ন্যায্য উৎসব ভাতার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে পাহাড় জুড়ে। ন্যায্য ও সম্মানজনক বোনাসের দাবির ফয়সলা না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে পার্বত্য এলাকার শ্রমিক মহল্লায়। বুধ ও বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও পার্বত্য এলাকার বিস্তীর্ন চা বলয় ছিলো একেবারেই শুনশান। সম্মানজনক বোনাস না দেওয়ায় মালিক ও সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষের জেরে কাজে ফিরলেন না চা বাগানের শ্রমিকরা। কর্মবিরতির সিদ্ধান্তেই অবিচল রয়েছেন পাহাড়ী বাগিচা শ্রমিকরা। এদিনও দার্জিলিঙ পার্বত্য এলাকার বহু বাগানের গেট ও ফ্যাক্টরির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরনা ও বিক্ষোভ কর্মসূচী চালিয়ে গেছেন শ্রমজীবি মানুষ।
১৬ শতাংশ বোনাস ঘোষণা করে অ্যাডভাইসরি জারি করেছে রাজ্য সরকার। এই অ্যাডভাইসরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এক কিস্তিতে ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে আগামী ৭অক্টোবর শিলিগুড়ি সংলগ্ন দাগাপুরের শ্রম দপ্তর অভিযান করা হবে। পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তের বাগিচা শ্রমিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাগাপুর থেকে মিছিল করে শ্রম দপ্তর অভিযান হবে। সম্মানজনক বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। বৃহস্পতিবার একথা জানিয়ে চা শ্রমিক নেতৃত্ব সমন পাঠক বলেন, ‘‘এদিন আটটি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের বৈঠক থেকে আগামী ৭অক্টোবর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সমন পাঠক জানান, শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি চিঠি মারফৎ শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চকে জানানো হয়েছে বোনাস ফয়সলায় দীপাবলী উৎসবের পরে আলোচনায় বসা হবে। কিন্তু আলোচনায় বসার নির্দিষ্ট কোন দিনক্ষনের উল্লেখ করা হয়নি চিঠিতে। তাই এই চিঠিকে কোনভাবেই মান্যতা দেওয়া হবে না। ১৬শতাংশ বোনাসের বিরোধীতায় ও ২০শতাংশ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনের পথ থেকে সরছি না আমরা। চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়ন সহ আটটি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে পাহাড়ের বাগিচা শ্রমিকদের স্বার্থে ন্যায্য বোনাস আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলবে। প্রয়োজনে লড়াই আন্দোলন আরো তীব্র করা হবে।
বোনাসের দাবিতে পাহাড়ে কর্মবিরতি।
অন্যদিকে দুর্গা পুজোর আগেই অস্থায়ী শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বোনাস দিয়ে দিতে হবে। কোনো রকম তালবাহানা হবে না। এই দাবিতেই বিক্ষোভ চরমে উঠে আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট ব্লকের আর্যমান চা বাগানে। এদিন দুপুর থেকে দেখা গেল বোনাসের দাবিতে কয়েকশো শ্রমিক ফালাকাটা- মাদারিহাট রাস্তায় জয়শ্রী গেটের সামনে সিআইটিইউ’র পতাকা নিয়ে শ্রমিকরা অবরোধে সামিল হয়েছেন। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে চলে চা বাগানে বোনাস নিয়ে শ্রমিক বিক্ষোভ। উল্লেখ্য সিআইটিইউ ছাড়া অন্য কোনো ইউনিয়ন বা তার পতাকা আজ দেখা যায়নি।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এই বাগানে এক হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন তার মধ্যে ৩৫০ জন অস্থায়ী শ্রমিক। স্থায়ীরা শ্রমিকরা বোনাস পেলেও অস্থায়ীরা এখনো বোনাস পায়নি। গতবার শারদীয় উৎসব এই শ্রমিকদের বোনাস দিবে বললেও তারা বিভিন্ন তালবাহানা করে বোনাস দেয়নি। জানা যায় গতবার এবং এবার দুই বছরের বোনাস দেবার জন্য লেবার কমিশনার বাগান কতৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, অভিযোগ তা সত্বেও তারা বোনাস দিচ্ছে না।
অবরোধ চালাকালীন ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে স্লোগান আরও তীব্র হয়। কিছুক্ষণ পর সিআইটিইউ নেতৃত্ব সাথে আলোচনায় বসে বাগান কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের প্রতিনিধিরা। তাতে ২৪ ঘন্টা সময় দেয়। জানানো হয় আগামী কালের মধ্যে বোনাস দেবার কথা হয়।
সিআইটিইউ নেতা নৃপেন খাসনবিশ এবং শঙ্কর দাস বলেন,‘‘এই বাগানে অস্তায়ী শ্রমিকদের গতবার বোনাস দেয়নি, এবার দুই বছরের বোনাস এক সাথে দেবার জন্য নির্দেশ দিলেও বাগান কতৃপক্ষ এখনো বোনাস দিচ্ছে না।’’ তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শ্রমিকরা সারা বছর বাগানের কাজ করেন। তাদের নুন্যতম চাহিদা বাগান মালিকরা মেটায় না। যে নিয়মে বাগানগুলো চলে সেটা তো কেন্দ্র রাজ্য তৈরী করা আইন। তাহলে দুই শাসক দলের কি ভুমিকা? তারা কেন এর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না মালিকদের বিরুদ্ধে। তাহলে কি শ্রমিকদের বঞ্চনা করে মালিক তোষণ চলছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে বোনাস দেওয়া না হলে। আন্দোলন আর তীব্র হবে।’’
আলিপুরদুয়ার জেলার সিআইটিইউ সাধারণ সম্পাদক বিকাশ মাহালী বলেন, ‘‘খালি বোনাস নয় কেন্দ্র রাজ্য দুই শাসকের নীতির ফলে শ্রমিকদের নুন্যতম মুজুরি, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, জমির অধিকার এসব থেকে বঞ্চিত করছে। পাশাপাশি বন্ধ বাগান খোলার কোনো উদ্যোগ নেই। নির্বাচনের সময় গালভরা প্রতিশ্রুতি। এসব বন্ধ হওয়া উচিত। না হলে সার্বিক ভাবে চা শিল্পের ক্ষতি হবে।’’
Comments :0