BOOK REVIEW | ASITAV DASS | Bengal Renaissance : MadanMohan Tarkalankar and IswarChandra Vidyasagar | MUKTADHARA | 2025 APRIL 11

বই | অসিতাভ দাশ | পাখী সব করে রব... | মুক্তধারা | ২০২৫ এপ্রিল ১১

সাহিত্যের পাতা

BOOK REVIEW  ASITAV DASS  Bengal Renaissance  MadanMohan Tarkalankar and  IswarChandra Vidyasagar  MUKTADHARA  2025 APRIL 11

বই | মুক্তধারা

পাখী সব করে রব...
অসিতাভ দাশ


আমাদের শৈশবে ‘পাখী সব করে রব/ রাতি পোহাইল’ কবিতাটি অনেকের কাছেই সুপরিচিত ছিল। কিন্তু এই কবিতাটির লেখক কে ও তাঁর সম্বন্ধে  আমরা ক’জনই বা জানি। এই কবিতাটির লেখক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহপাঠী মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালে হুগলি জেলার বীরসিংহ গ্রামে ও ১৮১৭ সালে মদনমোহন তর্কালঙ্কার নদীয়া জেলার বিল্বগ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন। মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. লক্ষ্ণণ ঘোষ ইংরেজিতে সম্প্রতি একটি গবেষণামূলক  গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটির নাম ‘‘ Bengal Renaissance : Madan mohan Tarkalankar and IswarChandra Vidyasagar : historical, Educational and Sociological Perspectives ’’। মদনমোহন এবং ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজে সতীর্থ ছিলেন। পাখী সব করে রব’ কবিতাটি যখন রচনা করেন তখন বাংলার সাহিত্যাকাশে গদ্যে অক্ষয়কুমার দত্ত ও পদ্যে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বিচরণ করছেন, এই সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মতো দুইজন  প্রতিভাসম্পন্ন লেখকের আবির্ভার ঘটে। ১৮৫০ সালে লেখকদ্বয় একখানা উচ্চ অঙ্গের মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার নাম ছিল ‘সর্বশুভকরী’, সুন্দর, সুরুচিসম্পন্ন প্রবন্ধমালায় ভূষিত হয়ে উচ্চমানের এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। ‘সর্বশুভকরী’ পরিচালনের উদ্দেশ্যে দুই বন্ধুর কার্যকলাপ ওতপ্রোতভাবে সম্বন্ধযুক্ত ছিল। ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকার সম্পাদনভার মদনমোহন তাঁর নিজের হাতে রাখলেও কিন্তু পত্রিকাখানা প্রকাশ হতো মতিলাল চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির নামে। সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নের সময় কলেজের অধ্যাপকগণ মদনমোহনের কবিত্ব শক্তির পরিচয় পেয়ে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন। এই সময় তিনি ‘সংস্কৃততরঙ্গিনী’ নামে গ্রন্থের বাঙলা পদ্যানুবাদ করেন। এই অনুবাদ পাঠ করে অধ্যাপকগণ মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ‘কাব্যরত্নাকর’ উপাধি প্রদান করেন। তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ‘তর্কালঙ্কার’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মদনমোহন চট্টোপাধ্যায়। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ‘রসতরঙ্গিনী’ ও ‘বাসবদত্তা’ নামে কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। একই সময়ে বিদ্যাসাগর মহাশয়ও সংস্কৃত ও বাংলা গদ্য রচনা করতেন। তিনি ‘সত্য কথনের মহিমা’ সম্বন্ধে গদ্য রচনা লিখে একশত টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন। ফলত উপাধি ও পুরস্কার উভয় বন্ধুকে সাহিত্যের আলোচনায় অগ্রসর হতে সাহায্য করেছিল। সংস্কৃত কলেজে পড়াকালীন দুইজনের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়। এদেশে স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ব্যক্তি ড্রিঙ্কওবাটার বেথুনের সাথে তাঁদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। মদনমোহন তর্কালঙ্কার, বিদ্যাসাগর, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখের উদ্যোগে ১৮৪৯ সালে ৭মে নেটিভ ফিমেল স্কুল নামে (বর্তমান বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয় স্থাপনের পূর্বে বাংলায় স্ত্রীশিক্ষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে হিন্দু সামজের  রক্ষণশীল ব্যক্তিরা দণ্ডায়মান হয়েছিলেন ফিমেল স্কুল স্থাপিত হলে (বর্তমানে বেথুন স্কুল) সমাজ ও লোক লজ্জার ভয়ে কেউ নিজেদের কন্যাদের পাঠাতে সাহস না করলেও সর্বপ্রথম মদনমোহন তাঁর দুই কন্যা ভুবনমালা ও কুন্দমালাকে প্রকাশ্যভাবে বেথুনের বালিকা বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনি নিজে বিনা বেতনে প্রতিদিন এই বিদ্যালয়ের বালিকাদের শিক্ষা দিতেন। মদনমোহনের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে বেথুন সাহেব তাঁর  প্রতি আরও বেশি অনুরক্ত হয়েছিলেন। স্ত্রীশিক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে দেখে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  তাঁর সহৃদয় বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থনে প্রবন্ধ লিখতে ও প্রকাশ করতে পরামর্শ দেন। সেই সকল প্রবন্ধ প্রকাশ করে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থন করার জন্য ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকা প্রকাশের সূচনা ঘটে। ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় ‘‘বামাগণের বিদ্যাশিক্ষা’ বিষয়ে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের প্রবন্ধটি পাঠ করে তৎকালীন ‘সমাচার চন্দ্রিকা’র সম্পাদক ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘সংবাদ প্রভাকর’ সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, ‘তত্ত্ববোধিনী’ সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজনারায়ণ বসু প্রমুখ তাঁর শত্রুমিত্র, সপক্ষ-বিপক্ষ সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছিলেন যে, স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে এরকম উৎকৃষ্ট প্রস্তাব তখনও পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় তিনি স্ত্রীশিক্ষার সমর্থনে ‘স্ত্রীশিক্ষা’ নামে একটি যুগান্তকারী দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। বেথুন সাহেবের আদেশে ‘বেথুন বালিকা বিদ্যালয়ের বালিকাদিগের জন্য ‘শিশুশিক্ষা’ ১ম, ২য় ও ৩য় ভাগ প্রকাশ করে শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের অভাবও কিছুটা মোচন করেছিলেন। মদনমোহন পদ্য ও গদ্য উভয় প্রকারে উৎকৃষ্ট রচনা করতে পারতেন। তাঁর ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকা বঙ্গ সাহিত্য থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু তাঁর ‘পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল’— এই ‘প্রভাত বর্ণনা কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে ও বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে চিরদিন বিরাজিত থাকবে। লেখক ও গবেষক লক্ষণ ঘোষকে ধন্যবাদ মদনমোহন তর্কালঙ্কার সম্বন্ধে অনেক জানা-অজানা তথ্য পাঠকদের মনে তুলে ধরবার জন্য। দুঃখের বিষয় মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কোনও চিত্র বা প্রতিকৃতি এখনও পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায়নি। গ্রন্থের মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের জন্য প্রকাশককে ধন্যবাদ।
 

Bengal Renaissance : MadanMohan Tarkalankar and  IswarChandra Vidyasagar : historical, Educational and Sociological Perspectives
Lakshman Ghosh. Calcutta, Books Heaven Publication.Rs. 450/-

Comments :0

Login to leave a comment