‘‘এই রাজ্যের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। নবান্ন বা রাজভবনের হাতে রাজ্যের গণতন্ত্র কোনও ভাবে সুরক্ষিত নয়।’’ শুক্রবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন সেলিম বলেন, ‘‘এরাজ্যের নির্বাচন কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। রাজ্য সরকার তার যৌক্তিকতা হারাচ্ছে। রাজ্যের মানুষ হিসাবে লজ্জা করছে। এই সুযোগ নিয়ে রাজ্যপাল, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট , বিভিন্ন বিষয় হস্তক্ষেপ করছেন।’’ এখানেই না থেমে সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যের গণতন্ত্র শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা বলছি পঞ্চায়েতে গণতন্ত্র ফেরাতে। মানুষ একমাত্র গণতন্ত্রের রক্ষা কর্তা।’’
রাজ্যপালকে নিশানা করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘এত ঘুরছেন কী লাভ হচ্ছে? মৃত্যু কি কমছে? হিংসা কমছে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একা একজনের অতি তৎপরতা কখনও গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো নয়। রাজভবন এবং রাজ্যপালকে আমাদের দেশে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে গণতন্ত্রকে শেষ করার জন্য।’’
রাজভবনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেরও সমালোচনা করেন তিনি।
সেলিম বলেন, ‘‘মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন তা দেখার দায়িত্ব কমিশনের। আগামীকাল যাতে কোন হিংসার ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আজ সন্ধ্যা থেকেই সব কিছু কঠোর ভাবে সামলাতে হবে।’’
নির্বাচন মণ্ডলীর কাছে তিনি আবেদন করেন সকাল সকাল ভোট দেওয়ার জন্য। সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রচার করে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করা উচিত ছিল। যাতে তাঁরা ভোট দিতে আসেন। কমিশন মানুষকে বলুক যে তারা নিরাপত্তার জন্য, ব্যালট বাক্স রক্ষা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।’’ সিপিআই(এম) কর্মীদের উদ্দেশ্যে রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের বলব মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। আর কোনও মানুষের প্রাণ যাতে না যায় সেই দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।’’
শুক্রবার সেলিম জানিয়েছেন যে ‘পাহারায় পাবলিক’এ ২০০র বেশি মানুষ অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই সব অভিযোগ যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি এদিন উল্লেখ করেছেন। ১৬৬টি ক্ষেত্রে কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তাঁর কথায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। আগামীকাল এই হেল্পলাইন সব সময় চালু থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত বিষয় কমিশন এবং সরকারের টালবাহানা নিয়ে এদিন রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশকে অমান্য করছে কমিশন এবং রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কমিশন এবং রাজ্য সরকার বাধা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও বাহিনী পাঠাতে গড়িমসি করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতা স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশন কি ভাবে বাহিনীকে ব্যাবহার করবে তার উত্তর দিতে হবে কমিশনকে।’’ কমিশনের উদ্দশ্যেই তিনি বলেছেন, ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনাদের। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৮’র ভোটে শিক্ষক রাজকুমার রায়কে খুন করেছিল ভোট লুটতে আসা বাহিনী। প্রত্যেক ভোটকর্মীকে নিরাপত্তা দিতে হবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘কমিশনেের দায়িত্ব সাধারণ মানুষ, ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। কিন্তু কমিশন নিরাপত্তা বোধ জাগানোর বদলে নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দিচ্ছে।’’
আদালতের পক্ষ থেকে প্রতিটি বুথে সিসিটিভি রাখার কথা বলা হয়েছে। সেলিম বলেন, ‘‘প্রতিটা সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রাখতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্ট্রং রুম পাহারায় বাহিনীর পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের রাখতে হবে। তাদের পাশ দিতে হবে যাতে তারা সময়ের সাথে সাথে রুম পাহারায় থাকতে পারে। কোন রকম বাহানা করে যেন এসডিও, বিডিওরা ঘর থুলতে না পারে তা দেখতে হবে।’’
নির্বাচন ঘোষণার পর এক মাস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা আক্রান্ত হয়েছেন। প্রার্থীর পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ভরা হয়েছে। কিন্তু তাও কোথাও লড়াই থেকে সড়ে আসেননি তারা। দলীয় কর্মী সমর্থকদের সেই লড়াইয়ের জেদ, মনোভাবকে কুর্নিশ জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘প্রচারে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। কঠিন পরিস্থিতিতে যেই লড়াই দলীয় কর্মীরা করেছেন তাকে কুর্নিশ জানাই। আমাদের কাজ এখানেই শেষ নয়। এতো ঘাম ঝরানো। কাল তার ফসল তোলার দিন। আগামীকাল ভোর থেকে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন সেই দিকে নজর রাখতে হবে।’’
Comments :0