MIGRANTS JALPAIGURI

তিস্তা থেকে সরে কানিবকদের ঝাঁক পাণ্ডাপাড়ায়

জেলা

জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ায় পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক। ছবি প্রবীর দাশগুপ্ত

দীপশুভ্র সান্যাল

দূষণমুক্ত জলাজমি এবং পর্যাপ্ত খাবারের জোগান, এই দু’টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিযায়ী পাখিদের আবাস ও প্রজননস্থল গড়ে ওঠার জন্য।
সুদুর সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসে তিস্তা পারের বিভিন্ন জলাশয়ে শীতের সময় দেখা মেলে তাদের। এবছর সিকিমের বন্যায় তিস্তার জলে মিলছে বিষাক্ত রাসায়নিক। জলে রাসায়নিক বিক্রিয়ারও আশঙ্কা করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ বছর তাই তিস্তায় দেখা মিলছে না পরিযায়ী পাখিদের। তবে আশপাশের জলাভূমিতে দেখা মিলছে। 
শহর এবং শহরতলীতে ক্রমেই কমছে জলাশয়। জলাভূমিকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বারবার বলছেন জেলার পরিবেশপ্রেমীরা। শীত পড়তেই ভিড় করেছে অতিথি! কূজনে ঘুম ভাঙছে জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার বিশ্বাসপাড়ায়। ইটভাটার পেছনের পুকুরে দেখা মিলছে তাদের। রাস্তায় বেরলেই চোখে পড়ে নানা রঙের পাখিদের। কারও ঠোঁটের বাহার চোখে পড়ে, কারও আবার পালকে রঙের ছটা। 
অনেকেই চেহারা বা ডাক ঠাহর করতে পারলেও নাম জানেন না। শীত আসার পর থেকেই এই অতিথিদের দেখতে পাওয়া যায় জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ার বিলে। এবারও অন্যথা হয়নি। দক্ষিণ পাণ্ডাপাড়ার এই বিলে এবার প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার পাখি এসেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই পরিযায়ী পাখি বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। 
এক বিশেষ ধরনের শঙ্খচিলের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া এবং শীত প্রধান অঞ্চল থেকে প্রচুর অতিথি এসেছে এই বিলে। এলাকার মানুষ তাদের চিহ্নিত করছেন কানিবক, গোবগা, গলিন্দা সহ নানা নামে।
জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিঙ জেলার ই-বার্ড রিজিওনাল রিভিউয়ার তথা বার্ড ওয়াচার শান্তনভ মজুমদারের কথায়, ‘‘শহরের পাণ্ডাপাড়ায় দ্বারিকা প্রসাদ জলাভূমির নাম হয়তো অনেকেই জানেন না, কিন্তু যদি বলা হয়, ইটভাটার জলা, তাহলে অনেকেই চিনবেন। এই জলাভূমিতে প্রায় ১০৬ রকম প্রজাতির জলাভূমির পাখি থাকে, কেউ কেউ পরিযায়ী।’’ 
পক্ষী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘‘গাজলডোবার মতো এখানেও টাফ্টেড ডাক, ফেরুজিনিয়াস পোচার্ড, ইস্টার্ন স্পট বিল্ড ডাক, গ্রে হেডেড ল্যাপউইং  এমনকি ফ্যাল্কেটেড ডাকের মতো পরিযায়ী হাঁস শীতকালে উড়ে আসে বহুদূর থেকে। সরাল বা লেসার হুইসলিং ডাক এর মত স্থানীয় পাখি হাজার হাজারে ভিড় জমায়। 
শান্তনভ মজুমদার বললেন, ‘‘পাখি আসার মূল কারণ খাদ্যের সহজলভ্যতা, প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলা আর বংশবৃদ্ধি। তাই এই জলাভূমিকে দূষণমুক্ত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।’’
পরিযায়ী পাখির এই বিল বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরী বলছেন, ‘‘ওখানে আগে একটি ইটভাটা ছিল যা এখন বন্ধ। সেখানে জল জমে অনেকটা বিলের আকার নিয়েছে। জায়গাটা নিরিবিলি থাকায় ওখানে ওরা এসে ডেরা জমায়, মানুষের আসা-যাওয়া কম থাকায় সমস্যা হয় না।’’ 
বিষয়টি নিয়ে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। পাখি দেখতে, পাখির ছবি তুলতে ভিড় জমান বহু উৎসাহী। শীতের এই সময়টা চেনা পাণ্ডাপাড়া কিছুটা হলেও আরও সুন্দর হয়ে ওঠে, বলছেন স্থানীয়রা।

Comments :0

Login to leave a comment