Around the Globe on the Bicycle

‘গঙ্গা আমাদের সবার’

রাজ্য কলকাতা

Riding Around the Globe

অভিযাত্রী  তপন কুমার দাস সাইকেলে ঘুরেছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে। পরিবেশ রক্ষার বার্তা, সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে চলেছে যাত্রা। দেশে-বিদেশে নানা জায়গায় পেয়েছেন অচেনা-অজানা মানুষের আপ্যায়ন। ধর্ম-ভাষা-দেশের বেড়া ভাঙা নানা ঘটনা বিনিময় করছেন পাঠকদের সঙ্গে। আজ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম পর্ব

 

সেবার চলেছিলাম অমরনাথের পথে। মুসলিম ঘোড়াওয়ালার দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়ায় চেপে চলেছেন অশক্ত হিন্দু প্রবীণ-প্রবীণা। পঞ্চ-তরণী পাড় হয়ে, পাহাড়ের কোল বেয়ে অবশেষে ডান-মুখী মোড় নিলাম। দূরে দাঁড়িয়ে অমরনাথ। পায়ের তলায় বরফ, এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা দায়। তারই মাঝে হাসিমুখে সারি সারি দাড়ি-মুখ মুসলিম ফুল বিক্রেতারা। হাতে হাতে এগিয়ে দিয়ে চলেছেন ফুলের ডালি। যে ফুল বিনে পূজো অসম্পূর্ণ হিন্দু পুরোহিত কিংবা দর্শনার্থীদের। 

গঙ্গার দূষণ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বক্তব্যের ডালি নিয়ে গোমুখ থেকে হরিদ্বার হয়ে আমাদের পঁয়তাল্লিশ দিনের সাইকেল যাত্রা এগিয়ে চলেছে কানপুরের অভিমুখে। শাসওয়ান ছেড়ে বেড়িয়ে সন্ধ্যার মুখে। পিছনে গাড়ির ডাক শুনে থমকে দাড়ালাম। গাড়ি থেকে নেমে এলেন ফেলে আসা শহরের মেয়র। বললেন, চলুন আমাদের সঙ্গে, রাতে আমাদের আশ্রয়ে। আবার পিছু যাবো, মন সায় দিলো না। এগিয়ে চললাম সামনের শহরে। মুসলিম প্রধান শহর। ঘিঞ্জি বসতি, কিন্তু অভ্যর্থনায় খামতি নেই। বললেন, গঙ্গা আমাদের সবার। আমাদের চাষবাস জীবিকা সবই গঙ্গা নির্ভর। আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ মন্দিরে

শ্রীলঙ্কা অভিযানে আমার বেশিরভাগ রাত কেটেছে বৌদ্ধ মন্দিরে। কলম্বোতে বৌদ্ধ মন্দিরে দ্বিধা নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। ভিন দেশী, ভিন ধর্মী, থাকতে দেবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের তেমন বড় অনুগামী না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করলেন ট্রাস্টি সদস্য। জবাবে বলেছিলাম, দুঃখ করবেন না। বুদ্ধকে সম্মান করেন না, ভালোবাসেন না, এমন ভারতীয় বিরল। তবে হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত  সব সংশয় দুর করে, তাঁরা থাকতে দিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের দেওয়া চিঠি দেখিয়েই আমি শ্রীলঙ্কার সর্বত্র বাকি বিভিন্ন মন্দিরে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। রাতের খাবার শুধু নয়, সকালে বেরোনোর সময় যতটা সম্ভব পথের খাবার ভরে দিতেন ব্যাগে।

 

কম্বোডিয়ায়

দেশে কিংবা বিদেশে সম্পর্ক বা মানুষে মানুষে সম্প্রীতির চেহারা একই। দেশ কাল- স্থানের ওপরে বড় হয়ে ওঠে মানুষের পরিচয়। ‘চাই দূষণ মুক্ত পৃথিবী, শান্তি ও সম্প্রীতির পৃথিবী’- এই আবেদনে ছুটে চলেছে কম্বোডিয়ায় আমাদের সাইকেল।

কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের পথে এগিয়ে চলেছি। রাত আটটা, পথ চলতি দোকান সব বন্ধ হতে যায়। অন্ধকার হাইওয়ে বেশি দুর এগনো ঠিক হবে না। সামনে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতে জানান দিলেন হোটেল আছে, কিন্তু পঁচিশ কিলোমিটার দুরে। 

ওরে বাবা সে তো অনেক দুর, কাছাকাছি কিছু নেই। 

একটু ভেবে দোকানদারের উত্তর, না। তবে মসজিদ একটি রয়েছে, আপত্তি না থাকলে‌ থাকতে পারেন। একঝলক ফিরে তাকালাম, আমার ধর্মপ্রাণ বন্ধুর দিকে। তার সোজা জবাব, স্যার, আমাদের গুরু বলেন, ধর্ম নয়, মানুষই সব। ভালো লাগলো, ধর্ম যদি এমন মানবিক হয়, তাহলেই তো সমস্যা থাকে না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই দোকানদার তার দোকানে আসা কমবয়সী দুই ছেলেকে ডেকে ওদেরই মাদ্রাসায় নিয়ে যেতে বললেন। 

 

Comments :0

Login to leave a comment