বিশ্বনাথ সিংহ
সোমবার উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন পর্ব সম্পন্ন হল। নতুন সভাধিপতি নির্বাচিত হলেন করণদিঘি থেকে জয়ী তৃণমূল সদস্য তথা বিধায়ক গৌতম পালের স্ত্রী পম্পা পাল। অভিযোগ শংসাপত্র জাল করে সংরক্ষিত আসনে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছেন বিধায়কের স্ত্রী। এই ঘটনার প্রতিবাদে শোরগোল এলাকায়। গোটা ভোট প্রক্রিয়া বাতিল করে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট শংসাপত্র প্রদানকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিধায়কের স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানালো সিপিআই(এম)।
উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছেন করনদিঘির বিধায়ক গৌতম পালের স্ত্রী পম্পা পাল। অন্যদিকে সহকারি সভাধিপতি হলেন গোলাম রসুল। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানীর ভাই। পম্পা পাল পঞ্চায়েত নির্বাচনে করনদিঘির ১৫ নং জেলা পরিষদের সাধারণ মহিলা আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হেমতাবাদ থেকে ওবিসি মহিলা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন পম্পা পাল। সহকারি সভাধিপতি গোলাম রসুল ২০১৮ সালে গোয়ালপোখর থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনিও কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন।
২৬ আসন বিশিষ্ট উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে ২৩টি আসন পেয়েছে তৃণমূল এবং ৩ টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। সোমবার নবনির্বাচিত জেলা সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতিকে ঘিরে দলীয় কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেলেও বিরোধীরা সভাধিপতির জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
জালিয়াতি করে কাস্ট সার্টিফিকেট বের করার অভিযোগ জেলা পরিষদের সদস্যা পম্পা পালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সভাধিপতি হবেন জেনেই সিডিউল কাস্ট সার্টিফিকেট করিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক অভিযোগ তুলে বলেন, করণদিঘীর বিধায়ক গৌতম পাল প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রী পম্পা পালের নামে ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট ইসলামপুর মহকুমা অফিস থেকে নমশুদ্র হিসেবে তপশিলি জাতির সার্টিফিকেট বের করেছেন।
এই সেই পম্পা পাল ২০১৪ সালে ইটাহার ব্লক অফিস থেকে কুম্ভকার পরিচয় দিয়ে ওবিসি সার্টিফিকেট বের করে হেমতাবাদ থেকে ওবিসি মহিলা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন একই ব্যাক্তি ৪ বছরে দু দুবার কাষ্ট সার্টিফিকেট করে ভোটে নির্বাচিত হন কি ভাবে?।
তিনি আরও বলেন, তপশিলি জাতি ভুক্ত মানুষের সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিতেই প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতি করে সার্টিফিকেট করেছেন পম্পা পাল। তাঁর প্রকৃত বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের ভদ্রশিলা গ্রামে। সেই ঠিকানা ব্যবহার করে ২০১৪ সালে রায়গঞ্জ মহকুমা অফিস থেকে ও বি সি সার্টিফিকেট তুলেছেন।
পশ্চিম বঙ্গ সরকারি কাস্ট সার্টিফিকেট ওয়েব সাইট থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ২০ ফেব্রুয়ারিতে পম্পা পাল, বাবা বাবলু পাল নামে যে ওবিসি সার্টিফিকেট ইসু করা হয়েছে তার নম্বর ডব্লু বি ০৪০২ওবিসি২০১৪০১২৪৬ (ম্যানুয়েল নম্বর ১৫৩/৩১২/ওবিসি/২০১৪) ঠিকানা ভদ্রশীলা, পোস্ট ইটাহার থানা ইটাহার। বাবার বাড়ির পরিবার কুম্ভকার জাতি সম্প্রদায়।
২০২৩ সালের জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদ তপশিলি জাতি ভুক্ত মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত। তড়িঘড়ি গত ১১ আগস্ট ইসলামপুর মহকুমা অফিস থেকে তপশিলি জাতির সার্টিফিকেট তোলার জন্যে দরখাস্ত দাখিল করেছেন তিনি।
ইসলামপুর মহকুমা অফিস থেকে প্রাপ্ত তফশিলি জাতির সার্টিফিকেট নম্বর ডব্লু বি ০৪০১ এস-সি ২০২৩০০৯০৫৩।
জেলা জুড়ে প্রশ্ন উঠছে একই ব্যক্তির নামে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানায় ভিন্ন জাতিগত প্রমানপত্র সরকারি দপ্তর থেকে কি ভাবে পেলেন বিধায়কের স্ত্রী পম্পা পাল? কেনই বা নিজের জাতিগত পরিচয় লুকিয়ে ওবিসি থেকে সিডিউল কাস্ট হতে কাস্ট সার্টিফিকেট বের করলেন প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক ন্যায় মঞ্চের জেলা সম্পাদক মোহিত বর্মন। তিনি বলেন, আজব প্রশাসন। চাকরি চুরি, গরু চুরি, পুকুর চুরি, কয়লা , মাটি, বালি চুরির অভিযোগ সামনে এসেছে এবার শংসাপত্র চুরির অভিযোগ। অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোড়ালো দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তৃণমূলে দূর্নীতিবাজদের দৌরাত্ব শুরু হয়েছে।
এবিষয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা শাসক ও ইসলামপুর মহকুমা শাসক কে জানতে চাইলে কেউ ফোন ধরেন নি। জেলা কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন , বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে মহকুমা প্রশাসন এই জালিয়াতির সাথে যুক্ত। জেলা পরিষদের ভোট প্রক্রিয়া বাতিল করে দু দুবার দু ধরণের কাষ্ট সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্যে অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
Comments :0