ABAR PRALOY

‘আবার প্রলয়’: ঢোঁক গিলে সত্যিটা মানলেন রাজ চক্রবর্তী!

রাজ্য

ABAR PRALOY

প্রতীম দে

তাহলে তৃণমূল বিধায়ক তথা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী মেনেই নিলেন যে রাজ্যে নারী পাচারের অবস্থা উদ্বেগজনক!

মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে নিরাপদ নয় রাজ্যের মহিলারা। এনসিআরবি রিপোর্ট বলছে ২০১৬, ২০১৭ বা ২০১৮ সালে লাগাতার বাড়তে থেকেছে নারী পাচার। রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত সিরিজে দেখানো হচ্ছে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি। তাতে বলা হচ্ছে এই ধরনের বেআইনি ঘটনা আরও বেড়েছে। 

সম্প্রতি এই ওয়েব সিরিজ ‘আবার  প্রলয়’ মুক্তি পেয়েছে। ডাকাবুকো অফিসার অনিমেষ দত্ত সুন্দরবনে বদলি হয়েছেন নারী পাচার আটকাতে। সেখানে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক থানার ওসি’র চরিত্রে অভিনয় করছেন। যিনি জানেন নারী পাচার হয়। মানে প্রশাসন জানে নারী পাচার হয়।

এই সিরিজের একটি সংলাপ এমন- ‘‘করোনা আমফানের পর সুন্দরবনের মানুষের হাতে কাজ নেই। তাই এই ধরনের কাজ বেড়েছে।’’

ঠিক, করোনা এবং আমফান বড় ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু তার আগেও, সুন্দরবনের মানুষের হাতে কাজ অনেক দিন ধরেই নেই। গত প্রায় দশ বছর সমানে বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিক, অন্য রাজ্যে কাজ একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। নদী বাঁধ নেই, বহু জায়গায় মেরামত হচ্ছে না। লোনা জল খেয়ে যাচ্ছে চাষের মাঠ। মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ যায় মানুষের, মাছও মিলছে না। রাজ্যে সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তর রয়েছে, কিন্তু সেখানের উন্নতির জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সরকারের নেই। গ্রামীণ হাসপাতালের বেহাল দশা। যদিও ওয়েব সিরিজে যে হাসপাতাল দেখানো হয়েছে তা খুব চকচকে। কিন্তু সেখানে পাচার হতে যাওয়া এক অসুস্থ মেয়েকে ভর্তি নিতে না চাওয়ার দৃশ্য রয়েছে।

এক কথায় বাস্তব অবস্থা অনেকটাই ফুটে উঠেছে এই সিরিজে। সরকার এবং তৃণমূলের পক্ষে তা স্বস্তিদায়ক নয়। কিন্তু সিরিজকে দর্শকের মনের মতো করতে তৃণমূল বিধায়ককে পরিচালকের ভূমিকায়  জনজীবনের সঙ্গে মেলে এমন কিছু কথা বলতে হয়েছে। 

যেমন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এই সিরিজে বারবার দেখা গিয়েছে। সুন্দরবনে যে ত্রাণ লুঠ করা হয় তাও দেখানো হয়েছে। মজার বিষয় গত এক বছর ধরে যে বিষয় নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি আলোড়িত তা হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি। সেই বিষয়ও কিছুটা ছুঁয়ে গিয়েছে ওয়েব সিরিজ। পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করা রাজ্যের মন্ত্রীকে স্পেশাল অফিসার প্রশ্ন করছেন, ‘‘পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন তো?’’

নারী পাচারের যেই চক্র এই সিরিজে তুলে ধরা হয়েছে তাতে কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলেকে দেখানো হচ্ছে। 

প্রশ্ন উঠবে কেন?

গত ১২ বছরে রাজ্যে কোন কর্মসংস্থান নতুন করে তৈরি হয়নি। যা ছিল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজ নেই। পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে যেতে হচ্ছে কাজের খোঁজে। কিন্তু সবাই তো আর যেতে পারছে না। অনেকে রাজ্য বা তার নিজের গ্রামেই থেকে যাচ্ছে। আর এই বেকারত্বের সুযোগ নিয়েই তাঁদের বেআইনি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা হয়ে উঠছে সমাজের চোখে অপরাধী। 

কখনও কখনও সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে সমাজের পরিস্থিতিকেই তুলে ধরা হয়। এই সিরিজে কিছুটা ঢোঁক গিলেই রাজ চক্রবর্তী সত্যিটা তুলে ধরেছেন।

গ্রাফিক্স: মনীষ দেব

Comments :0

Login to leave a comment