Editorial

উৎসবের আড়ালে

সম্পাদকীয় বিভাগ

আর জি করকাণ্ডে ন্যায় বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের তীব্রতা ও ব্যাপকতা যত বাড়বে ততই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতি ও লুটতন্ত্রের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে। শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রই নয় একে একে খুলবে প্যান্ডারার বাক্স। দেখার বিষয় মমতা ব্যানার্জির সরকারের এমন কোনও দপ্তর বা মন্ত্রক নেই যেখানে চুরি-দুর্নীতিই নীতি হয়ে ওঠেনি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়ে এবং বরাভয়ে সর্বত্র বাসা বেঁধেছে ঘুঘুরা। এই রাজ্যের সরকারি ব্যবস্থায় এখন আর রীতি, নিয়ম, বিধি বলে কিছু নেই। যা আছে তা অনিয়ম। প্রশাসনের সর্বত্র এমনভাবে দলতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে যে  সরকারটাই দল হয়ে গেছে। আর সেই দলের লাগাম রয়েছে লুটতন্ত্রের মাথাদের হাতে। সরকারকে ব্যবহার করে শিক্ষাক্ষেত্রে শত শত কোটি টাকা তোলার যে নিখুঁত নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে তার নমুনা ইতিমধ্যেই মানুষের গোচরে এসেছে। ১০০ দিনের কাজ, গৃহনির্মাণ প্রকল্প, বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ, রেশন ইত্যাদি এমন কোনও সরকারি প্রকল্প নেই যেখান থেকে তৃণমূলী নেতারা টাকা কামায় না। রাজ্য সরকারটাই এখন হয়ে গেছে তৃণমূলীদের অসৎ পথে মোটা টাকা রোজগারের প্ল্যাটফর্ম।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই নোংরামি গ্রাস করেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। চিকিৎসা পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা পুরোপুরিই এখন অপরাধ চক্রের খপ্পরে। বাইরে বড় বড় ভবন তৈরি হচ্ছে, চোখ ধাঁধানো তোরণ হচ্ছে, পাথর-টাইলসে সাজানো হচ্ছে, নীল-সাদা রং হচ্ছে। অর্থাৎ বাইরে জলুস আর ভেতরে কঙ্কালসার চেহারা। পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, নার্স নেই, স্বাস্থ্যকর্মী নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই, সরঞ্জাম নেই। যা আছে সেগুলির বেশিটাই টেন্ডার ছাড়া বেশি দামে কিনে পরোক্ষে টাকা কামানোর ব্যবস্থা। একটা মেডিক্যাুল কলেজ হতে ন্যূনতম যে পরিকাঠামো দরকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার কিছুই প্রায় নেই। ফলে পড়াশুনা সব শিকেয়। শিক্ষক নেই, শ্রেণিকক্ষ নেই। এই নেই রাজ্যে আছে তৃণমূলের দাপট আর মাতব্বরি। ডাক্তারি পড়ুয়াদের এক ভয়ের পরিবেশে বন্দি করে তৃণমূলী নেতাদের হুকুমের চাকর বানিয়ে রাখা হয়। কথা মতো না চললে, টাকার জোগান না দিলে পাশ করা কঠিন। টাকা দিয়ে ক্লাস না করে পরীক্ষায় বসা যায়, টাকা দিয়ে প্রশ্ন কেনা যায়, কেনা যায় উত্তরপত্রও। টাকা দিয়ে ফেল করা ছাত্র অনেক বেশি নম্বর পেতে পারে। আবার মেধাবী ছাত্ররা ফেলও করে যেতে পারে। তাছাড়া অপমান, নির্যাতন, হয়রানি তো আছেই।
মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন না এর সবটা মানুষের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাক। তাই তিনি শোক পর্বের অবসান ঘটিয়ে, আন্দোলনে দড়ি টেনে উৎসবে-আনন্দে মাততে বলেছেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি খেলা-মেলা, উৎসব, পুজো, আনন্দের মদিরায় মানুষকে বুঁদ করে রাখতে চাইছে। সরকারের অর্ধেক টাকা ঢালা হয় এই সব খাতে। কারণ তিনি জানেন মানুষ‍‌কে যত বেশি উৎসবে, ফুর্তিতে মাতিয়ে রাখা যাবে ততই চুরি-দুর্নীতি আড়ালে থাকবে। মানুষ বাইরে উৎসব করবে, আর তৃণমূল ভেতরে লুটেপুটে খেয়ে রাজ্যটাকে নিঃস্ব করবে।

Comments :0

Login to leave a comment