POETRY | AYAN MUKHAPADHAYA | KARKHANAR BADALE MANDIR | MUKTADHARA | 31 DECEMBER 2025 | 3rd YEAR

কবিতা | অয়ন মুখোপাধ্যায় | কারখানার বদলে মন্দির | মুক্তধারা | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | বর্ষ ৩

নতুনপাতা/মুক্তধারা

POETRY  AYAN MUKHAPADHAYA  KARKHANAR BADALE MANDIR  MUKTADHARA  31 DECEMBER 2025  3rd YEAR

কবিতা

মুক্তধারা

কারখানার বদলে মন্দির

অয়ন মুখোপাধ্যায়
 

 ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ | বর্ষ ৩

বুদ্ধবাবু,
আপনি মস্ত বড় ভুল করেছিলেন।

আপনি জানতেন না
কলকারখানা করলে শব্দ হয়—
লোহার শব্দ,
ঘাম ঝরার শব্দ,
ভবিষ্যৎ বানানোর শব্দ।

আপনি জানতেন না
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ
এই শব্দে ভয় পায়।
কারখানার চিমনি তুললে
ধোঁয়া ওঠে—

আর ধোঁয়া মানেই প্রশ্ন।

মজুরি কেন কম,
মালিক কে,
আমার ছেলেটা কাজ পাবে তো?

কিন্তু মন্দির তুললে
ধূপের ধোঁয়া ওঠে—
আর ধূপ মানেই উত্তর।

কোনো প্রশ্ন নেই,
শুধু মাথা নোয়ানো,
শুধু হাত জোড় করা,
শুধু নীরব সম্মতি।

আপনি ভেবেছিলেন
মানুষ চাকরি চায়।
কী আশ্চর্য সরলতা!
মানুষ আসলে চায়
নিজের দুঃখের জন্য
একটা পাকাপোক্ত ঠিকানা—
মন্দির,কিংবা মসজিদ।
যেখানে দুঃখটা আর ব্যক্তিগত থাকে না,
ভগবানের কাঁধে তুলে রাখা যায়।

২ সিঙ্গুরে এখন যা আছে

সিঙ্গুরে এখন কোনো কারখানা নেই,
কিন্তু বিশ্বাস আছে।
বিশ্বাসটা এই—
যন্ত্র মানুষকে খায়,
আর দেবতা মানুষকে বাঁচায়।

রাত হলে
পরিত্যক্ত জমিতে দাঁড়িয়ে
আমি দেখি—
একটা ট্র্যাক্টর
ধীরে ধীরে
ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে
শিবলিঙ্গে পরিণত হচ্ছে।

লোহার বোল্টে
চন্দন লেগে যাচ্ছে,

আর মেশিন বলছে—
“আমায় ছেড়ে দাও,
আমি আর উৎপাদন করতে চাই না।
আমি ক্লান্ত।
আমি পূজা চাই।”

যন্ত্রও আজ ঈশ্বর হতে চায়—
কারণ ঈশ্বরের কোনো শিফট নেই,
কোনো টার্গেট নেই,
কোনো ইউনিয়ন নেই।

৩ বেলডাঙার বাবরি

বেলডাঙায় লোক নেই,
কিন্তু ভিড় আছে।
এ এক নতুন গণিত—
মানুষ ছাড়াই সমাবেশ।

জাতীয় সড়কের ধারে
একটা মসজিদ উঠছে—
নামাজের জন্য নয়,
নামের জন্য।

কয়েক কিলোমিটার হেঁটে এসে
মানুষ হাত তোলে—
আল্লাহর দিকে নয়,
হেডলাইনের দিকে।

রাতে মসজিদটা স্বপ্ন দেখে—
সে একদিন হাসপাতাল ছিল,
ডাক্তার ছিল,
নার্স ছিল,
শিশুর কান্না ছিল।
ঘুম ভেঙে দেখে
তার কপালে লেখা—
“রাজনৈতিক প্রয়োজন।”

৪ রামমন্দিরের কারখানা

রাজ্যে এখন
কারখানার মতো
মন্দির তৈরি হচ্ছে।
যেখানে শিফট আছে—
সকালের শিফটে ভক্ত,
রাতের শিফটে ক্যামেরা।

কর্মসংস্থানও হচ্ছে—
স্লোগান লেখক,
ইট বহনকারী দেশপ্রেমিক,
ফেসবুক লাইভ করা পুরুত ঠাকুর।
শুধু শ্রমিক নেই।
কারণ শ্রমিক প্রশ্ন করে।
ভক্ত প্রশ্ন করে না।
ভক্তের শুধু
শিরদাঁড়া বেঁকে থাকে,
আর ভোটের আঙুল সোজা।

৫বামেদের জন্য বিজ্ঞাপন

সিপিআই(এম) যদি সত্যিই
ফিরে আসতে চায়,
তাহলে এবার ইস্তেহারে লেখা থাকুক—
“আমরা আর মানুষকে কাজ দেব না।
আমরা আর
১০০ দিনের কাজের দাবিতে হাঁটবো না।
তার বদলে দেব
ঈশ্বরের ছায়া।

কারখানার বদলে
গীতা–কোরান–বাইবেল।
শিক্ষার বদলে
উৎসবের ছুটি।

আমাদের কোন যুবনেতা
আর কাজের দাবিতে স্লোগান দেবে না—
বরং  হাতে হাতে
প্রসাদ বিলি করবে।”

6শেষ কবিতা

মানুষ কী চায়

মানুষ আজ
আর মানুষ হতে চায় না।
মানুষ চায় পরিচয়।
মানুষ বুঝেছে—
মন্দির–মসজিদে
ভিড় দেয়,
ভোট দেয়।

ভিড় নিরাপদ।
ভিড়ে দাঁড়িয়ে
কেউ একা থাকে না।

বুদ্ধবাবু,
আপনি মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন
ভবিষ্যতের দিকে।
মানুষ উত্তর দিয়েছে—
“আমাদের অত দূরে যাওয়ার দরকার নেই।
আমরা এখানেই থাকব—
ঈশ্বরের কাছাকাছি।”

আর ঈশ্বর—

তিনি নীরবে
জমি দেখছেন।
দলিল ঠিক আছে কি না,
রেজিস্ট্রি কার নামে—
জমির ট্যাক্স ঠিকমতো দেয়া আছে কিনা 
ঈশ্বর এখন সেই সব হিসেব কষছেন

Comments :0

Login to leave a comment