উৎসবের আলো আর জ্বলল না, পুজোর মুখে বন্ধ হয়ে গেল কালিম্পঙ জেলার গোরুবাথান ব্লকের লোয়ারফাগু চা বাগান ও আলিপুরদুয়ার জেলার কোহিনূর চা বাগান। শ্রমিক মহল্লায় এখন শুধুই উদ্বেগ। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন গুনছেন চা শ্রমিকরা। এর আগে বোনাসের দাবি জানিয়েছিলেন শ্রমিকরা, তা তো মিললই না, এবার সরকারের মদতে চা বাগানই বন্ধ করে দিল কর্তৃপক্ষ। গত ১১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গ সফর ছাড়ার পরেই চামুর্চি, রেড ব্যাঙ্ক ও সুরেন্দ্রনগর চা বাগান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে ৫টি চা বাগান বন্ধ হলো।
আলিপুরদুয়ারে কোহিনূর চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে ১৩০০ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়লেন। শুক্রবার সকালে রুটিন মেনে কাজে যোগ দিতে গিয়ে তাঁরা দেখেন কারখানার গেট বন্ধ। নিমেষে খবর ছড়িয়ে পড়ে সব চা মহল্লায়। সকলে ছুটে এসে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এদিন শামুকতলা থানায় শ্রমিকরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। দু’দিনের মধ্যেই সমাধান না হলে শ্রমিকরা বড়ো আন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ২০ শতাংশ বোনাস দিতে হবে। তখন একের পর এক বাগান বন্ধ করে রাতেই সরে পড়ছে মালিকপক্ষ। সরকার ও মালিকপক্ষের বোঝাপড়ায় এভাবে পর পর বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চা শ্রমিকদের সঙ্কট বেড়েই চলেছে। এই বাগানের শ্রমিকেরা কয়েক দিন থেকেই বোনাসের দাবিতে গেট মিটিং করেছেন। শ্রমিকদের বক্তব্য, বোনাস থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এই কৌশল মালিকপক্ষের।
একদিকে বাগান বন্ধ, ওদিকে একশো দিনের কাজ নেই, নেই পঞ্চায়েতেরও কাজ। শ্রমিক পরিবারগুলি হতাশায় দিশেহারা। চা গাছে নতুন পাতা আসতে শুরু করলে আবার মালিকপক্ষ আসবে শ্রমিকদের উপর অন্যায়ভাবে কাজের বোঝা চাপিয়ে বাধ্য করবে কাজ করতে, এমনই বক্তব্য চা শ্রমিকদের। তাঁদের বক্তব্য, এবার কিভাবে সংসার চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না।
আলিপুরদুয়ার জেলা সিআইটিইউ নেতা বিদ্যুৎ গুন বলেন, পরপর বাগান বন্ধ হলেও কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই বাগান সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চলছে। বাগানের শ্রমিকদের বোনাস সহ সব কিছুর দায়িত্ব মালিকপক্ষের। আর সেই শ্রমিকদের বাড়িঘর, ওষুধপত্র সবটাই সরকারের দেওয়ার কথা। কিন্তু কেউ কোনও দায়িত্ব পালন করছে না। মালিকপক্ষের সাথে এক হয়ে ছক কষে বাগান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে বন্ধ হয়ে গেল মাল ব্লক লাগোয়া কালিম্পঙ জেলার গোরুবাথান ব্লকের লোয়ারফাগু চা বাগানও। খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা স্থানীয় পান্ডারা মোরে লাভাগামী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দু’দিকে আটকা পড়ে বহু যানবাহন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন গোরুবাথান ব্লকের বিডিও শোভন দাস, এসডিপিও বিক্রমজিৎ লামা। তাঁরা ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এই চা বাগানে প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েকদিন যাবৎ বোনাসের দাবিতে চা বাগানে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছিল। শুক্রবার রাতে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক সাসপেনশনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে চা বাগান ছেড়ে চলে যায়।
চা বাগানের শ্রমিক নেতা রমেশ থাপা বলেন, রাজ্য সরকার ২০ শতাংশ হারে সমস্ত চা বাগানে বোনাস দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমাদের চা বাগান কর্তৃপক্ষ ১১ শতাংশের বেশি দিতে রাজি হয়নি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা ম্যানেজারকে বোনাস দেওয়ার কথা জানালে ম্যানেজার ১১ শতাংশ হারের বেশি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। এতে শ্রমিক বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। শুক্রবার বিডিও অফিসে বৈঠক হয়। সেখানেও ম্যানেজার বর্তমানে ১১ শতাংশ ও পরে ৫ শতাংশ দেওয়ার কথা বলেন। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আবারও ২০ শতাংশ একবারে দেওয়ার কথা জানাই। শনিবার সকালে আমরা দেখছি ওয়ার্ক সাসপেনশন নোটিস দিয়ে ম্যানেজার বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের এই আচরণ অনৈতিক।
বাগান বন্ধ হতেই চা বাগানে শ্রমিকরা লাভাগামী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এবং ২০ শতাংশ হারে বোনাসের দাবি তোলেন। গোরুবাথানের বিডিও এবং এসডিপিও কয়েক ঘণ্টা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রশমিত করেন। দুপুর একটা নাগাদ পথ অবরোধ উঠে যায়, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অপরদিকে মাল ব্লকের সাইলি চা বাগানের শ্রমিকরা ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে সকাল থেকে কারখানার গেটের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জানা গিয়েছে, এই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ১৫ শতাংশ হারে বোনাস দিয়ে দিয়েছেন। বাকিটা পরে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকরা তা মানতে চাননি। শ্রমিকদের বক্তব্য, পরে কেন, এখনই ২০ শতাংশ হারে বোনাস দিতে হবে।
Tea Garden
কালিম্পঙ, আলিপুরদুয়ারে বন্ধ হয়ে গেল আরও ২ চা বাগান

×
Comments :0