মঙ্গলবার রাত থেকেই শহরে উত্তেজনা বাড়ছিল। বুধবার সকাল থেকে এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে জড়ো হয়ে মিছিল বের করে জনতা। সেই মিছিল সামলাতে চলল প্রথমে পুলিশের টিয়ার গ্যাস পরে গুলি। বুধবার লে শহরে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে প্রাণ গেল চারজনের। জখম আরও ৪৫জন। পুড়ল বিজেপি’র অফিসও। রাজ্যের পূর্ণ মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে লাদাখে চলা আন্দোলন বুধবার ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক হয়ে উঠল। প্রতিবাদ হিংসার আকার নিলে এদিনই সোনম ওয়াংচুক তাঁর অনশন তুলে নেন। একই সঙ্গে তিনি তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা কোনওভাবেই হিংসায় না জড়ায়।
এদিন পুলিশের গুলিবর্ষণ ও টিয়ার গ্যাসের মাঝে অন্তত চার জন নিহত এবং ৪৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২২ জন পুলিশ কর্মীও রয়েছেন।
দিনভর উত্তেজনার পর সন্ধ্যা নামতেই জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী সোনম ওয়াংচুক তাঁর টানা পনেরো দিনের অনশন তুলে নিলেন। গুরুতর জখমদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
সকাল থেকেই লে শহরে সম্পূর্ণ বন্ধ ডাকা হয়েছিল। শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে স্লোগান তোলেন। বিক্ষোভকারীরা বিজেপি দপ্তর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়, জ্বালিয়ে দেয় একাধিক গাড়ি। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায়। প্রশাসন অবিলম্বে ধারা ১৬৩ জারি করে পাঁচজনের বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনশনরত ১৫ জনের মধ্যে দু’জনের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার জেরেই বুধবারের এই বিক্ষোভ, এমনটাই মনে করছেন ওয়াংচুক। অনলাইনে সাংবাদিক বৈঠক করে সোনম ওয়াংচুক বলেছেন, “আজ আমাদের অনশনের ১৫তম দিনে গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে লে শহরে ব্যাপক হিংসা ও ভাঙচুর ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক অফিস ও পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। আমি লাদাখের তরুণ প্রজন্মকে অনুরোধ করছি, এই হিংসার পথে যেন না হাঁটেন, কারণ এতে আমার পাঁচ বছরের পরিশ্রম ব্যর্থ হবে। আমি এত দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে অনশন ও মিছিল করেছি, তারপর হঠাৎ হিংসার আশ্রয় নেওয়া—এ আমাদের পথ নয়। আমি তরুণ প্রজন্মকে আবেদন করছি, শান্তির মাধ্যমে সরকারকে কাছে যান। আমি চাই সরকার শান্তির বার্তাটিই শুনুক।”
তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালানো বন্ধের আবেদন জানান এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানান। তাঁর কথায়, “শেষ পাঁচ বছর ধরে আমরা অহিংস পথে চলেছি। আজ হিংসা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত।”
লাদাখ অ্যাপেক্স বডির (এলএবি) তরফে চার দফার দাবি তোলা হয়েছে—লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা, ষষ্ঠ তফসিলের আওতা, লে ও কারগিলের জন্য পৃথক লোকসভা আসন এবং কর্মসংস্থানে সংরক্ষণ। আগামী ৬ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে লাদাখের প্রতিনিধি দলের নতুন আলোচনার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রের মোদী সরকার যদিও লাদাখের এই হিংসার জন্য সোনম ওয়াংচুককে দায়ী করেছে। রাতে সরকারের এক বিবৃতিতে, যা পিটিআই উদ্ধৃত করেছে, বলা হয়েছে, “সোনম ওয়াংচুকের উসকানিমূল বক্তব্যের কারণেই লাদাখে হিংসা ছড়িয়েছে।”
এর কিছু আগেই ওয়াংচুক তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের সংসর্গ নিয়ে বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের অভিযোগ খণ্ডন করেন। তিনি বলেন, “এখানে কংগ্রেসের এমন কোনো প্রভাব নেই যে ৫,০০০ যুবককে রাস্তায় নামাতে পারে। গতকাল, একজন কংগ্রেস কাউন্সিলর রাগে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, কারণ তার গ্রামের দুইজন অসুস্থ ব্যক্তিকে সেখানে আনা হয়েছিল।”
এক্স-এ পোস্ট করে, অমিত মালব্য প্রশ্ন তোলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কি লাদাখে এমন অশান্তি চেয়েছিলেন। মালব্য বলেন, “লাদাখে দাঙ্গা করা এই ব্যক্তি হল ফুনৎসোগ স্তানজিন ত্সেপাগ, আপার লেহ ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর। ওকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় জনতাকে উস্কে দিতে এবং বিজেপি অফিস ও হিল কাউন্সিলকে লক্ষ্য করে হিংসায় অংশ নিতে। রাহুল গান্ধী কি এমন ধরনের অশান্তির কল্পনা করছিলেন?” তিনি কংগ্রেস কাউন্সিলরের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে এই মন্তব্য করেছেন। এর কিছু পরেই আসে কেন্দ্রের তরফে সরকারী বিবৃতি।
মঙ্গলবার রাত থেকেই শহরে উত্তেজনা বাড়ছিল। বুধবার সকাল থেকে এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে জড়ো হয়ে মিছিল বের করে জনতা। বিজেপি দপ্তর ও হিল কাউন্সিল ভবনে ইটবৃষ্টি শুরু হলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়ি এবং বিজেপি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
প্রসঙ্গত, ২০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রের তরফে লাদাখ অ্যাপেক্স বডি ও কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এদিকে লে হিল কাউন্সিলের ভোটের আগে ল্যাবের প্রতিনিধিদলকে অরাজনৈতিক রাখার দাবিতে কংগ্রেস এই বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
leh ladakh
রাজ্য মর্যাদার দাবিতে বিক্ষোভে রণক্ষেত্র লে পুড়ল বিজেপি’র অফিস

×
Comments :0