CPI-M Purulia District Conference

অর্জিত অধিকার বিপন্ন, আনতে হবে প্রচারে: পুরুলিয়া জেলা সম্মেলনে সুজন চক্রবর্তী

রাজ্য জেলা

শনিবার সিপিআই(এম) পুরুলিয়া জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছেন সুজন চক্রবর্তী। ছবি: ভাস্কর দাশগুপ্ত

সত্যব্রত ভট্টাচার্য: পুরুলিয়া

মূল মঞ্চের চার ধারে পোস্টারে জ্বলজ্বল করছে -'ফ্যাসিস্টদের একমাত্র কমিউনিস্টরাই ধ্বংস করতে পারে, এটাই ইতিহাস।' লেখা- 'ধর্ম- বর্ণ - জাতি আপনার ভাতের জোগান দেয় না, আপনাদের পরিশ্রম করেই রোজগার করতে হয়। তাই লড়াইটা হোক ভাতের জন্য, জাতের জন্য নয়।' 
প্রয়াত কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতিকৃতিও রয়েছে মঞ্চে। স্মরণ করা হয়েছে কমরেড বাসুদেব আচরিয়াকেও। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হলো সিপিআই(এম) পুরুলিয়া জেলা ২২ তম সম্মেলন।
শনিবার পুরুলিয়ার জয়পুরে সম্মেলনের উদ্বোধন করে সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, জমি-পাট্টা-বামফ্রন্ট সরকার সাধারণ গরিব মানুষকে যে অধিকার দিয়েছে, সেই অধিকার বিপন্ন হয়ে গেছে। তৃণমূল গোটা রাজ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে- এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কাছে। আরও বেশি করে মতাদর্শের চর্চা করতে হবে।  
তিনি বলেন, মানুষের অধিকারকে দমিয়ে দিয়ে প্রজা বানাতে চায় কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল। মানুষের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া তীব্র। তাঁদের মনের গভীরে ঢুকে তা বুঝতে হবে আমাদের। সংখ্যালঘু দুর্বল মানুষকে রক্ষা করতে হবে। মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই মানে শুধু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই নয়, পুঁজির স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেও লড়াই। জীবন জীবিকা, রুজি রোজগারের প্রশ্নে সংবিধান মানুষকে যে অধিকার দিয়েছে, সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে বিপন্ন মানুষকে।
এদিন সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন করেন, প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা নিখিল মুখার্জি। শহীদ বেদিতে ম্যালদানের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের সূচনা হয়। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র, দেবলীনা হেমব্রম পার্টিনেতা অজিত পতি, বিলাসিবালা সহিস, প্রদীপ সরকার, পুলিন বিহারী বাস্কে, সুদীপ সেনগুপ্ত প্রমুখ। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন পার্টির পুরুলিয়া জেলার বিদায়ী সম্পাদক প্রদীপ রায়। শোক প্রস্তাব পেশ করেন কাশীনাথ ব্যানার্জি। সম্মেলন পরিচালনা করেন সাম্য পিয়ারী মাহাতো, মহম্মদ ইব্রাহিম, কাশীনাথ ব্যানার্জি, কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, রতু বিশ্বাসকে নিয়ে গঠিত এক সভাপতি মন্ডলী।
পুরুলিয়ার জয়পুরে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগরে এই সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। মঞ্চ হয়েছে কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার নামে। পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া- রাঁচি সড়ক পথের ওপরেই তৈরি হয়েছে বিশাল লাল তোরণ। লাল ঝান্ডায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। রবিবার সম্মেলনের শেষ দিন হবে প্রকাশ্য সমাবেশ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সুজন চক্রবর্তী পুরুলিয়া জেলার বৈচিত্র্য তুলে ধরে বলেন, তপশিলি, আদিবাসী, নানান মানুষের নানা চাহিদা আছে। তাঁদের মনের মধ্যে বিজেপি বিষ ছড়াচ্ছে ভেতরে ভেতরে। সাহায্য করছে তৃণমূল। শুধু পাহাড়, জঙ্গল, জমি, নদী বিক্রি করে দেওয়া নয়, আক্রমণ হচ্ছে মানুষের চিন্তার জগতে। 
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে রাত দখল হয়েছিল, তা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর আমাদের ভিত্তি। পার্টিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, নবীন প্রজন্মকে আরও বেশি করে চাই। 
সম্পাদকীয় বক্তব্য পেশ করে প্রদীপ রায় বলেন, আমাদের ওপর একের পর এক আক্রমণ হয়েছে। আমরা লড়াই করেছি। জেলার গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে আন্দোলন সংগ্রাম আরও জোরদার করতে হবে। শক্তিশালী ধারাবাহিক আন্দোলন হলে তার একটা ফল পাওয়া যায়। পঞ্চায়েতের লড়াইতে আমরা তা দেখেছি। পাথর খাদান, পাহাড়, জঙ্গল, জমি রক্ষা করতে মহিলারা অনেক বেশি করে পথে নামছেন, যেমন আঘরপুর ডুংড়ি। সাহস করে পঞ্চায়েতেও লড়াই করেছেন মহিলারা। এটা আশার কথা  একে  আরও বেশি উৎসাহিত করতে হবে।
প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এসেছে আরএসএস-তৃণমূলের বোঝাপড়ার কথা। তাঁরা বলেছেন, যাঁদের জমিতে শিল্প হয়েছে সেই পরিবারে চাকরি হচ্ছে না।  রঘুনাথপুরে এমন অসংখ্য নমুনা রয়েছে। সরকারি মদত ছাড়া এসব হয় না। আন্দোলন জরুরি। কেন্দুপাতা, শালপাতা শিল্পের মতো কুটির শিল্প শেষ করে দিচ্ছে সরকার। এসবের বিরুদ্ধে আরও জোরদার আন্দোলন করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment