UPENDRANATH BRAHMACHARY

১৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীকে স্মরণ

কলকাতা

UPENDRANATH BRAMBHACHARI SCIENCE NEWS NRS MEDICAL COLLEGE BENGALI NEWS

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রেক্ষাগৃহে মঙ্গলবার চিকিৎসক ও গবেষক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়।  সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের তরফে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়। সহযোগিতা করে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ। 

এদিনের অনুষ্ঠান দুটি ভাগে হয়। প্রথম ভাগে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জীবনের নানান দিকের উপর আলোচনা করা হয়। পরবর্তী ভাগে কালাজ্বর নির্মূলের উপর সাম্প্রতিক গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কে মতামত রাখেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং গবেষকরা। একইসঙ্গে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গবেষণা করা সমস্ত গবেষকের কাজ নিয়ে একটি সংগ্রহশালা গড়ারও প্রস্তাব এদিন উঠে এসেছে। 

১৯২২ সালে মহামারীর আকার ধারণ করা কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন তৎকালীন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গবেষক-চিকিৎসক অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। তাঁর এই আবিষ্কারের ফলে কালাজ্বরে মৃতের সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে ৯০ শতাংশ হ্রাস পায়। 

পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি মারণব্যধী প্রতিরোধী ওষুধ বা কেমোথেরাপিউটেকের গোত্রে  পড়ে কালাজ্বরের প্রতিশেষধ। যাদিও এই তালিকাভুক্ত বাকি ৪টি ওষুধের আবিষ্কারকরা, যেমন অ্যালেক্স্যান্ডার ফ্লেমিং, পল এহরলিখ, সেলমান ওয়াক্সম্যান এবং গেহার্ড ডোমাঘ নোবেল পুরষ্কার পেলেও ব্রাত্য থেকেছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। মেঘনাদ সাহা’র মত বিজ্ঞানীরা নোবেল পুরষ্কারের জন্য ২বার তাঁর নাম প্রস্তাব করেন। প্রতিবারই তা নাকচ হয়। 

এদিনের আলোচনায় বক্তারা তুলে ধরেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ( তৎকালীন ক্যাম্পবেল হাসপাতাল) একটি বায়ু চলাচলের সংযোগহীন ও জলের সংযোগহীন ঘরে ২০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। পেনিসিলিন কাকতালীয় ভাবে আবিষ্কার হলেও কালাজ্বরের প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে তা হয়নি। রসায়ন শাস্ত্রেও অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল উপেন্দ্রনাথের। সেই বিদ্যা কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করেন ব্রহ্মচারী। 

এদিন বক্তারা আক্ষেপের সুরে বলেন, তৎকালীন ইউরোপীয় বর্ণবৈষম্যবাদের শিকার হয়েছিলেন উপেন্দ্রনাথ।মনে করা হয়,  স্রেফ ভারতীয় হওয়ার ‘অপরাধে’ নোবেল পাননি তিনি। কিন্তু স্বাধীন দেশেও যথাযত সম্মান মেলেনি উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর। ভারত সরকারের তরফে একটি সাম্মানিক ডাকটিকিট কিংবা পোস্টাল স্ট্যাম্প চালু হয়নি তাঁর স্মরণে। 

সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সম্পাদক শুভব্রত রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘‘বাংলার বাইরে এই মাপের একজন গবেষক ও বিজ্ঞানীকে নিয়ে নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, মরোণত্তর ভারতরত্নের জন্য বিবেচনা করা হোক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর নাম।’’

কালাজ্বরে প্রতিরোধে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ইউরিয়া স্টিবামাইন নামে একটি ইউরিয়া যৌগ আবিষ্কার করেন। এই ওষুধের প্রভাবে কালাজ্বরের জন্য দায়ী প্রোটোজোয়া-প্যারাসাইটের বড় অংশ ঘায়েল হলেও একটা অংশের মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী ব্যবস্থা বা ড্রাগ রেজিসট্যান্স গড়ে ওঠে। তারফলে পুরোপুরি কালাজ্বর নির্মূল করা সম্ভব হয়নি এখনও। সেই সংক্রান্ত গবেষণা এখনও চলছে। গবেষণার সাম্প্রতিক অগ্রগতির চিত্রও এদিনের আলোচনায় উঠে এসেছে। 

এদিন বক্তব্য রাখেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির অবসরপ্রাপ্ত গবেষক শ্যামল রায়, অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী, সোমা শীল মল্লিক,শঙ্কর নাথ, সুমিত্রা চৌধুরী, জয়া বন্দোপাধ্যায়, স্নেহশিক্তা স্বর্ণকার ইন্দিরা দে পাল, চিত্রিতা চ্যাটার্জি, পরেশ বন্দোপাধ্যায়, সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মৈত্র, শুভব্রত রায়চৌধুরী প্রমুখ। 

Comments :0

Login to leave a comment