ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো আরও এক জনের। দক্ষিণ দমদম পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা সমাপ্তি মল্লিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালো মাত্র ২০ বছর বয়সে। ডেঙ্গু মোকাবিলা আগামী দু সপ্তাহ সর্বস্তরের প্রশাসনিক কর্তাদের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকার রাজ্য সরকারের নির্দেশের মধ্যেই ডেঙ্গু বাড়ছে উদ্বেগজনক ভাবে! জানা গেছে, মৃত সমাপ্তি মল্লিক দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের এমএম ঘোষ রোডের বাসিন্দা ছিলেন। কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। স্থানীয় চিকিৎসকরের পরামর্শে চিকিৎসা চলছিল। তাঁর রক্ত পরিক্ষীর রিপোর্টে জানা যায় তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। তাঁকে নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গভীর রাতে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গুর কথা উল্লেখ রয়েছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু অর্ধ শতক ছাড়িয়ে আরও বাড়ছে ক্রমশ। এদিকে প্রতিদিন প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ মানুষ রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলছেন বলে বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে।
কলকাতা এবং শহরতলির পাশাপাশি ডেঙ্গু মারাত্মক চেহারা নিয়েছে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায়। কলকাতা পৌরসভার পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ভূমিকায় ক্ষোভ রয়েছে সর্বত্র। অক্টোবর মাস শুরু হলেও ডেঙ্গু প্রকোপ কমার এখনও কোন ইঙ্গিত মিলছে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হবার খবর মিলছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। মুখে ডেঙ্গু কমে গেছে বলে প্রচার করে এখন ডেঙ্গু নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক করছে রাজ্য প্রশাসন। এদিকে হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা, সঙ্গী এবার ম্যালেরিয়াও। ভয়াবহ ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের ব্যর্থতাই দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা সহ জেলাগুলিতে। চলতি মরশুমে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজারের আশেপাশে। ডেঙ্গুতে এপর্যন্ত অন্তত ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে এই মুহূর্তে রাজ্যের কোনও হাসপাতালে কত শয্যা খালি আছে তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্যই নেই সরকারের হাতে। রাজ্য সরকারের তরফে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হচ্ছে না।
গোটা রাজ্যের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে আলিপুরদুয়ারের বাড়ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ! গত তিনদিনে কোচবিহার জেলা নতুন করে ১৫ জনের দেহে ডেঙ্গুর জীবানু মিলেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে আড়াইশো ছাড়িয়ে গেছে।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর কোচবিহারে ৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। এ যাবৎ জেলা মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৮ জন। শনিবারেও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ জন আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে দিনহাটা ও মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে ৩ জন করে রোগী ভর্তি রয়েছে। বাকি মহকুমা গুলিতেও রয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি চলতি বছরে জেলা ডেঙ্গুতে কারুর মৃত্যু হ নি।
আলিপুরদুয়ার জেলাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৪৩৩ জনে পৌঁছেছে! মাদারিহাট ব্লকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সব চাইতে বেশি। তবে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে চিন্তা ফেলেছে ফালাকাটা ব্লক। এই ব্লকের বাগানবাড়ি এলাকা ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এই এলাকা বাড়তি নজরদারি রয়েছে বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের।
Comments :0