SFI ANTI RAGGING CAMPAIGN

র‌্যাগিংয়ে অভিযুক্তই এখন সুপার ডেন্টাল কলেজে! মেডিক্যালে হেল্পলাইন এসএফআই’র

রাজ্য কলকাতা

SFI TMCP JADAVPUR UNIVERSITY STUDENTS POLITICS BENGALI NEWS SWAPNADIP STUDENTS DEATH MEDICAL COLLEGE RAGGING ডক্টর আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে র‌্যাগিং বিরোধী পোস্টারিং করছেন এসএফআই কর্মীরা।

র‌্যাগিং বিরোধী কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই উঠেছে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ। আবার দীর্ঘদিন ধরে হস্টেলে র‌্যাগিং চালানো, ঘর দখল করে থাকা ছাত্রকে বানানো হয়েছে হস্টেল সুপার। কলকাতার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতালের ছাত্রদের অভিযোগ এমনই। অভিযোগ, গোটাটাই হয় তৃণমূলের মদতে। 

কলকাতা শহর তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সেরা দাঁতের হাসপাতাল হলো আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল। কলকাতার শিয়ালদহের এই কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন ডেন্টাল পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ। অভিযোগ, সেই কলেজে র‌্যাগিং সংস্কৃতি জাঁকিয়ে বসেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মদতে। বর্তমানে এসএফআই’র প্রতিরোধে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে র‌্যাগিং বন্ধ রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। 

ডেন্টাল কলেজের সদ্য প্রাক্তন পড়ুয়া অনুরণ পালের কথায়, ‘‘২০১৮ সালে ক্যাম্পাসে এসএফআই করার ‘অপরাধে’ আমায় হেনস্থা করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা। মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমায় অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আমায় মানসিক ভাবে হেনস্থা করেন। তিনি কার্যত আমার র‌্যাগিং করেন।’’

অর্থাৎ, যেই কমিটির কাজ র‌্যাগিং আটকানো, সেই কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই উঠছে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ। 

যদিও ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। আক্রান্ত পড়ুয়া ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার কাছে অভিযোগ জানান। ২/৪/২০১৮ তারিখে তিনি ই-মেল মারফৎ অভিযোগ দায়ের করেন। ডেন্টাল কাউন্সিলের তরফে কলেজের প্রিন্সিপালকে জরুরি ভিত্তিতে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি সামলাতে প্রিন্সিপাল আক্রান্ত পড়ুয়াকে আশ্বাস দেন, তাঁর সঙ্গে আর এই ধরণের ঘটনা ঘটবে না। অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকেও অভিযুক্ত ওই ডাক্তারি অধ্যাপককে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

কলেজের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও, তৃণমূলপন্থী প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত রয়েছেন তিনি। শিক্ষক হয়ে ছাত্রকে র‌্যাগিংয়ে অভিযুক্তকে দলীয় স্বীকৃতি দিতে ভোলেনি তৃণমূল। 

এর পাশাপাশি কলেজের পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, ২০১৯ সালের পর থেকে কলেজের হস্টেলে র‌্যাগিং বন্ধ রয়েছে। এবং তার কৃতিত্ব তাঁরা দিচ্ছেন এসএফআই’র কর্মীদের। 

২০১৯ সালে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার কথায়, অক্টোবর মাসে হঠা‌ৎ একদিন সিনিয়ারদের তরফে আমাদের জানানো হয়, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ইন্ট্রো নিতে হবে। এই সিনিয়ারা সবাই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করত। আমরা এর বিরোধিতা করি। কিন্তু তবুও ইন্ট্রো নেওয়া শুরু হয়। 

ইন্ট্রো পর্ব কিছুক্ষণের মধ্যেই র‌্যাগিংয়ে পরিণত হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে ওই দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া এসএফআই কর্মীদের টেক্সট করে গোটা ব্যাপারটা জানান। 

প্রসঙ্গত, এসএফআই’র মেডিক্যাল কলেজ লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন অনুরণ। তাঁর কথায়, ‘‘জুনিয়রদের থেকে খবর পেয়ে আমরা হস্টেলের একটা ঘরে যাই। গিয়ে দেখি সবে কলেজে পা রেখেছে এমন জুনিয়ারদের জড়ো করানো হয়েছে সেখানে। তাঁদের র‌্যাগিং চলছে। আমরা সঙ্গেসঙ্গে সেটা বন্ধ করাই। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের আমরা বলি, এখানে বড় কিছু ঘটলে কিন্তু তোরা সমস্যায় পড়বি। যাঁরা তোদের এটা করতে পাঠিয়েছে, তাঁরা কিন্তু তখন দায় ঝেড়ে ফেলবে।’’

কলেজের পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, তারপর থেকে আর হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা সামনে আসেনি। 

হস্টেলের সুপারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। পড়ুয়ারা বলছেন, বেছে বেছে তৃণমূল কর্মী কিংবা সমর্থকদের সুপারের পদে নিয়োগ করা হয়। ফলে র‌্যাগিং চললেও চোখ বন্ধ করে থাকেন তিনি। 

পড়ুয়াদের অভিযোগ, পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলেও শুভজিৎ সাহা নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা দীর্ঘদিন ধরে হস্টেলের ঘর দখল করে ছিলেন। ২০১৬ সালে হস্টেলের বাকি ছাত্ররা একজোট হয়ে তাঁকে হস্টেল থেকে বিতাড়িত করে। অভিযোগ ছিল, এই টিএমসিপি নেতার হস্টেলের ঘর র‌্যাগিংয়ের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। অনুরণ জানাচ্ছেন, ‘‘সেই নেতা এখন ডাক্তার। তাঁকেই হস্টেল সুপার করে আনা হয়েছে।’’

অর্থাৎ, র‌্যাগিংয়ের পান্ডার কাছেই আগামী দিনে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ জানাতে হবে পড়ুয়াদের! 

রাজ্যের ডেন্টাল এবং মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ, প্রায় সমস্ত মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কলেজের হস্টেলে ঘর দখল করে রয়েছেন পাস আউট ছাত্ররা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘কোভিডের পরে ছাত্র ভর্তির সময় অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে। এখন সেপ্টেম্বর অক্টোবর নাগাদ প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু পাস আউট ছাত্ররা ঘর না ছাড়ায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা এখনও হস্টেলে ঘর পায়নি। এদিকে ২০২৩-২৪ ব্যাচ আসার সময় হয়ে গেল।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ওই পড়ুয়ার দাবি, হস্টেলের ছাদে সাধারণত র‌্যাগিংয়ের আসর বসে। টিএমসিপি’র সক্রিয় কর্মী এবং নেতারা এর মূল হোতা। এর বিরোধিতা করলেই দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, হস্টেলে সিসিটিভি থাকলেও সবটাই ইচ্ছাকৃত ভাবে অকেজো করে রাখা হয়েছে। 

ইতিমধ্যেই র‌্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কলকাতা জেলা এসএফআই’র মেডিক্যাল আঞ্চলিক কমিটি। সংগঠনের তরফে ডিজিটাল পোস্টার এবং লিফলেট ছাপানো হয়েছে। সেখানে ইউজিসি’র র‌্যাগিং বিরোধী হেল্পলাইন নম্বর এবং মেল আইডি দেওয়া রয়েছে। এর পাশাপাশি সংগঠনের তরফেও ২টি  হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়ারা চাইলে এসএফআই কর্মীদেরও র‌্যাগিংয়ের খবর জানাতে পারেন। 

এসএফআই’র বক্তব্য, আগামী দিনে ক্লাস ডায়াসিং করে সমস্ত প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার হাতে এই লিফলেট তুলে দেওয়া হবে। পোস্টারের আকারেও দেওয়ালে লাগানো হবে। একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই নম্বরগুলি। 

 

Comments :0

Login to leave a comment