Tea Workers

বোনাসের দাবিতে মিছিল হাজার হাজার চা শ্রমিকের

রাজ্য জেলা

Tea Workers


২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে উত্তাল পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ন চা বলয়ের বাগিচা শ্রমিকেরা। ন্যায্য বোনাস আদায়ে এবছর চা শ্রমিকদের বোনাসের লড়াই ভিন্নমাত্রা নিয়েছে। কলকাতার বৈঠকে বোনাস ফয়সলা অমীমাংসিতই থেকে গেছে। চা বাগান মালিকরা শাসকের মদতপুষ্ট হয়ে শ্রমিক শোসনের লক্ষ্যে পুজিবাদী মনোভাব নিয়েছে। আন্দোলন ছাড়া কখনই ন্যায্য আদায় সম্ভব নয়। তাই বাগানের লড়াই বাগানে আর সীমাবদ্ধ না রেখে সেই লড়াইকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছেন চা শ্রমিকেরা। 
শারদ উৎসবের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। এখনো অনিশ্চিত চা শ্রমিকদের বোনাস। মালিক পক্ষের অনীহার কারণে দফায়  দফায় ভেস্তে যাচ্ছে সভা। ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে এবারে বানারহাটের চারটি চা বাগানের শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে মিছিল করে বানারহাটে। বানারহাটে চা শ্রমিকদের মিছিল পরিণত হয় মহামিছিলে। রাত পোহালেই বাগান শ্রমিকদের বোনাস নিয়ে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। আর তার আগেই ডুয়ার্সের বানারহাটে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়ালো চা শ্রমিকরা। 


এদিন বিকেলে বানারহাট চা বাগান কারখানার সামনে জমায়েত করেন শ্রমিকেরা। যেখানে নিউ ডুয়ার্স , কারবালা, বানারহাট চুনাভাটি চা বাগানের প্রায় তিন হাজার শ্রমিকরা মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি গোটা বানারহাট শহর পরিক্রমা করে বানারহাট বাগানেই এসে শেষ হয়।
তরাইয়ের বিভিন্ন চা বাগানে চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়ন সহ সমস্ত শ্রমিক সংগঠন দলমত নির্বিশেষে একত্রিত হয়ে বাগিচা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছে লড়াই আন্দোলন সংগঠিত করছে। তরাইয়ের প্রায় ৪৫ টি চা বাগানে সোমবার ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে গেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেরিভিউ, জাবরা, পাহাড়ঘুমিয়া, সইদাবাদ, মোহরগাঁও—গুলমা চা বাগানে গেট সভায় মিলিত হয়েছেন চা শ্রমিকেরা। ত্রিহানা চা বাগানের মোহনলাল ডিভিশনে চা শ্রমিকদের কেউ এদিন কাজে যোগ দেননি। গোটা বাগান বন্ধ রেখে বোনাসের দাবিতে বড় আকারের মিছিল সংগঠিত করে গেট সভায় যোগ দিয়েছেন তারা। দাবি একটাই সম্মানের প্রশ্নে ২০ শতাংশ বোনাস দিতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় গেট সভাগুলিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন গৌতম ঘোষ, রাজু সরকার, অরুন বারা, সুষমা লাকড়া প্রমুখ। 
এবছর ২০ শতাংশ বোনাসের দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে প্রথম অনলাইন আলোচনা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর। কোন ফয়সালা না হওয়ায় আবার ২১ সেপ্টেম্বর অনলাইন আলোচনায় শেষ পর্যন্ত ৮ ৩০শতাংশ বোনাসের প্রস্তাব দেয় চা মালিকের সংগঠন সিসিপিএ। চা শ্রমিকরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর ৫ ও ৬ অক্টোবর নিস্ফলা মিটিং হয়। আগামী ১০ অক্টোবর আবার কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হওয়ার কথা। এর জন্য বসে নেই শ্রমিকরা। 


সোমবার বাগানের শ্রমিকরা বাগান থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় সড়কে মিছিল করে। চা বাগান মজদূর ইউনিয়নের নেতা রামলাল মুর্মুর নেতৃত্বে নাগেশ্বরী চা বাগান ও ভগৎপুর চা বাগানে লড়াইয়ের মেজাজে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রামলাল মুর্মু জানান, ১০ তারিখে ফয়সলা না হলে রাস্তায় চলে আসবে এই লড়াই। রাস্তা অবরোধ করা হবে। ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি চা শ্রমিকরা। ন্যয্য হক তারা আদায় করেই ছাড়বেন। আপার চেংমারি চা বাগানের শ্রমিকরা বাগান ছেড়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটার হেটে লুকসানে এসে সভা করেছেন এদিন। লিসরিভার চা বাগানেও সভা হয়েছে।

বড় বাগান বা কারখানা দেখে নয়, এবিসিডি গ্রুপে ভাগ করে নয় সকল বাগানের সকল চা শ্রমিকদের উৎসবের আগে নুন্যতম কুড়ি শতাংশ হারে বোনাসের দাবিতে এদিন সভা ও মিছিল সংগঠিত করল সিআইটিইউ অনুমোদিত ওয়েস্ট দিনাজপুর চা বাগিচা শ্রমিক ইউনিয়ন। চোপড়া ব্লকের ঘরুগছে এই মিছিলে সমবেত হন প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক চা শ্রমিক। ছিলেন ওয়েস্ট দিনাজপুর চা বাগিচা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা কার্তিক শীল সহ অনেকে।
কার্তিক শীল জানান, তিল তিল করে গড়ে তোলা চোপড়া ব্লকের চা শিল্প ধ্বংসের মুখে, বড় বাগান টুকরো করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, স্থায়ী শ্রমিকের পরিমান কমছে, বিভিন্ন সুযোগ থেকে ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমিকরা। এবছর ছোটোবড় বাগান ও বিভিন্ন গ্রুপ নির্বিশেষে সকল শ্রমিকদের নুন্যতম কুড়ি শতাংশ হারে বোনাস না পেলে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।
বোনাসের দাবিতে এদিন চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সামিল হন শাসক বিরোধী সব দল। শ্রমিক নেতাদের সাফ কথা এবারের সভাতেও বোনাস নিয়ে ফয়সালা না হলে কাল থেকে হবে জোর লড়াই আন্দোলন।


 

Comments :0

Login to leave a comment