Binoy Mishra CBI

বিনয় মিশ্রকে নাগালে পেতে ফের তৎপরতা সিবিআই’র

রাজ্য

 দু’বছরের বেশি সময় ধরে ফেরার। চার মাস আগে সিবিআই’র চার্জশিটেও অন্যতম অভিযুক্ত। কয়লা পাচারকাণ্ডে এবার অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ যুব তৃণমূল নেতা ফেরার বিনয় মিশ্রকে নাগালে পেতে তৎপর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। যদিও দু’বছর ধরে ভাত চোখে ধুলো দিয়ে কীভাবে ভিন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে ফেরার রয়েছে বিনয় মিশ্র তা নিয়েও রয়েছে গুরুতর প্রশ্ন।


কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র দাবি কয়লা পাচারকাণ্ডে তদন্তের এই পর্যায়ে বিনয় মিশ্রের নাগাল পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে আসানসোলে সিবিআই’র বিশেষ আদালত থেকেও বিনয় মিশ্রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। লুকআউট নোটিস জারি করা আছে। এই অবস্থায় বিনয় মিশ্রকে হেপাজতে চাইছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে দ্রুত বিনয় মিশ্রকে হেপাজতে নিয়ে প্রয়োজনীয় তৎপরতা শুরু হয়েছে। শুধু কয়লা পাচার নয়, বিপুল টাকা ভারত থেকে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্রের নাম রয়েছে গোরু পাচারকাণ্ডের চার্জশিটেও। বিনয় মিশ্রের মাধ্যমে একাধিক ভুয়ো সংস্থা হয়ে কয়লা, গোরু পাচার টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলেই দাবি সিবিআই ও ইডি’র।
বিনয় মিশ্র নিয়ে বরাবরই মুখে কুলপ এঁটেছে শাসক তৃণমূল। অভিষেক ব্যানার্জিও বিনয় মিশ্রের প্রসঙ্গ এড়িয়েছে প্রথম থেকেই। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসে কয়লা পাচার কাণ্ডে সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি’র দীর্ঘ জেরার পরে বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিনয় মিশ্রের প্রসঙ্গ নিজেই এনেছিলেন ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। অভিষেক ব্যানার্জির সেদিন সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, আট মাসেও আগে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে বিনয় মিশ্রের ফোনে কথা হয়েছে। ফোনে শুভেন্দু অধিকারী ওই অভিযুক্তকে বলেছেন, তাঁর কেসটা তিনি দেখে দেবেন। এই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেই অভিষেক ব্যানার্জি দাবি করেন, ‘এক সাংবাদিকের কাছে ওই কথোপকথনের রেকর্ড আছে। সেটা আমি শুনেছি। যদি এতে শুভেন্দু অধিকারীর মানহানি হয়, তা হলে তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আমি আদালতে ওই ফোনের অডিয়ো ক্লিপিং জমা দিয়ে দেবো’।
যদিও তিন মাস পেরিয়েছে। অভিষেক ব্যানার্জি বা শুভেন্দু অধিকারী  দু’তরফ থেকেই কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। 
২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ফেরার হয় এই বিনয় মিশ্র। সিবিআই, ভারত সরকারের চোখে ধুলো দিয়েই দেশ থাকায় পালায় বিনয় মিশ্র। প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ভানুয়াতুরে নাগরিকত্ব নিয়ে ফেলেছে এই কয়লা পাচার চক্রের অন্যতম পাণ্ডা, যুব তৃণমূলের নেতা বিনয় মিশ্র। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। অথচ তার আগে ২২ ডিসেম্বরই তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়ার জন্য পাসপোর্টও জমা দিয়ে দিয়েছিল! বিনয় মিশ্র নিয়ে তৃণমূলের তরফে আজ পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। 


গোরু ও কয়লা পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত এই ব্যক্তি গত বছর এই শহরে থাকাকালীন কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তা পর্যন্ত পেত। কলকাতা পুলিশের দুই সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী এই কয়লা পাচারকারীর জন্য মোতায়েন করেছিল মমতা ব্যানার্জির সরকার। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই অভিষেক ব্যানার্জি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক পদে এই বিনয় মিশ্রকে বসান। এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে পাচারকাণ্ডে যুক্ত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও অন্তত খাতায় কলমেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তৃণমূলের তরফে।
বিনয় মিশ্রকে হাতে পেতে তৎপর সিবিআই ও ইডি দুই সংস্থাই। যদিও কীভাবে দু’বছর ধরে সে অধরা,  কেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা লুকআউট নোটিস জারি করেও দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছে বিনয় মিশ্রকে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিনয় মিশ্রের জেরার সঙ্গে অভিষেক জায়া রুজিরা ব্যানার্জির ভবিষ্যৎও জড়িয়েছে। বিনয় মিশ্রের তত্ত্বাবধানেই টাকা পাচার হয়েছে রুজিরা ব্যানার্জির বিদেশের অ্যাকাউন্টে, দাবি গোয়েন্দা সংস্থার। বিনয় মিশ্রের একাধিক ভুয়ো সংস্থার খোঁজ মিলেছে। যেখানে কয়লা ও গোরী পাচারের টাকা খেটেছে। খোদ কালীঘাট চত্বরেই বিনয় মিশ্রের পাঁচটি শিখণ্ডী সংস্থার হদিশ মিলেছে। বিনয় মিশ্রের মাধ্যমেই বিদেশের অ্যাকাউন্টে টাকা পাচার হয়েছে দাবি ইডি’’র।
এই অবস্থায় বিনয় মিশ্রকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা হেপাজতে পেলে শাসক তৃণমূলের শীর্ষ সাংসদ ও তাঁর স্ত্রীর উদ্বেগ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment