Howrah CPIM

ঘরছাড়াদের ফেরাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি

রাজ্য

শুভাশিস দেব সরকার  

মমতা ব্যানার্জির দলের শাসনকালে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভিটেমাটি হারিয়ে ঘরছাড়া তাঁরা। ‘অপরাধ’ শত অত্যাচারেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। শুধুমাত্র একটি অঞ্চল থেকেও পাঁচশোর বেশি সিপিআই(এম) কর্মী, সমর্থক ঘরছাড়া। প্রায় যাযাবর জীবন কাটানো সেই ঘরছাড়াদের সঙ্গে নিয়ে তাঁদেরই গ্রামে মিছিল, নেতৃত্ব দিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সন্ত্রাস, ভয়, বাধা উপেক্ষা করেই দীর্ঘদিন বাদে এলাকার লাল ঝান্ডার সেই মিছিল দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলেন গ্রামবাসীরাও। 
আর তাতেই যেন সিঁদুরে মেঘ দেখলো শাসক দল তৃণমূল ও পুলিশ। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরা আটকাতে বারেবারে বাধা দিলো তৃণমূল-পুলিশ যৌথ বাহিনী। বারে বারে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়াতে হলো মহম্মদ সেলিম, পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, পার্টিনেতা পরেশ পাল, তরুণ ব্যানার্জি , দীপক দাশগুপ্ত, আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জি  সহ নেতৃত্বকে। পুলিশের বাধা, তৃণমূলের হুমকি, গালিগালাজ উপেক্ষা করেই লাল ঝান্ডার দৃপ্ত মিছিল দেখল আমতার চন্দ্রপুর অঞ্চলের বাসিন্দারা।
শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হুমকি, পুলিশের প্রকাশ্য বাধা সত্ত্বেও মিছিলে পা মেলালেন চন্দ্রপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষজন। মিছিল যত এগিয়েছে মিছিলের চেহারা ততই বেড়েছ। শান্তিপূর্ণ মিছিলে বারেবারে প্ররোচনা ছড়িয়ে এলাকায় উত্তেজনা তৈরির চেষ্টাও চালায় তৃণমূলী বাহিনী, তাতে একেবারে শাসক তৃণমূলের কর্মীর মতোই মদত দিতে থাকে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ বাহিনী। ঘরছাড়াদের বাড়ি ফেরা আটকাতে বারেবারে যে বাসে করে ফিরছিলেন ঘরছাড়া শতাধিক পুরুষ, মহিলা শিশু তা আটকায় পুলিশ। বারেবারে বাস থেকেই নেমেই পুলিশের সঙ্গে তর্ক, বচসায় জড়াতে হয়ে মহম্মদ সেলিমকে। একেবারে দুষ্কৃতীদের হয়েই ঘরছাড়া মানুষদের ঘরে ফেরা আটকাতে নেমে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের অসহযোগিতার ফলে রবিবার নিজেদের ঘরে ফিরতে পারলেন না ঘরছাড়া বামপন্থী কর্মীরা।


ঘরছাড়ারা নিজেদের ঘরে শান্তিতে বসবাস করবেন, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা পুলিশকে করতে হবে, শেষপর্যন্ত পার্টি নেতৃত্বের দাবি পুলিশ মানতে বাধ্য হয় এবং নেতৃবৃন্দকে পুলিশ আশ্বস্ত করেছেন এক সপ্তাহের মধ্যে ঘরছাড়াদের নিয়ে স্থানীয় থানায় সভা করে তাঁদের প্রত্যেককে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে ও নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করবে পুলিশ। যদিও পুলিশ প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন গ্রামের সাধারণ মানুষও। আমতা থানা যে তৃণমূলের দলীয় অফিসে পরিণত হয়েছে সেই অভিযোগও করেন গ্রামের একেবারে সাধারণ মানুষজন। আনিস খান হত্যাকাণ্ডে এই আমতা থানার ভূমিকা দেখেছে গোটা রাজ্যের মানুষই।
শুধুমাত্র চন্দ্রপুর গ্রামে মিছিল ঠেকাতে তৃণমূলীদের হুমকি, প্ররোচনা ও পুলিশি মদত নয়, উলুবেড়িয়া থেকে ঘরছাড়াদের নিয়ে আসা দুটি বাসকেও বারেবারে আটকায় পুলিশ প্রশাসন।
এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ উলুবেড়িয়া থেকে ঘরছাড়াদের নিয়ে দুটি বাস আমতার চন্দ্রপুরে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু মাঝ রাস্তাতেই নারকলতলা সামনে সেই বাস দুটি আটকে দেয় পুলিশ। কোনও কারণ ছাড়াই বাস দুটি আটকে দেওয়া হয়। খবর পেয়েই এরপর সেখানে তড়িঘড়ি পৌঁছান মহম্মদ সেলিম সহ পার্টি নেতৃত্ব, ছিলেন আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জিও। মহম্মদ সেলিম সরাসরি পুলিশকে প্রশ্ন করেন কোনও আইনে বাস আটকে দেওয়া হলো, রাস্তা দিয়ে সব বাসই কি আটকে দেওয়া হচ্ছে? তাহলে নির্দিষ্ট আমাদের দুটি বাস আটকে দেওয়া হলো কেন? পুলিশ স্বাভাবিকভাবেই কোনও উত্তর দিতে পারেনি। আমতা থানার পুলিশ এরপর জানায় বাসে যারা আছে তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, ফলে তাঁরা তাঁদের গ্রামে যেতে পারবে না।


পুলিশের গলায় তখন একেবারে তৃণমূলের মাতব্বরদের সুর। পালটা মহম্মদ সেলিম বলেন, এফআইআরে নাম থাকলে সে দোষী বা এলাকায় থাকতে পারবে না কোথয় ঠিক হয়েছে,,আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ তাহলে এতদিনে কিছু করেনি কেন, আসলে এটা প্রতিহিংসা। পুলিশ তৃণমূলের দলদাসের নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের তরফে কোনও নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হয়নি, যদিও তারা ক্রমাগত বাধা দিতে থাকেন। এরপরে মহম্মদ সেলিম সহ নেতৃত্ব ঘরছাড়াদের বাসেই উঠে পড়েন, বাসে করেই এগোতে থাকেন চন্দ্রপুরের দিকে। বাস চলতে শুরু করে। মিনিট পনেরো যাওয়ার পরেই ফের ১০ নম্বর পোলের কাছে পুলিশ ঘরছাড়াদের ওই বাস দুটিকে আটকায়। সেই একই ঘটনা। কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ বাস দুটোকে আটকায়। সেখানে চলেই দীর্ঘ বচসা। শেষমেষ ফের বাসে করেই  ঘরছাড়াদের সঙ্গে নিয়েই  চন্দ্রপুর অঞ্চলে এসে পৌঁছান মহম্মদ সেলিম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সহ নেতৃত্ব। 
এরপর বাস থেকে নেমে ঘরছাড়াদের সঙ্গে নিয়েই শুরু হয় লাল ঝান্ডার মিছিল প্রায় এক দশক পরে। দীর্ঘদিন বাদে এমন মিছিল সাধারণ মানুষও বিকাল বেলায় ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। গ্রামের ভিতর দিয়ে মিছিল এগোতে শুরু করেন। চন্দ্রপুর অঞ্চলে তৃণমূলের  অফিসের সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময়ে মিছিলে থাকা নেতৃত্ব ও ঘরছাড়া মানুষদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর স্লোগান দিতে থাকে শাসক দলের কর্মীরা। তৃণমূলের উন্মত্ত দুষ্কৃতীদের পাশেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে পুলিশ। তাদেরকে দূরে সরিয়ে না দিয়ে বরং ঐ প্ররোচনার স্লোগান দিতে উৎসাহিত করতে দেখা যায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। যদিও প্ররোচনা এড়িয়েই মিছিল গ্রামের ভিতরে যায়। সেখানেও পিছনে পিছনে তৃণমূলী বাহিনী হুমকি দিতে দিতে এগোয়। ঘরছাড়ারা ঘরে ফিরলেও ফের নতুন করে হামলার হুমকিও দিতে থাকে তৃণমূলীরা। শেষমেষ বড় ধরনের অশান্তি এড়াতে, ঘরছাড়া মানুষদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ঘরছাড়া মানুষদের ঘরে ফেরানোর প্রক্রিয়ার কিছুটা বদল করা হয়। পুলিশকেই দায়িত্ব নিতে হবে গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা, নেতৃত্বের এই দাবি মানতে বাধ্য হয় পুলিশ প্রশাসনও।

Comments :0

Login to leave a comment