‘‘তাকিয়ে দেখুন, গাজার শিশুরা কাঁদছে। তাঁরা যুদ্ধের আগুণে প্রাণ হারাচ্ছে। সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে, কিন্তু শিশুদের আর্তনাদ শুনতে চাইছে না। প্রতিবাদ করতে চাইছে না। এই বিশ্বে ন্যায় আসলে হৃদয়হীন এবং বোবা।’’
ক্রিসমাস উপলক্ষে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের রামাল্লার একটি স্কুলের পড়ুয়ারা তৈরি করেছে গান। সেই গানে ফুটে উঠেছে গাজার শিশুদের যন্ত্রণা। সেই গানের প্রথম লাইনগুলি তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনের শুরুতে।
সোমবার রামাল্লা ফ্রেন্ডস স্কুলের কচি কাঁচাদের সেই গান সোশ্যাল এক্সের হ্যাণ্ডেল থেকে শেয়ার করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
ইয়েচুরি লিখেছেন, ‘‘এবারের ক্রিসমাসে প্যালেস্তিনীয় শিশুদের এই হৃদয় বিদারক এই গান শুনুন। বন্ধ হোক প্যালেস্তিনীয়দের গণহত্যা। বন্ধ হোক এই বর্বরতা। গাজায় এখনও অবধি ২৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অর্ধেক শিশু।’’
ক্রিসমাসের জন্য সেজে উঠেছে সারা বিশ্ব। চার্চগুলি সেজে উঠেছে আলোয়। গাওয়া হচ্ছে ক্যারল। কিন্তু গাজায় এক মুহুর্তের জন্যও বিরাম নেই মৃত্যুর। মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অংশের মতে, প্যালেস্তাইনে শুধুমাত্র মুসলমানরা বাস করেন না। ২ হাজার বছরের কাছাকাছি সময় ধরে সেখানে প্যালেস্তিনীয় খ্রীষ্টানরাও বসবাস করছেন। গাজা ভূখণ্ডেও বহু প্যালেস্তিনীয় খ্রীষ্টান থাকেন। তাঁদেরও অনেকে ইজরায়েলী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে যীশু খ্রীষ্টের জন্মস্থান বলে খ্যাত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বেথলেহেমে বাতিল হয়েছে খ্রিসমাস উৎসব। বেথলেহেমের লুথেরান চার্চে ‘নেটিভিটি’ দৃশ্য বা যীশুর জন্মের দৃশ্য অন্যভাবে সাজানো হয়েছে। চিরাচরিত রীতি মেনে এইবার আস্তাবলে জন্মাননি যীশু। বরং তিনি শুয়ে রয়েছেন ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপে। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসের চিহ্ন। আর যীশুর পরণে রয়েছে কেফিয়ে। প্যালেস্তাইনের বিখ্যাত চেক কাটা কাপড়। যা বিশ্বজুড়ে প্যালেস্তিনীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
রামাল্লা ফ্রেন্ডস স্কুল জানাচ্ছে, ক্রিসমাস উপলক্ষে প্রতি বছর গান করেন স্কুলের শিশু পড়ুয়ারা। এইবারও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু চিরাচরিত ক্যারলের বদলে এবার গাজার পাশে থাকার বার্তা উঠে এসেছে গানের মাধ্যমে।
স্কুলের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘কালজয়ী ‘লিটিল ড্রামার বয়’ গানের সুরে গাজার শিশুদের যন্ত্রণা সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এই ক্রিসমাসে প্রার্থনা করছি, গাজার সমস্ত শিশু যেন সুরক্ষিত থাকে। শান্তির এই আর্তি সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে। দিনের শেষে জয়ী হোক মানবতা। স্তব্ধ হোক হিংসা।’’
বিশ্বজোড়া এই আর্তির মাঝেও হামলা বন্ধ রাখেনি ইজরায়েল। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, ২৫ ডিসেম্বর মধ্য গাজার আল-মাঘাজি ত্রাণ শিবিরে বিমানহানা চালিয়েছে ইজরায়েল। ঘটনায় ৭০ জনের বেশি প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন।
বিবিসি জানাচ্ছে, নিহতদের অধিকাংশই শিশু।
Comments :0