Brigade

‘ব্রিগেড ভরাবো’ বার্তা জুট মিলের শ্রমিকদেরও

জেলা ব্রিগেড

২০ এপ্রিল ব্রিগেড। শ্রমজীবী কৃষিজীবী ও বস্তিবাসীর আন্দোলনের ডাকে হবে ব্রিগ্রেড সমাবেশ। রাজ্য জুড়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে। এলাকায় এলাকায় হচ্ছে পদযাত্রা সভা মিছিল, প্রচার জাঠা। সোমবার পদযাত্রা হয় উলুবেড়িয়ায়। ১০নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাউড়িয়া হেলথ সেন্টার থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রা বাগপাড়া, গোয়ালাপাড়া, সিপাইপাড়া, বউলখালি, ভাসাপাড়া, পূর্ব বুড়িখালী, খাজুড়ী, চকবেনেখা হয়ে নর্থ মিল রাজকুমার মন্ডল ভবনে গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রায় বহু শ্রমিক পা মেলায়। বলেন, বর্তমানে জুট মিলের অবস্থা খুব খারাপ। ২০২৪ সালে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি লাঘু হয়নি। মালিক পক্ষ আমাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল ১২ ঘন্টা কাজ করার জন্য। আমরা সেই প্রস্তাব মেনে নিতে পারিনি। অমানবিকভাবে কাজের চাপ দিচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ। মিলগুলোতে শ্রমিকদের কোন অধিকার নেই। কোন কথা বলা যায়না। মিলের কর্তৃপক্ষের পরিস্কার মনোভাব, কাজ করো চলে যাও। না পোষালে কাজ ছেড়ে দাও। কথাগুলো বলছিলেন বাউড়িয়া ফোর্টগ্লোস্টার মিলের শ্রমিক বিশ্বজিত হুদাতী। অধিক মুনাফার জন্য মলিকপক্ষ জুলুমবাজি করছে। এতোটাই যে কাজের চাপ দিচ্ছে ৮ঘন্টা কাজ করতে পারছিনা। কাজের ভয়ে মিলে যেতে পারছিনা। কাজে গিয়ে কাজ করতে না পারলে মালিকপক্ষ মেমো ধরাচ্ছে। একপ্রকার মালিক পক্ষের কাছে আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। বলেছিলেন চেঙ্গাইল প্রেমচাঁদ মিলের শ্রমিক তাপস মন্ডল। তাঁর পাশে থাকা সিজবেড়িয়ার বাসিন্দা লাডলো মিলের অস্থায়ী শ্রমিক অশোক বেরা বলেন, আগে বেশীরভাগ দিনই কাজ পেতাম। এখন কাজ পাচ্ছিনা। ২৭বছর ধরে এই মিলে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করছি। কোনদিনই এরকম অবস্থা হয়নি। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা! তিনজনেই গত কয়েদিন ধরেইশ্রমজীবী মানুষের ব্রিগেডের সমর্থনে পদযাত্রাগুলিতে হাঁটছেন বাউড়িয়া-চেঙ্গাইল শিল্পাঞ্চলে। তারা বলেন, এবারের ব্রিগেড আমাদের দাবি নিয়ে ব্রিগেড। আমাদের দাবি নিয়ে এই ব্রিগেড ভরাতেই হবে।
সোমাবার ব্রিগেডের সমর্থনে পদযাত্রা হয় বাউড়িয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শ্রমিক মারা নীতির ফলে মিলগুলো আজ রুগ্ন। এলাকার লাডলো, প্রেমচাঁদ, নিউ ও নর্থ মিল কোনরকমে চলেছে। বারে বারে শ্রমিক অসন্তোষে মিল বন্ধ হচ্ছে। কানোরিয়াতো অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়েছে। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার চটকল মালিকদের সাথে হাত মিলিয়ে চট শিল্পে শ্রমিকদের চরম শোষণ এবং বঞ্চনা করছে। সরকারের সাথে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সই হওয়ার পরেও কোন মিলে তা সম্পূর্ণভাবে লাণ্ড হচ্ছে না। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মেনে শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না এবং চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে বেআইনী ভাবে মিলে কাজ করানো হচ্ছে। বকেয়া পিএফ, গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছে না শ্রমিকরা, কয়েক হাজার কোটি টাকা মিল মালিকরা শ্রমিকদের পরিশোধ করেনি। মহিলা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।চটকল শ্রমিকদের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সম্পূর্ণ রুপায়নের দাবিতে ও চটকল আধুনিকরণের নামে শ্রমিকদের ওপর দমন নিপীড়নের প্রতিবাদে গেট সভা, অবস্থা, শ্রম দপ্তর অভিযানে করেছে বেঙ্গল চটকল মজদুর ইয়নিয়ন। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে আছে তারা।
এদিনের পদযাত্রায় শ্রমিকরা বলেন, সারা দেশব্যাপী এক অস্থির অবস্থা চলছে। দেশে বাড়ছে বেকারি, চাকরি নেই, জিনিসপত্রের দাম খেটে খাওয়ার মানুষের নাগালে বাইরে চলে যাচ্ছে। ওষুধের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। এইসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে উঠলেই তার মধ্যে জাত পাত ধর্ম বর্ণ এসব দিয়ে শ্রমিকদের ভাগ করা হচ্ছে। কোটি কোটি শ্রমিকের রক্ত ঘামে গড়ে ওঠা দেশের সম্পদ রেল, ব্যাংক, বীমা, কয়লা, ইস্পাত, বিদ্যুৎ এমনকি জমি, জল, জঙ্গল সস্তায় বেঁচে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। নতুন শ্রমকোড চালু করে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার সব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্রীতদাসে পরিণত করতে চাইছে। পদযাত্রা থেকে দাবি ওঠেশ্রমিক বিরোধী শ্রম কোড বাতিল করো। চট শিল্পে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির শর্তগুলি লাগু করো। চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত চটকল শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পি.এফ. এবং গ্র্যাচুইটির টাকা দিতে হবে। অবিলম্বে সমস্ত বন্ধ চটকল খুলতে হবে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী চটকলে গ্রেড অ্যান্ড স্কেল চালু করো। চট শিল্পে থ্রেট কালচার, শ্রমিকদের গেট বাহার করা চলবে না। শ্রমজীবিদের দাবি নিয়ে আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড চলো। পদযাত্রায় ছিলেন সামসুল মিদ্দে, দিলীপ মন্ডল, সেলিম মোল্লা, মনোজ ব্যানার্জী, তারক দাস, জয়িতা সাঁতরা মান্না প্রমুখ।

Comments :0

Login to leave a comment