চিন্ময় কর: মেদিনীপুর
প্রসূতি মৃত্যুর তদন্তে মেদিনীপুর হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল রাজ্যের সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে চিকিৎসক, নার্সদের। বিষাক্ত স্যালাইন সরবরাহের ঘটনা চেপে দিতেই এই তৎপরতা কিনা, উঠছে সে প্রশ্নও।
বুধবার ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিকের নেতৃত্বে সিআইডির একটি দল এসেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। গত সোমবার সিআইডি তদন্তের ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই সঙ্গে ‘অস্ত্রপচারে গাফিলতির’ অভিযোগও তুলেছিলেন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
বুধবার সিআইডি’র একটি টিম মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি প্রসূতিদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছেন সিআইডি’র আধিকারিকরা।
এই হাসপাতালেই বিষাক্ত স্যালাইনে অসুস্থ হয়ে পড়েন একাধিক প্রসূতি। মৃত্যু হয় একজনের। তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় আনতে হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’ সংস্থার ‘রিঙ্গার্স ল্যাক্টেট’ ব্যবহারে সমস্যার কথা জানালেও সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ বন্ধ হয়নি।
মেদিনুপুর মেডিক্যাল কলেজে সেই প্রসূতিদের একজন রেখা সাউ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। জন্ম দিয়েছেন শিশুর। রেখার স্বামী সন্তোষ সাউ বলেন যে তিনি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনে দিয়েছিলেন বলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন স্ত্রী। কিন্তু এখনো শিশুকে দেখতে পাননি তিনি। শিশুও সঙ্কটজনক অবস্থায় আইসিসিইউ-তে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, বুধবার ভোর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগে ৭ জনের সিজ়ার হওয়ার কথা ছিল। একদম শেষে সিজ়ার হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার সন্তোষ সাউয়ের স্ত্রী রেখা সাউয়ের। সিজ়ারের আগে রাত ২টা নাগাদ বাইরে থেকে পাঁচটি স্যালাইনের বোতল এবং কিছু ইঞ্জেকশন ও ওষুধ কিনে এনে তিনি হাসপাতালের কর্মীদের দিয়েছিলেন বলে জানান সন্তোষ।
দেখা গিয়েছে, জাল স্যালাইন সহ এই হাসপাতালে সরবরাহ হয়েছে ওই সংস্থারই ১৩ ধরনের ওষুধ। সংস্থাটিকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরও এই সরবরাহ চালু রইল কিভাবে, তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে সংশ্লিষ্ট সব স্তর থেকে। তা না করে চিকিৎসক, নার্স এবং আধিকারিকদের তলব করা কেন সেই প্রশ্ন রয়েছে। দুর্নীতিচক্র আড়াল করতে রাজ্যের সিআইডি’র এই তৎপরতা কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলে।
গত বৃহস্পতিবার এক সঙ্গে প্রায় ৩৯ জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন এই হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে ৫ প্রসূতিকে তড়িঘড়ি আইসিসিইউ-তে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয় শুক্রবার। তিনজন কোমায় চলে যান। গত রবিবার তাঁদের কলকাতায় এসএসকেএম-এ পাঠানো হয়।
Comments :0