UN Report

বিশ্বের চার গরিবের একজনই ভারতীয়, জানালো রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট

আন্তর্জাতিক

বিশ্বের যে পাঁচ দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ দারিদ্রের মধ্যে রয়েছেন, তারই একটি হলো ভারত। নিউইয়র্কে গিয়ে মোদী যতই দাবি করুন, দশ বছরে তিনি ২৫ কোটি মানুষের দারিদ্র মুছে ফেলেছেন কিংবা ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশ বানানোর খোয়াব বিলি করুন, আদপে মোদীর ভারতে এখনও ২৩ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রের মধ্যেই জীবনযাপন করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নতুন এক প্রতিবেদনে এমনই ছবি উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটান। এর প্রায় অর্ধেকেই (৪৮.১ শতাংশ) শিশু নয়তো কিশোর। আর তার মোটামুটি এক-চতুর্থাংশই ভারতীয়। সহজ করে বললে, বিশ্বের চারজন গরিব মানুষের একজন থাকেন মোদীর ভারতেই।
‘বিশ্বব্যাপী বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক-২০২৪: সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র’ শিরোনামে ইউএনডিপি’র সঙ্গে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই)-র যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চরম দারিদ্রে দিন কাটানো ১১০ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেকই থাকেন ভারত সহ পাঁচ দেশে। ভারতের পরে রয়েছে পাকিস্তান (৯ কোটি ৩০ লক্ষ), ইথিওপিয়া (৮ কোটি ৬০ লক্ষ), নাইজেরিয়া (৭ কোটি ৪০ লক্ষ) ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (৬ কোটি ৬০ লক্ষ)। 
প্রতিবেদনটি আরও জানায়িছে, বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের ৮৩.২ শতাংশ সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে। মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্সটি অক্ষরপীড়িত বাসস্থান, নিকাশি, বিদ্যুৎ, রান্নার জ্বালানি, পুষ্টি ও স্কুলে উপস্থিতির মতো সূচকগুলো ব্যবহার করে দারিদ্রের মাত্রা নির্ধারণ করেছে। রিপোর্ট জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লক্ষ পরিবার এমন রয়েছে, যেখানে অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। সাব-সাহারান আফ্রিকায় তেমন পরিবারের সংখ্যা ২৫ কোটি ৬০ লক্ষ। 
সূচকে আফগানিস্তানের ওপর বিশেষ গবেষণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ এবং ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ৫ কোটি ৩ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়েছেন। গত বছর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আফগান নাগরিককে দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে দারিদ্রের স্তর অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ১১২টি দেশ ও ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্রে বসবাস করছে, যাদের মধ্যে ৪৫ কোটি ৫ লক্ষ অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ সংঘাতের ছায়ার মধ্যে রয়েছে।  
সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত এসব দেশে পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও নিকাশি ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্য দেখা গেছে। ইউএনডিপি’র আসিম স্টেইনার বলেন, সাম্প্রতিক বছরে সংঘাতগুলো আরও তীব্র ও বহুমুখী হয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং জীবনযাত্রা ও জীবিকার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটেছে।
সূচকে দেখা গেছে, প্রায় ৫৮ কোটি ৪ লক্ষ শিশু চরম দারিদ্রের মধ্যে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে এই হার ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুমৃত্যুর হার ৮ শতাংশ, যেখানে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোতে এই হার ১ দশমিক ১ শতাংশ।

ইউএনডিপির প্রধান পরিসংখ্যানবিদ ইয়ানচুন ঝাং বলেন, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা একটি কঠোর ও মরিয়া যুদ্ধ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠী ভারতে বাস করে।
অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) পরিচালক সাবিনা আলকিরের কথায়, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণের গতি ধীর– তাই এসব অঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ছে। এই পরিসংখ্যানগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় শান্তির আবহে বিনিয়োগ ছাড়া আমরা দারিদ্র দূর করতে পারবে না।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই প্রতিবেদনে দারিদ্র বিস্তারে গ্রাম-শহরের ফারাকটাও তুলে ধরেছে। রিপোর্ট জানিয়েছে , গরিব মানুষের ৮৩.৭ শতাংশই গ্রামে থাকেন। বিশ্বজুড়ে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে দারিদ্র অনেক বেশি। সামগ্রিকভাবে, বিশ্বের গ্রামীণ জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ গরিব। তুলনায় শহুরের মানুষের মধ্যে গরিব ৬.৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট। 
স্বাস্থ, শিক্ষা, জীবনধারণের মান সহ ১০টি সূচক ব্যবহার করে ২০১০ সাল থেকে ইউএনডিপি ও অক্সফোর্ড এই মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স (এমপিআই) প্রকাশ করে আসছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে জিডিপি’র হার প্রকাশ করলেও মোদীর ভারতেই সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষের বাস। 
 

Comments :0

Login to leave a comment