Farmer Suicide

৭ দিনে বর্ধমানে আত্মঘাতী দুই আলুচাষী

রাজ্য

Farmer Suicide

আলুর দাম হঠাৎ অর্ধেক হয়ে যাবার কারণে গত ৭ দিনে পূর্ব বর্ধমানে ২জন আলুচাষী আত্মঘাতী হয়েছেন। যেভাবে আলুর দামে ধ্বস নেমেছে তাতে কৃষক আত্মহত্যার মিছিল চলবে বলে রাজ্যের কৃষক নেতৃবৃন্দ মনে করছেন। 
কালনার পর জামালপুর থানার ফইমপুরে কীটনাশক খেয়ে আর এক কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। মৃতের নাম সৈয়দ আব্দুল মোমিন (৫৭)। তাঁকে সবাই খোকন বলেই চিনতেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়িতে তিনি কীটনাশক খান। তাঁকে মেমারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। রাতে তিনি মারা যান। চাষে ভয়ঙ্কর লোকসানের কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তারপর তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর নিজের ৭ বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছিলেন। প্রায় ২০০ বস্তা আলু হিমঘরে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু, দাম না মেলায় সেই আলু বিক্রি করতে পারেন নি। চলতি বছর তিনি সম পরিমাণ জমিতে আমন চাষও করেন। পোকার কারণে জমিতে ঠিকমতো ধান হয়নি। আমন চাষ করার জন্য তিনি বাজার থেকে টাকা ধার নেন। এছাড়াও তাঁর কৃষি সমবায়, ব্যাঙ্ক থেকেও প্রচুর টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তাঁর জামাই শেখ গোলেনুর হোসেন জানিয়েছেন দেনার পরিমান প্রায় ৫- ৬ লক্ষ টাকা। সেই বিপুল দেনা কিভাবে শোধ করবেন তাই নিয়েই দিনরাত চোখের পাতা কয়েকদিন ধরেই এক করতে পারছিলেন না। 
মৃতের ছেলে সৈয়দ আলাউদ্দিন বলেন, বাবা গতবছর আলু চাষ করেছিলেন। দাম না পাওয়ায় আলু বিক্রি করতে পারেন নি। এবারের আমন ধানও পোকার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। চাষ করার জন্য বাজার থেকে নেওয়া ধারের টাকা শোধ করতে না পেরে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মৃত্যুর আগে পরিবারের কাছে বলে গিয়েছিলেন অনেক আশা নিয়ে চাষ করেছিলাম কিন্তু বারে বারে চাষে লোকসানের কারণে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটা গাঁয়ে অসম্ভব হয়ে উঠেছিল, মহাজনরা বাড়িতে আসছিলেন টাকার তাগাদা করতে প্রবল চাপে মানসিক অবসাদে বাবা আত্মঘাতী হয়েছেন। 
আত্মঘাতী পরিবারের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়েছে এ ডি ও ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন কিভাবে মারা গেছেন সৈয়দ আব্দুল মোমিন। আমরা সবই তাঁকে জানিয়েছি, এবারও যদি সরকার এই মৃত্যুর দায় না নেয় তাহলে আর কত কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে আত্মঘাতী হলে মুখ্যমন্ত্রী মানবেন? 
জেলার কৃষি আধিকারিক আশিস বারুই বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ নিয়ে দেখছি। এপ্রসঙ্গে জেলার কৃষকসভার সম্পাদক সমর ঘোষ জানিয়েছেন, ওরা কৃষক মরে  গেলেও জানতে পারবে না। কৃষকের যন্ত্রণা গভীরতর হলেও মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ও তাঁর পরিবারকে বাঁচাতে ব্যস্ত। এ গাঁয়ের অধিকাংশ পরিবারই চাষের উপর নির্ভরশীল। কিছু মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে অন্য রাজ্যে কাজ করেন। গাঁয়ে কাজ নেই দীর্ঘদিন ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। জামালপুরের পারাতল-১ পঞ্চায়েতের পরিষেবা বলে কিছু নেই, আছে ভুরি ভুরি দুর্নীতি। ধান ও আলু দুটোই লোকসানে কৃষকের সামনে এখন গভীর অনিশ্চয়তা। বাজারে ৩০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে আলু অথচ আলু চাষী দাম না পেয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment