citizenship in Gujarat

ভোটমুখী গুজরাটে নাগরিকত্ব নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

জাতীয়

গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ঠিক তার আগে প্রতিবেশী তিন দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের ‘শরণার্থীদের’ নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সোমবার একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে গুজরাটের মেহসানা এবং আনন্দ জেলার জেলা শাসকদের। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতে জমা পড়েছে কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ এবং একাধিক সংগঠনের আবেদন। প্রাক্তন এক রাষ্ট্রদূত এবং দুই প্রাক্তন আইএএস আধিকারিকও সাংবিধানিক বৈধতায় প্রশ্ন তুলে আইনটি খারিজের আবেদন জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে এই আইনের বিরুদ্ধে আবেদন জানায় ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আবেদনও জমা পড়েছে।

মঙ্গলবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ২৩২টি আবেদন নিয়ে কেন্দ্র, আসাম, ত্রিপুরা সরকার ও আবেদনকারীদের অবস্থান জানাতে তিন সপ্তাহ সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এই নির্দেশ দেন। আগামী ৮ নভেম্বর অবসর নেবেন প্রধান বিচারপতি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট ৬ ডিসেম্বরের জন্য স্থির করেছে।

কেন ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সঙ্গে গুজরাটের এই নাগরিকত্ব প্রদানের কোনো সংযোগ নেই। ভোটমুখী গুজরাটে এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে কি শুধু ভোট ব্যাঙ্কের দিলে তাকিয়ে নাকি ব্রিজ বিপর্যয় থেকে নজর ঘোরাতে বিজেপির এই সিদ্ধান্ত মত ওয়াকিবহাল মহলে।

বিরোধীদের প্রবল বাধা উপেক্ষা করেই লোকসভা ও রাজ্যসভায় এই বিলটি বিল পাস হয়ে যাওয়ার পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল দেশের অধিকাংশ অঞ্চল। সেই বছরের মাঝা মাঝি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষস্থানীয় অফিসার দাবি করেন সহজেই মিলবে না ভারতীয় নাগরিকত্ব। ওই অফিসার দাবি করলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান ও পার্সি জনগণ সহজাত উপায়ে ভারতীয় নাগরিক হয়ে যাবেন না মোটেই। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করলেই মিলবে নাগরিকত্ব। তিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ওই আইনে কোথাও বলা নেই যে সমস্ত শরণার্থী এবং বেআইনি অভিবাসী সহজেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। তাঁদের আবেদন করতে হবে প্রথমে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তারপর সেই আবেদন যাচাই করে দেখবে। প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করতে পারলেই পাওয়া যাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব, নতুবা নয়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বর্ণিত ধারাগুলি রূপায়ণে বিধি তৈরি করবে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি আরও জানান, ওই সম্প্রদায়ভুক্ত কোনও অভিবাসীই ভারতীয় নাগরিক হয়ে যাবেন না। তাঁদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। তারপর বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শর্তাবলী পূরণ হলেই ভারতীয় নাগরিকের মর্যাদা পাবেন।

২০১৯ এর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বদলে ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনের আওতায় এই নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা অন্য গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। অভিঝোগ এর আগেও পাকিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া বহু মানুষ নাগরিকত্ব না পেয়ে ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ২০২১ সালে রাজস্থান থেকে অন্তত ৮০০ হিন্দু নাগরিকত্ব না পেয়ে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছেন বলে দাবি করেন শরণার্থীদের নিয়ে কাজ একটি সংস্থা। তাদের অভিযোগ নাগরিকত্বের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু  কোনও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের তরফে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার অনলাইন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়।

গুজরাটে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ লাগু না করে, ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনে নাগরিকত্ব প্রদান কেন্দ্রীয় সরকারের চমক বলে মত রাজনৈতিক মহলে।

Comments :0

Login to leave a comment