CPIM Purba Medinipur Conference

সমাবেশ পাঁশকুড়ায়: জমি থেকে দেশ, লুট ঠেকাতে লাল ঝাণ্ডাকে ফেরানোর আহ্বান

রাজ্য জেলা

শুক্রবার পাঁশকুড়ায় সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে জনতার ঢল। ছবি: দিলীপ সেন

পীযূষ ব্যানার্জি: পাঁশকুড়া

জমি লুট করতে হবে। দেশ লুট করতে হবে। সে জন্যই বামপন্থীদের হটানোর দাবি তুলেছিল তৃণমূল আর বিজেপি। দেশ বাঁচাতে হলে ফের লাল ঝান্ডাকেই মজবুত করতে হবে। 
শুক্রবার পাঁশকুড়ায় সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন পার্টি নেতৃবৃন্দ। জেলা ২৫ তম সম্মেলন। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পাঁশকুড়ায় পিডব্লিউডি ময়দানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, দেবলীনা হেমব্রম, পার্টি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য অনাদি সাহু। সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি।   
সেলিম বলেন, ‘‘লাল ঝান্ডাকে শেষ করতে বলেছিল। কেন বলেছিল? পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে মন্ত্রী আছে তৃণমূলের। তাঁর এলাকায় কৃষকের তিন ফসলি জমি দখল করে ভেড়ি করেছিল তৃণমূলের মাতব্বর বাহিনী। মা-বোনেরা গত কয়েকবছর ধরে লড়েছেন বোমা-পিস্তলের বিরুদ্ধে। আর বামপন্থী আইনজীবীরা হাইকোর্টে গিয়ে লড়েছেন। হাইকোর্ট তৃণমূল সরকারের গালে চড় মেরে বলেছে জমি ফেরত দিতে হবে। জমি চাষযোগ্য করতে হবে তার সব খরচ বিএলআরও, ডিএলআরও-কে দিতে হবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘জমি হাঙররা জমি দখল করতে চাইছে কৃষকের জমি কেড়ে নিতে চাইছে। তারা তো চাইবে না লাল ঝাণ্ডা থাকুক। এই জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেরই ভগবানপুরে জমি দখল করার চেষ্টা করছে। সেখানেও লড়াই চলছে সরাসরি। আবার মোকদ্দমাও চলছে। ভগবানপুরেও রায় হবে। তৃণমূলকে ঝাঁটা মেরে তাড়িয়ে কৃষককে জমি ফেরত দিতে হবে।’’
দুই লুটেরা দল প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘জঙ্গলের জমিতে গাছ কেটে লুট করছে, বাঁধের জমি, পঞ্চায়েতের জমি লুট করছে। বিজেপি পিছিয়ে আছে? বিজেপি ঝরনা, পাহাড়, নদী, সমুদ্রের উপকূল সব বেচে দিচ্ছে।’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘কলকাতায় ট্রাম, রাজ্যে সরকারি বাস সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর বিজেপি রেল, বিমানবন্দর সব বেচে লাট করে দিচ্ছে। দুই সরকার কাটমানি, ঘুষখোরি করছে। এজন্য যারা তৃণমূলে চুরি করে বড় চোর হলো বিজেপি-তে চলে গেল। বিজেপি-তে আর বেশি চুরি করতে পারছে না, ছোট চোর হতে হবে, আবার তৃণমূলে ঢুকে পড়ল। আর তৃণমূল বিজেপি একসঙ্গে বলেছিল ‘লাল হটাও, দেশ বাঁচাও’। লাল হটেছে কিন্তু দেশ বাঁচেনি। তাই দেশ বাঁচাতে হলে আবার লাল ঝাণ্ডাকে মজবুত করতে হবে।’’
সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখতে পাচ্ছেন দেশে বা রাজ্যে কী চলছে। সবচেয়ে বড় চোর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের আসনে বসার জন্য হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে এগিয়ে আসছেন। চুরি দুর্নীতি করলে মানুষ ঘৃণা করে, আমরা সরিয়ে দিই। আর দুর্নীতি, অন্যায় করলে তৃণমূলে পদ আরও বড় হয়, এটিই বাস্তব।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘গত এক মাসে মালদহে ৭টি শ্যুট আউট হলো। তৃণমূলের এক নেতা গুলিতে মারা গেলেন। অভিযুক্ত তৃণমূলেরই আরেক বড় নেতা! মুখ্যমন্ত্রী ডিএম-এসপি’কে বলে গেলেন। আর নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী, যিনি নিজেও তৃণমূলের নেত্রী, তিনিই বললেন দলেরই বড় বড় নেতারা খুনে জড়িত। এরাই মুখ্যমন্ত্রীর বাঁদিকে ডানদিকে ঘুরে বেড়ায়। তিনি অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন না। অপরাধীদের সঙ্গে নিয়েই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী চলেন।’’
পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গ্রামের পরিবারে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারত না, রাস্তাঘাট ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামের গরিবকে অন্যের জমিতে খাটতে হত। বামফ্রন্ট সরকার কেবল শহরের দিকে তাকিয়ে চলেনি। গ্রামের দিকে তাকিয়েছে। শ্রমিক-কৃষক-যুবকের দিকে তাকিয়েছে। গ্রামে গ্রামে দু’বেলা ভাত, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছিল।’’ 
কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য এবং বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক দেবলীনা হেমব্রম বলেন, ‘‘২০১১-তে সরকার বদলেছে। দেশের এবং রাজ্য সরকার মানুষের ওপর কী যন্ত্রণা নামিয়ে আনছে বুঝতে হবে। ধর্মের নামে, জাতির নামে বিভাজন করে দিচ্ছে। এরা মেয়েদের কথা ভাবে না। তাই নির্যাতন হচ্ছে। আমাদের বেকার ছেলেমেয়েরা কাজের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন? আমরা প্রশ্ন করব না?’’
তিনি বলেন, ‘‘বড় বড় তিলক কেটে সাধু সাজছে। এরা চুরি করেছে, আমরা সবাই দেখেছি, নিজের নিজের এলাকয় দেখেছি। বললে ওদের গায়ে জ্বালা লাগে। চৌত্রিশ বছরের কথা বলে।’’
বামফ্রন্ট সরকারের চৌত্রিশ বছর প্রসঙ্গেই হেমব্রম বলেন, ‘‘আপনারা নির্বাচিত করেছিলেন। বামপন্থী সাংসদরা একশো দিনের কাজ আদায় করেছিলেন। সেজন্যই তো ওরা চক্রান্ত করল। কাউকে বলছে তুমি সাঁওতাল, কাউকে বলছে ‘তুমি অমুক’। তোমরা ভাগ হয়ে যাও। আর এই কায়দায় গরিব মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। আজকে স্কুল বন্ধ, হাসপাতালে জাল স্যালাইন দুর্নীতি হচ্ছে, দু-নম্বরি চলছে। আদিবাসী হস্টেল বন্ধ হচ্ছে। কাজের খোঁজে বাবা-মা ছোট ছোট বাচ্চাদের ছেড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। আর এরা ব্যবসা করছে। বলছে আমাদের পকেটটা ভরতে হবে। এরা আমাদের ভালবাসে নাই। ইংরেজরা যেমন আমাদের ভালবাসে নাই, এরটা তেমন।’’
দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানান তিনিও।

 

Comments :0

Login to leave a comment