সোমবার কাতারের খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে গ্রুপ-বি’র ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ইরান। ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়। স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শককে অবাক করে দিয়ে জাতীয় সঙ্গীত বয়কট করে গোটা ইরানীয় দল। ‘ন্যাশনাল অ্যান্থেম’ চলাকালীন গম্ভীর মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় ‘টিম ইরান’কে। মাঠের ‘বিপ্লবের’ রেশ ছড়িয়ে পড়ে ইরানের রিজার্ভ বেঞ্চেও। বেঞ্চে থাকা কোনও খেলোয়াড়ও জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলাননি। মাঠের এই দৃশ্য গ্যালারিতে বাঁধভাঙা আবেগের জন্ম দেয়।
‘সঠিক’ ভাবে হিজাব না পরার অপরাধে, ১৬সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশের হাতে খুন হন ২২ বছরের যুবতী মাহসা আমিনি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। কট্টরপন্থী ইসলামিক শাসকদের বিরুদ্ধে সেদেশের তরুণ প্রজন্ম পথে নেমেছে। রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শহীদের মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০০’র বেশি আন্দোলনকারী। মহিলারা হিজাব পরবেন কিনা, সেটা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। তাঁদের উপর কোনও পোষাক বিধি চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। আন্দোলনের ফলে ইরান জুড়ে জোরালো হয়েছে এই মনোভাব।
ইরান টিম সূত্রে খবর, আন্দোলনের সেই বার্তাকে সহমর্মিতা জানাতেই জাতীয় সঙ্গীত ‘বয়কট’র পথে হেঁটেছেন তাঁরা।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, মঙ্গলবার ‘অসমসাহসী’ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইরানের খেলোয়াড়রা। সেদেশের কট্টরপন্থী শাসকদের বিরুদ্ধে কার্যত ‘জেহাদ’ ঘোষণা করেছে গোটা ইরান ফুটবল দল। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে তাঁদের প্রশাসনিক হেনস্তার মুখোমুখি হতে হবে, রয়েছে আশঙ্কা। সব জেনেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এহসান হাজিসাফি, আলিরেজা জাহানবক্শরা। যা সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে আলোড়ন তৈরি করেছে।
এদিনের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬-২ গোলে পরাজিত হলেও লড়াকু ফুটবল উপহার দেয় ইরান। মাঠে এবং মাঠের বাইরে ইরানীয়দের লড়াকু মানসিকা গোটা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে।
Comments :0