STATE GOVERNMENT EMPLOYEES MOVEMENT

৯ মার্চ ধর্মঘটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা

রাজ্য জেলা কলকাতা

government employees dearness allowance state government employees bengali news শহীদ মিনারের মঞ্চে বৈঠক করছেন দুই যৌথমঞ্চের নেতৃবৃন্দ।

বকেয়া ডিএ’র দাবিতে ৯ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিলেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। মঙ্গলবার কলকাতার শহীদ মিনার ময়দানের আন্দোলন মঞ্চে যৌথ সভা করেন সংগ্রামী যৌথমঞ্চ এবং রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃত্বাধীন যৌথমঞ্চ। দুটি যৌথমঞ্চের সভা থেকে তিন দফা দাবির ভিত্তিতে ৯ মার্চ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৮টা নাগাদ রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারের অবস্থান স্থলে পৌঁছন। দুই যৌথমঞ্চের নেতৃবৃন্দ নিজেদের মধ্যে ১ ঘন্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা চালান। তারপর ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সোমবার এবং মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাক দেয় সংগ্রামী যৌথমঞ্চ।  এই কর্মবিরতী রুখতে রবিবার নির্দেশিকা জারি করেন অর্থদপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থ। সরকারি কর্মচারীদের উপর ‘ডায়াস-নন’ বা চাকরি জীবন থেকে কর্মদিবস ছেদের হুমকিও দেওয়া হয় নির্দেশিকায়। প্রসঙ্গত, কোনও সরকারি কর্মচারি গুরুতর কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তবেই তাঁর বিরুদ্ধে ‘ডায়াস-নন’ কার্যকরী করা হয়। যদিও ২০১১ সাল থেকে সরকারি কর্মচারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করতে বারবার ডায়াস নন বলবৎ করার হুমকি দিয়ে এসেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার।

কিন্তু সরকারি হুমকি উড়িয়ে দিয়েই সোমবার এবং মঙ্গলবার রাজ্যের সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি দপ্তর, আদালত সহ সমস্ত সরকারি ক্ষেত্রে পেন ডাউনের পথে হাঁটেন মধ্যবিত্ত সরকারি কর্মচারীরা।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃত্বাধীন যৌথমঞ্চের তরফে মঙ্গলবার পেন ডাউনের ডাক দেওয়া হয়েছিল রাজ্য জুড়ে। দুই যৌথমঞ্চের আন্দোলনের ফলে মঙ্গলবার কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় রাজ্য প্রশাসন।

একইসঙ্গে ২৩ মার্চ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দুই ধর্মঘটের চাপে সরকার যে বেকায়দায় পড়েছে, তা মঙ্গলবার স্পষ্ট হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়।

এদিন শিলিগুড়ির সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার বলে যাচ্ছিকোনও বন্‌ধ-টনধ হবে না। আমরা বন্‌ধ সমর্থন করি না। এটা আমাদের নীতি। ১১ বছরে এটা আমরা দেখিয়েছি।’’

এরইসঙ্গে হুঁশিয়ারির সুরে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘আগামীকালধরতে পারেন আজ থেকেই বাইরে কোনও কর্মসূচি করা যাবে না। কেউ ভুলেও একাজ করতে যাবেন না। কেউ কেউ আছে বছরে একবার বন্‌ধ করে। সেই রাজনীতি এখান থেকে উঠে গেছে। বাংলায় আমরা বন্‌ধ-টনধ করতে দিই না।’’

প্রসঙ্গত, রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রীর চিরকুট দেখে তিন শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই সরকারি রসিকতায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পাওয়া কর্মচারীরা। শুরু হয় আন্দোলন। ৩২টি সংগঠনের জোট বা সংগ্রামী যৌথমঞ্চের তরফে কলকাতার শহীদ মিনার ময়দানের সামনে ২৬ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। ১২দিন ধরে চলছে অনশন।

মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির পরেই মঙ্গলবার রাজ্যের বহু জায়গায় কর্মবিরতি পালন করতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়তে হয় শিক্ষক-কর্মচারী সহ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের। ভাঙড় বালিকা বিদ্যালয়, বামনঘাটা হাইস্কুলে কর্মবিরতি পালন করা শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের উপর চড়াও হয় তৃণমূলী বাহিনী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসক দপ্তরের ক্যাম্পাসে কর্মবিরতিতে সামিল কর্মচারী দের উপর তৃণমূল আশ্রিত ঠিকাদারের বাহিনী আক্রমণ চালায়। বেশ কিছু জায়গায় আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান তৃণমূলের সমর্থক সরকারি কর্মচারীরা। কিন্তু তারপরেও রাজ্যের প্রতি প্রান্তে কর্মবিরতি পালন করেন সরকারি কর্মচারীরা। 

২০২০ সালে মাত্র ৩শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। তারপর থেকে সাড়ে তিন বছর পার করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আবার মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে এরাজ্যের কর্মচারীদের ডিএর ফারাক এখন ৩৫শতাংশ। শুধু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরাই নয়গোটা দেশের বাকি রাজ্যগুলির তুলনায় ডিএ বঞ্চনায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। দেশের মধ্যে ঋণের তালিকায় শীর্ষে থাকা পাঞ্জাবের সরকারি কর্মচারী এখন ২৮শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন।

এরাজ্যের কর্মচারীদের ডিএ থেকে সীমাহীন বঞ্চিত রেখে এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছেন‘‘টাকা নেইপয়সা নেই (রাজ্যের)। কারোর টাকা বন্ধ হয়েছেকোনও সরকারি কর্মচারীর টাকা বন্ধ হয়েছেকোনও টিচারের টাকা বন্ধ হয়েছে?’’

এমনকি ৩ শতাংশ ডিএ কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন‘‘বছর বছর ৩ শতাংশ ডিএ আমরা দিই। এই কবছরে ডিএ দিতে ১লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে।’’

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রকাশ্য সভায় ডিএ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর টাকা খরচের এই হিসাব দিয়ে আসলে জনমানসে সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। এরাজ্যে বর্তমানে ডিএ দিতে সরকারের খরচ হয় মাসে ৬৪ কোটি টাকা। ফলে সরকারের বছরে সর্বোচ্চ ২৩০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। অথচ ১ লক্ষ কোটি টাকার হিসাব দিয়ে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করার রাস্তায় নিয়ে যেতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি।

 

Comments :0

Login to leave a comment