প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পরও অশান্ত নেপাল। দিকে দিকে বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে। নেপাল সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দিল্লি বাজার সহ একাধিক জেল ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে কয়দিদের পক্ষ থেকে। জলেশ্বরে প্রায় ৯০০ বন্দি জেল ভেঙে পালিয়েছে বলে সেই দেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। বাঁকের জেল থেকেও বহু বন্দি পলাতক। এছাড়া পশুপতিনাথ মন্দির সহ বিভিন্ন জায়গায় লুঠ চলছে বলেও জানা যাচ্ছে। ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে নেপালের সংসদ ভবন।
এই পরিস্থিতি নেপালের সেনা প্রধান অশোক রাজ শিগদেল নেপাল সংবাদমাধ্যমের দ্বারা আন্দোলনকারিদের কাছে আবেদন জানিয়েছে শান্তি বজায় রাখার জন্য। তিনি জানিয়েছেন নেপালের সাধারণ মানুষের সুরক্ষা, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য নেপাল সেনা দায়বদ্ধ। সেনা প্রধানের কথায় দেশে যারা অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওলির পদত্যাগের পর সেনার শাসনে জারি হয়েছে নেপালে।
সেনা প্রধানের কথায়, দেশের অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায় অশান্তিতে উষ্কানি দিচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন প্রতিবাদের নাম করে কোথাও যদি অশান্তি ছড়ানো হয় তবে সেনার পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্স সহ বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। মোট ২৬টি, নথিভুক্ত নয়, এমন অ্যাপ সরকার বন্ধ করার পর থেকে বিক্ষোভ ছড়ায়। ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলিতে নেপালে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী রয়েছেন।
নেপাল সরকারের এই পদক্ষেপ জনগণ, বিশেষ করে, অল্পবয়সীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ তুলেছে। কাঠমান্ডুতে প্রবল বিক্ষোভ চলে।
প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে চলে বিক্ষোভ ভাঙচুর।
নেপালের এই ঘটনায় বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের পতনের ছায়া দেখছেন অনেকে। গতবছর জুলাই মাসে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৫ আগস্ট ২০২৫ পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছাড়েন হাসিনা।
নেপালে যারা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন তাদের বেশির ভাগটাই যুববয়সী। কোন বারনৈতিক পরিচয় নেই তাদের, নেই কোন রাজনৈতিক সমর্থনও। এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কাদের সমর্থনে এই আন্দোলন ব্যাপক চেহারার আকার নিলো এবং সরকারের পতন ঘটালো। এই বিক্ষোভের পিছনে হামি নেপাল বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এই স্বেচ্ছা সেবী সংস্থা ২০১৫ সালে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য তৈরি হয়। গত কয়েক দিন এই সংস্থাকে বলতে শোনা গিয়েছে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে প্রয়োজনে স্কুলের জামা পড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল হতে।
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে এই স্বেচ্ছা সেবী সংস্থা বেশ কয়েকবার বিদেশী অনুদান রয়েছে। তাতে কোকাকোলারও অনুদান রয়েছে বলে জানাচ্ছে একাংশ। ভুবনেশ্বরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংস্থা এবং তার ঘনিষ্টদের সরব হতে দেখা গিয়েছে, প্রচারেও নামতে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছে একাংশ। সামাজিকমাধ্যমে নিশেধাজ্ঞা জারি হয়েছে সেদেশের আইন না মানার অভিযোগকে সামনে রেখে। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে নির্দেশও দিয়েছিল, সেই নির্দেশ এখন প্রয়োগ করা হলো কেন তা অস্পষ্ট। তবে নেপালের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য সরকারের দুর্নীতি এবং স্বজন পোষন এই বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।
Nepal
নেপালে অশান্তি থামাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তৈরি সেই দেশের সেনা

×
মন্তব্যসমূহ :0