Editorial

মোদানি পর্ব

সম্পাদকীয় বিভাগ

আদানি গোষ্ঠীর কাছে কেন্দ্রীয় শাসক দল, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর দায়বদ্ধতার রহস্য আজও দেশবাসীর কাছে অনুৎঘাটিত। দেশে এত কর্পোরেট থাকতে বেছে বেছে গৌতম আদানির মালিকানাধীন সংস্থার প্রতি মোদী-শাহদের এত কিসের দুর্বলতা স্পষ্ট নয়। তবে এটা নির্ভেজাল সত্য যে নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক উত্থান ও শীর্ষস্থানে পৌঁছানো এবং গৌতম আদানির বাণিজ্যিক উত্থান ও দে‍‌শের শীর্ষ কর্পোরেট হয়ে ওঠা সমান্তরালভাবেই হয়েছে। একদা মোদীর নেতৃত্বে গুজরাট সরকার পরে মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এবং মোদীর প্রভাবে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকারগুলি যে সর্বোতভাবে আদানি গোষ্ঠীকে বেড়ে ওঠায় এমনকি বিভিন্ন ক্ষেত্রে একচেটিয়া হয়ে ওঠায় সাহায্য করেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে বা নিয়মে বদল ঘটিয়ে আদানিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মোদী জমানায় কি গুজরাটে, কি গোটা দেশে বেসরকারিকরণের ভাবনা এসেছে তখনই প্রথম মনে পড়েছে আদানিদের কথা। শিল্প-বাণিজ্য বেসরকারি সংস্থার ভূমিকার কথা উঠলেই এক নম্বরে থাকবে আদানিরা। মোদী সরকারের কাজ কারবার থেকে এটা পরিষ্কার তারা চায় ভারতের কর্পোরেট সাম্রাজ্যের মহারাজাধিরাজ হয়ে উঠুক আদানি গোষ্ঠী। মোদীরা চান দেশের মৌলিক পরিকাঠামো ক্ষেত্রের একচেটিয়া মালিক হয়ে উঠুক আদানিরা। স্বাধীন ভারতে মৌলিক পরিকাঠামো, ভারী শিল্প গড়ে উঠেছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে ও রাষ্ট্রীয় মালিকানায়। এখন তাকে আদানিদের হাতে হস্তান্তরিত করার পর্ব চলেছে। ইতিমধ্যে দেশের সিংহভাগ বিমানবন্দর চলে গেছে আদানিদের হাতে। এখন দেশের সমুদ্র বন্দরগুলিকেও একে একে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রক্রিয়া চলছে কয়লা শিল্পে, বিদ্যুৎ শিল্পে, বিশেষ করে সৌর, বায়ু, জল বিদ্যুৎ শিল্পে আদানিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করে দেবার।
আদা‍‌নিদের উত্থান গুজরাট থেকেই। মোদীর গুজরাট জলের দরে যখন যেখানে চেয়েছে বিপুল জমি দিয়েছে আদানিদের। নানাভাবে কর ছাড় দিয়েছে, বিদ্যুৎ মাশুল মকুব করেছে। অর্থাৎ খোলা বাজারে প্রতিযোগিতায় অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকার রাস্তা করে দিয়েছে সরকার। তেমনি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানাও পেয়েছে নামমাত্র অর্থে। অনেক সময় নীলামের শর্ত এমনভাবে ঠিক করা হয়েছে যাতে আদানিরা ছাড়া অন্য কেউ পেতে না পারে।
সরকারের আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক সরকারি প্রকল্প ‘বিওটি’ প্রথায় (নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর) বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়। বেসরকারি সংস্থা নিজের অর্থে প্রকল্পে নির্মাণ করে এবং পরিচালনা করে। এভাবে মোটা মুনাফা সহ পুরো নির্মাণ খরচ তুলে নেবার পর ৩০-৪০ বছর পর সরকারকে প্রকল্পটি ফিরিয়ে দেয়। এই পথেও বেশির ভাগ প্রকল্প চলে যাচ্ছে আদানিদের হাতে। আবার এর উলটো প্রক্রিয়া চলছে। সরকার নিজের খরচায় প্রকল্প তৈরি করে কিছুকাল পরিচালনা করে লিজের নামে তুলে দিচ্ছে আদানিদের হাতে। সরকারের তৈরি বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দরগুলি এভাবেই চলে যাচ্ছে আদানিদের মালিকানায়। সম্প্রতি গুজরাটের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ৭৫ বছরের লিজে হাতিয়ে নিয়েছে আদানিরা। সর্বোচ্চ ৫০ বছরের লিজের নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভেঙে ৭৫ বছর করা হয়েছে। তেমনি নিজের দর ১৭০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ৩৯৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রকের আপত্তিকেও উপেক্ষা করা হয়েছে। যে অফিসাররা প্রশ্ন তুলেছিলেন রাতারাতি তারা বদলি হয়ে গেছে। মোদী চাইলে কি না হয়।

Comments :0

Login to leave a comment