BOOK REVIEW — SOURAV DUTTA | MOLLA NASREDDINER GOLPA — MUKTADHARA | FRIDAY 5 JULY 2024

বই — সৌরভ দত্ত | মোল্লা নাসিরুদ্দিনের‌ গল্প — মুক্তধারা | শুক্রবার ৫ জুলাই ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

BOOK REVIEW   SOURAV DUTTA  MOLLA NASREDDINER GOLPA   MUKTADHARA  FRIDAY 5 JULY 2024

বই   

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের‌ গল্প

সৌরভ দত্ত

মুক্তধারা

 

কালোক্তীর্ণ গল্পের বিশ্বজনীন স্থপতি মোল্লা নাসিরুদ্দিন। বিশ্ব সাহিত্যে‌ আমরা ফ্রানজ‌ কাফকার কথিকা পর্যায়ের চমৎকৃত অণুগুলোর কথা সর্বজনবিদিত। মোল্লা নাসিরুদ্দিন বা মোল্লা সাহেবের অণুগল্পগুলোর বিশ্বজনীতার বৈশ্বিক স্তরে উন্নীত হয়েছে।লোককাহিনিকে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে নাসিরুদ্দিনের গল্পগুলি।যার মধ্যে বুদ্ধিদীপ্ততা, শাণিত যুক্তিবোধ, মানুষের অন্ত:সার শূন্যতা , সামাজিক অবক্ষয় প্রকট‌ হয় উঠছে। একটি স্কুল লাইব্রেরী থেকে হাতড়াতে হাতড়াতে হাতে এসে‌‌ ঠেকেছিল নিউ ভৈরব  গ্রন্থালয়ের ভৈরব সৈয়দ রেজাউল করিমের ভাষ্যে জীবন্ত মোল্লা নাসিরুদ্দিন আফান্দির গল্প।বইয়ে স্থান‌ পেয়েছে‌ নাসিরুদ্দিনের একশো চৌত্রিশটি‌ টুকরা গল্প।যার প্রতিটি গল্প টানটান অনাবিল হাস্যোজ্জ্বল। নাসিরুদ্দিনের গল্পে প্রিয় গাধা ও চৌর্যবৃত্তির প্রসঙ্গ বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে।বাদশা, উজির, নাজির, কাজীকে প্রয়োজন থেকে প্রয়োজনাতীতে হাজির করেছেন লেখক‌।কুসংস্কার, স্বার্থপরতা, লোভ-লাভ-লীপ্সার ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপময় নিদর্শন নাসিরুদ্দিনের খোশগল্প।বইয়ের প্রথম গল্প “চার পা ”--এর মধ্যে চিত্রিত হয়েছে মোল্লা সাহেবের বাদশাহি দরবারে চক্ষু বৃত্তান্ত।দুটো গাধার বোঝা শীর্ষক‌ কথিকায় বাদশার শিকারের শখের পাশাপাশি পোষাক পরিবর্তনের কৌশল ধরা পড়ে। যেখানে নিজের কাঁধে বাদশাহের পোষাকের ভার ধারণ করেন আফান্দী। গল্পের শেষে আফান্দী মৃদু‌ হেসে‌ বলেন–“ভুল বলবেন না‌ জাঁহাপনা। আমার কিঁধে এক গাধার বোঝা নয়,বোঝা আছে দুই গাধার।” ‘আরো কালো ’নামক গল্পে রয়েছে মোল্লা সাহেবের আলখাল্লা নোংরা হওয়ার কথা। যেখানে সাবান নিয়ে পলায়ন করে এক চতুর কাক।সাবান মেখে ফর্সা হওয়ার রহস্যের কথা রয়েছে গল্পে।বিবির গোয়ার্তুমি গল্পে মোল্লার সাথে বিবির কলহের দৃশ্য চোখে পড়ে। দুজনের মধ্যে শর্ত হয় যে আগে কথা বলবে সে গাধাকে দানাপানি দেবে।শেষ পর্যন্ত দেখা যায় দুজনের গোয়ার্তুমির জন্য বাড়ির অবস্থা বেহাল হয়ে গেছে।কানমলা নামক কথাণুতে দেখা যায় ছেলেকে‌ নিয়ে বিবি‌ বাপের বাড়ি‌ যাওয়ায় মোল্লার চোখের ঘুম উড়ে গেছে। যেখানে শেষাংশে মোল্লা –“বিজ্ঞের মত জবাব দিল–মশাই !একথা আপনার জানা নাই,কলসি ভাঙার পর আর ফিরত পাবে না।কলসির জন্য চড় খেয়েছে একথাও ভুলবে না।”‘সাহায্যের জন্য চাঁদা’ গল্পে চাঁদা‌ নিয়ে এক শ্রেণির লোকের ঠকানোর বিষয় উঠে আসে। যেখানে মোল্লাকে ও ঠকতে হয়েছে বারকয়েক।মোল্লা সকাতর দৃষ্টিতে বললেন–“ব্যাটা তো আচ্ছা ঠকান ঠকাল।” বইটির একেবারে শেষ গল্প “যা‌ খুশি তাই করতে পারি”।বাড়ি করতে গিয়ে দেনার‌ জ্বালায় জর্জরিত মোল্লার স্বীকারোক্তি পাঠককে বেদনাদীর্ণ করে।বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে প্রাঞ্জল গল্পগুলি।শিশু-কিশোরদের নতুন করে ভাবতে শেখায় বাড়তি রসদ‌ জোগায় নিজস্ব অনুভব বয়ানের।

গ্রন্থনাম–“মোল্লা‌ নাসিরুদ্দিনের গল্প”
সংকলক–রেজাউল করিম
প্রচ্ছদ–দিলীপ দাস
মুদ্রক–মর্ডান প্রেস
প্রকাশক–ভৈরব‌ গ্রন্থালয়

Comments :0

Login to leave a comment