কি লুকোতে চাইছে বিজেপি সরকার? কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও এদিন টুইটারে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজে মণিপুরে যাচ্ছেন না, বিরোধী নেতাদেরও যেতে দিচ্ছেন না! স্বৈরাচারী শাসকের মতো পুলিশ নামিয়ে রাহুল গান্ধীর মণিপুর সফরে বাধা দিচ্ছেন!’’
 

অন্যদিকে, মণিপুরে রাহুল গান্ধীকে বাধা দেওয়ার ঘটনার সাফাই দিতে গিয়ে এদিন দিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে পরস্পরবিরোধী কথা বলতে শোনা যায় বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রকে। নিজের বক্তব্যের খেই হারিয়ে ফেলে একবার তিনি বলেন,‘‘১৩ জুন থেকে মণিপুর শান্ত রয়েছে। কোনও গন্ডগোল হচ্ছে না।’’ পরক্ষণেই বলেন, ‘‘অশান্ত মণিপুরে রাহুল গান্ধীকে যেতে কে বলেছিল?’’ 
 

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোরে কাঙপকপি জেলায় মেইতেই উগ্রপন্থী সংগঠন আরামবাই টেঙলের সঙ্গে সেনার গুলির লড়াইয়ে দু’জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। নিহতদের দেহ রাস্তায় রেখে সন্ধ্যায় ইম্ফল ইমা মার্কেটে বিক্ষোভ দেখান মেইরা পাইবির মহিলারা। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী না এলে দেহের শেষকৃত্য হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ব্যর্থতার জন্য প্রতিদিন লাশ কুড়োতে হচ্ছে বলেও জানান তাঁরা। শেষপর্যন্ত সেখানেও প্রতিবাদী মহিলাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শূন্যে গুলি ছোঁড়ে। 

Comments :0

Login to leave a comment