UTSAVE ANUVABE — MONDA MITHI — SOURAV DUTTA — Martin's Railways'e DURGA ASTO — NATUNPATA — 1 OCTOBER 2025, 3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে / মণ্ডা মিঠাই / সৌরভ দত্ত / মার্টিন রেলে — দুর্গা আসত / নতুনপাতা / ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

UTSAVE ANUVABE  MONDA MITHI  SOURAV DUTTA  Martins Railwayse DURGA ASTO  NATUNPATA  1 OCTOBER 2025 3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে  

মণ্ডা মিঠাই

মার্টিন রেলে — দুর্গা আসত 

সৌরভ দত্ত

নতুনপাতা

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
-------------------------------------

বসু বাটী — মাজু বসু পরিবার।সাবেকিয়ানায় ভরপুর ।ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যায় মাহিনগর‌ বসু সমাজ শাখার অন্তর্গত।বীজ পুরুষ দশরথ বসুর নাম।সেই মাহিনগর শাখার জাঙ্গীপাড়ার অযোধ্যা গ্রাম থেকে এলেন রামদুলাল বসু।বসতি স্থাপন করলেন কৌশিকী নদী তীরবর্তী মাজু গ্রামে আড়াইশো বছর আগে জগৎবল্লভপুরের মাজু জনপদে গড়ে তুললেন বিরাট বাগান বাড়ি।প্রতিষ্ঠা করলেন শ্রীধর জিউয়ের।রামদুলাল ছিলেন সরকার বংশের দৌহিত্র।যৌতূকসূত্রে কিছু ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন।১৯৪০-৫০ এর দশকে বাড়ির কিছু উৎসাহী চণ্ডী মণ্ডপে শুরু করলেন পারিবারিক দুর্গাপুজো। তখন মাজুতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ। স্বাধীনতা সংগ্রামী ভূপেন্দ্রনাথ, অমরেন্দ্রনাথ, বাসন্তী দেবী প্রমুখেরা এই পরিবারের লোক।মাজু আর.এন বসু হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রায় বরদা প্রসাদ বসু ছিলেন সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাবিদ। সাংবাদিক কানাইলাল বসু ছিলেন নেতাজী গবেষক।বাড়িতে যেহেতু শ্রীধর জিউয়ের বিগ্রহ আছে তাই সংস্কার বশত প্রথম বছর পুজো হয় স্থানীয় বিহারীলাল সরকারের বাড়িতে।প্রথম বছর পুজো হল টিমটিম করে।এরপর থেকে বসু বাড়িতে ধারাবাহিক পুজো হয়ে আসছে। গ্রামের আশেপাশে দুর্গাপুজো না থাকায় পুজো শুরু করেছিলেন পরিবারের উৎসাহী যুবক বিশ্বনাথ বসু,পরিমল বসু,সুশীল বসু,প্রভাত বসু , মনমোহন সরকার প্রমুখেরা ।মার্টিন ট্রেনে বেশ কয়েক বছর ঠাকুর এসেছে। বন্যার বছরেও নৌকা করে ঠাকুর এসেছে। মার্টিন ট্রেন ছিল যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। মার্টিন ট্রেনে কনকচূড় ধানে তৈরি মাজুর বিখ্যাত মিষ্টি শৈল ময়রা কাঁচের বাক্সের  করে বিক্রি করত। বাবার ক্যাম্বিসের ব্যাগে আজো মার্টিন ট্রেনের টিকিট রাখা আছে। কালের নিয়মে মার্টিন ট্রেন হারিয়ে গেলেও দক্ষিণ মাজুর,জালালসী সহ কয়েকটি জায়গায় ভাঙাচোরা মার্টিন স্টেশনের ফলক চোখে পড়ে।ময়দানের এখন যেখানে গ্রিন লাইন মেট্রো স্টেশন হয়েছে সেখানে একদা মার্টিন ট্রেন চলাচল করত। বহু পূর্বে জায়গাটা ছিল এক অবাঙালি ব্যক্তির বাজার। আমাদের ঠাকুর একচালের সিংহারোহিনী দশভূজা মূর্তি।ডাকের সাজের প্রতিমা তৈরি করত পাশ্ববর্তী গোবিন্দপুর গ্রামের পোটোপাড়ার অজিত মিস্ত্রী।ঠায় ঠাকুর দালানে ভিড় বাড়াত কচিকাঁচাদের।পাটকাঠি দিয়ে ত্রিশূলের মাপ নেওয়া হয়।পাট চাষ তখন ভালো হত আশপাশের গ্রামগুলোতে।পাটকাঠি নিয়ে খেলাধুলা চলত। চিলছাদে লুকোচুরি হত। ঘাটের চার কোনায় কোনকোনাচি খেলা হয়।প্যান্ডেলে লম্ফঝম্ফ। বাগানের বাতাবিলেবু ছিঁড়ে ফুটবল।নন্টে ফন্টে, হাঁদা ভোঁদা বেরোত। শুকতারা, চাঁদমামা পড়ার অপেক্ষায় থাকত সবাই। ক্যাপবন্দুক, গ্যাস বেলুন কেনার বায়না চলত। পুজোর সময় হাওয়াই মিঠাই,আখের রস বিক্রি হত দেদার। পুজোর সময় জাওয়া বাঁশে বোনা চুড়ি,কুনকে বিক্রি করত রায় পাড়ার দুএকজন।আগের পুজোয় রামকুমার চট্টোপাধ্যায়,জগন্ময় মিত্র,হেমন্ত মুখোপাধ্যায়,মান্নাদের প্রমুখের গান খুব চলত।মা-দিদিমারা নারকেল নাড়ু বানাত। ফলের ঘরে ফল রাখা থাকত।ডে-লাইটের আলোয় ড্রপসিন লাগিয়ে নিয়মিত নাটক , যাত্রা হত স্থানীয় এক ক্লাবের সহযোগিতায়।বুলু দাদু,রবি কাকা,টুনুমামা  অনেকেই রঙচঙে মেখে অভিনয় করতে।মা-বাবাও যাত্রা-নাটকে অংশ নিতে। দেওয়াল পত্রিকা বেরোত।বাড়ির মহিলাদের নাটক, যাত্রায় অংশগ্রহণ ছিল স্বতস্ফূর্ত।মণ্ডপে থাকত হ্যাজাকের আলো বা পরে বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি। মহালয়ায় দলবেঁধে জঙ্গল পরিষ্কার হয়।পুজোর সময় কানা মামা নামে খ্যাত মদন বাউল আসত পার্বতী নিতে।উৎসবে মানিক পীর এর ঘোড়া ছিল সম্প্রতির প্রতীক। তখন সারা গ্রামে দু তিনটে পুজো হয়।এখন ত্রিশটা পুজো।বড় বাজেটের পুজোও আছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা পায়ে হেঁটে দূর দূর ঠাকুর দেখতে যাওয়ার চল ছিল। রাস্তায় এখন টো টো গাড়ির রমরমা।প্যান্ডেলে ফ্লেক্স-ব্যানারের ছড়াছড়ি।সে সময় অষ্টমী-দশমীতে তাসের প্রতিযোগিতা চলত। বাড়ির কর্তারা ঠায় বসে থাকতেন চণ্ডী মণ্ডপে। বয়স্কদের মধ্যে হুঁকো -গড়াগড়া টানার চল ছিল। পেতলের পানের বাটায় খিলি করে পান রাখা থাকত লোকজনদের জন্য।ছাপা সন্দেশ আর নিমকি বাজার চল ছিল। কৌশিকী নদীতে বিসর্জন পর্ব মেটার পরস্পর আলিঙ্গন ও প্রণামের পর্ব মিটিয়ে কলাপাতায় দুর্গানাম লিখত বড় থেকে ছোটরা।গজা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে মারপিট খুনশুটি চলত।বসু পরিবারের পুজো স্মৃতিমাখা সময়ের কথাকে ধরে রাখে।এখন বসু বাড়ির ভদ্রাসন নব্য সংস্কারকৃত। সন্ধিপুজোয় এখনো পাড়ার মেয়ে বৌয়েরা দীপ জ্বালায়।শহর থেকে এসে পুজোয় মেতে পরিবারের আত্মজনেরা। নবপত্রিকা স্থান হয়।মণ্ডপে ঢাক-ঢোল বাজে। দর্শনার্থীদের মধ্যে ঠাকুর দেখার থেকে সেলফি তোলার ধূম চোখে পড়ে।দেওয়াল পত্রিকা বসুধারা প্রকাশ পায়। মাজু বসু পরিবার সম্মিলনীর নামে পুজো অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের পুজোয় প্রাচীন লোকায়ত সংস্কৃতি প্রায় শেষের মুখে।পুজো আসে পুজো যায় মার্টিন ট্রেনের ছবি ভেসে ওঠে।কালের ঝোপে হারিয়ে যায় অপুদুর্গার স্মৃতি।

Comments :0

Login to leave a comment