STORY — SOURISH MISHRA | KACHA AMER TAK — NATUNPATA | 21 APRIL 2024

গল্প — সৌরীশ মিশ্র | কাঁচা আমের টক — নতুনপাতা | ২১ এপ্রিল ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  KACHA AMER TAK  NATUNPATA  21 APRIL 2024

গল্প

কাঁচা আমের টক

সৌরীশ মিশ্র

নতুনপাতা

 


"মা, আজ একটু কাঁচা আমের টক করবে?" রান্নাঘরের সামনে এসে কথাটা মাকে বলল টুকাই।
সকালবেলা। রান্নাঘরে রান্নার জন্য সব্জি কুটছিলেন টুকাই-এর মা। ছেলের কথা শুনে বললেন, "আমের টক খাবি, সে তো ভাল কথা। কিন্তু, কাঁচা আম আছে কি বাড়িতে? দেখ্ তো ফ্রিজে।"
টুকাই ফ্রিজ খুলে সব্জি রাখার জায়গাটা ভাল করে দেখে। তারপর বলে, "মা, কাঁচা আম নেই।"
"নেই? ঠিক আছে দাঁড়া, তোর বাবাকে বলি বাজার থেকে এনে দেবে।"
"বাবা খবরের কাগজ পড়ছে, পড়ুক না। আমিই বাজার থেকে এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।"
"তুই পারবি?"
"পারবো না কেন? আমি আর এখন ছোট নেই মা। ক্লাস সিক্সে পড়ছি কিন্তু আমি এখন।"
"ঠিক আছে যা। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নে।"

বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটা ছোট কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বেড়িয়ে পড়ল টুকাই। ওর বাবা ওকে বলে দিলেন, "আশাদুলের দোকান থেকেই কিনবি।"
মাঝেমধ্যেই বাবার সাথে বাজার যায় টুকাই। তাই আশাদুল চাচার দোকানটা চেনে সে। আজ সে গিয়ে দেখল দোকানে বেশ ভিড়। সে ভিড়ের মধ্যেই দাঁড়াল। আশাদুল-ও ভালই চেনে টুকাইকে। তাই ওকে দেখতে পেয়েই সে বলল, "কি নেবে টুকাইবাবু?"
"তোমার কাছে কাঁচা আম আছে তো?"
"এই তো।"
"কতো করে?" ওর বাবা যেমন করে সব্জি কেনার আগে জিনিসের দরদাম জিজ্ঞাসা করে ঠিক ঐভাবেই জিজ্ঞেস করল টুকাই।
"আশি টাকা কেজি, গো।"
"তুমি আমাকে ভাল দেখে দুটো আম দিয়ে দাও।" টুকাই-এর মা বলে দিয়েছেন ছেলেকে দুটো আম নিতে।
আশাদুল কাঁচা আমগুলোর মধ্যে বাছতে বাছতেই টুকাইকে বলে, "কাঁচা আম নিচ্ছ টুকাইবাবু, আজ বাড়িতে আমের টক হবে বুঝি?"
"হ্যাঁ। মা আমার জন্য আমের টক করবে আজ। আমি আমের টক খেতে খুব ভালবাসি, কি না।"
বেছেবুছে দুটো আম দাড়িপাল্লায় তোলে আশাদুল। "তিনশো হল টুকাইবাবু।"
"ঠিক আছে দিয়ে দাও।" বলতে বলতেই ব্যাগটা আর একটা পঞ্চাশ টাকার নোট এগিয়ে দেয় সে।


ততক্ষণে আশাদুল আর একজন ক্রেতার জিনিস মাপতে ব্যস্ত হয়ে পরে। তারই এক ফাঁকে টুকাই-এর ব্যাগটা নেয় আশাদুল। আম দুটো ভরে ওতে। তারপর টাকার ব্যালেন্সটাও ফেরত দেয়।
ব্যাগটা হাতে নেয় টুকাই। ব্যালেন্স টাকাটা পকেটে ঢোকানোর আগে গুনতে শুরু করে সে। আর গুনতে গুনতে হঠাৎই থমকে যায় সে। টুকাই আশাদুলের দিকে তাকায়। আশাদুল অন্য আরেক ক্রেতার জিনিস মাপতে ব্যস্ত। "আশাদুল চাচা, আমাকে কতো টাকা ফেরত দিয়েছো তুমি! আমার তো চব্বিশ টাকা হয়েছে। আমি তোমাকে দিয়েছি পঞ্চাশ টাকা। আর দেখো তুমি কতো ফেরত দিয়েছো আমায়! ছিয়াত্তর টাকা। তুমি বোধহয় ভেবেছ আমি তোমায় একশো টাকার নোট দিয়েছি, তাই না?" কথাটা শেষ করেই বাড়তি দেওয়া পঞ্চাশ টাকা আশাদুলের দিকে এগিয়ে দেয় টুকাই।
আশাদুলের মনে পড়ে টুকাইকে ও যখন ব্যালেন্স ফেরত দিচ্ছিল অন্য আরেকজনের জিনিস মাপছিল সে। আর ওতেই ভুলটা হয়ে গিয়েছে ওর। টুকাই-এর ফেরত দেওয়া নোটগুলো ক্যাশ-বাক্সে রাখতে রাখতে কি যেন চটজলদি একটা চিন্তা করে আশাদুল। তারপর বলে টুকাইকে, "তোমার ব্যাগটা একটু দাও তো টুকাইবাবু।"
"কেন?"
"দাও না।"
টুকাই ব্যাগটা এগিয়ে দেয় আশাদুলের দিকে।
আশাদুল তার পাশেই রাখা কাঁচা আমগুলোর মধ্যে থেকে একটা বড় দেখে কাঁচা আম নিয়ে টুকাই-এর ব্যাগটায় পুরতে উদ্যত হয়।
আর ঐ দেখেই টুকাই বলে ওঠে সাথে সাথেই, "কি করছ কি আশাদুল চাচা! আমার আর আম লাগবে না। মা বলে দিয়েছে আমি যেন দুটো আম-ই আনি।"
টুকাই-এর কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে আমটা টুকাই-এর ব্যাগে পুরে দেয় আশাদুল। তারপর সেটা এগিয়ে দেয় টুকাই-এর দিকে। বলে, "আমি তোমায় এটা এমনিই দিলাম টুকাইবাবু। তুমি এটাও টক করে খেও। এটা তোমার সততার পুরস্কার।"
এর পর আর কোনো কথা বলা যে চলে না এইটুকু বুদ্ধি হয়েছে টুকাই-এর। সে ব্যাগটা ফের হাতে নেয়। তারপর তার আশাদুল চাচার দিকে তাকিয়ে বলে, "থ্যাংক ইউ।"
আশাদুল ঠোঁটের কোণে একটু হাসে। তারপর বলে টুকাইকে, "সাবধানে যেও।"
"ঠিক আছে।"
টুকাই বাড়ির পথ ধরে।

Comments :0

Login to leave a comment