EDITORIAL

রেউড়ি মোদী

সম্পাদকীয় বিভাগ

গরিব ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের সরকারি উদ্যোগে ভরতুকি দিয়ে বিভিন্ন জরুরি পণ্য ও পরিষেবা সস্তায় সরবরাহ করা এবং নানা খাতে আর্থিক অনুদান দেওয়াকে রেউড়ি সংস্কৃতি বলে একদা ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরজন্য বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় বিস্তর আক্রমণও করেছেন। আজ বিপদে পড়ে সেই নরেন্দ্র মোদীই দু’হাতে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন সেই রেউড়ি সংস্কৃতিকে। নরেন্দ্র মোদীর এহেন ভোল বদল ‘গুঁতোয় বেড়াল গাছে ওঠার’ সঙ্গে তুলনীয় হবে না মাটিতে থুথু ফেলে জিব দিয়ে চেটে পরিষ্কার করার সঙ্গে সেটা নিয়ে বিতর্ক আপাতত তোলা থক। এখন এটাই নির্ভেজাল সত্য যে পাঁচ রাজ্যে ভোটের বাজারে পরাজর হাতছানি এতটাই আতঙ্কের জমি তৈরি করেছে যে ভোট কেনার জন্য দু’হাতে টাকা বিলানো বা প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি বিলোনো ছাড়া গত্যন্তর নেই। যে মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে সাড়ে চারশো টাকার রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বাড়াতে বাড়াতে ১১০০ টাকার উপরে নিয়ে গিয়েছেন সেই কেন্দ্রীয় শাসক দল এবং রাজ্য নির্বাচনে সাড়ে চারশো টাকায় সিলিন্ডার দেবার কথা তাদের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে ঘোষণা করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী সকাল-দুপুর-সন্ধে এখন অনর্গল দলিত-গরিব মানুষের দুঃখে কেঁদে ভাসাচ্ছেন। সাড়ে ৯ বছর ধরে গরিব দলিত আদিবাসীদের কথা ঘুণাক্ষরেও মনে পড়েনি। তখন তিনি হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব বাধাতেই ব্যস্ত ছিলেন। মোদী জমানায় লাগাতার জিনিসপত্রের উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির হার বজায় থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন শিথিল করে দিয়ে মূল্যবৃদ্ধির জমি তৈরি করে দিয়েছেন কর্পোরেট-ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে। পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের ভরতুকি তুলে দিয়ে দেড়গুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, যার ফলে উচ্চমূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে ওঠে। নোট বাতিল এবং জিএসটি চালু করে ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং ছোট ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়েছেন। আজও তারা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এমনভাবে পূনর্বিন্যাস করেছেন যাতে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সম্পদের সবটাই প্রায় চলে যায় বড় শিল্পপতি ও বড়লোকদের ঘরে। ছিটেফোঁটা কিছু পড়ে থাকে সাধারণের জন্য। ফলত সম্পদ ও আয় বৈষম্য তীব্র আকার নিয়েছে এই জমানায় যা অতীতে কোনোদিন দেখা যায়নি। মোদীর কৃতিত্ব তিনি ভারতকে বিশ্বের সর্বাধিক আয় ও সম্পদ বৈষম্যের দেশগুলির সমকক্ষ করতে পেরেছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি না হওয়ায় তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে নজিরবিহীন বেকারত্বে।
এই নতুন ভারতেরই রূপকার নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু যাদের ভোটে তিনি ক্ষমতায় ফিরবেন তাঁরা এই ভারত চায় না। মোদীর নতুন ভারত আদানি-আম্বানিদের ভারত। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এই সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন মোদীরা। ভোটে জেতার সব কৌশল প্রয়োগ করেও আসল জায়গায় সাধারণ মানুষের মন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সেই রেউড়িকে ধরে বৈতরণী পার হতে চাইছেন নির্লজ্জভাবে।

Comments :0

Login to leave a comment