যখন জুনিয়র ডাক্তারদের পূর্ণ কর্মবিরতি চলছে, আর তাদের আন্দোলনের সমর্থনে গোটা রাজ্যের নাগরিক সমাজ, বিশেষ করে মহিলারা ও তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমে পড়েছেন। প্রতিদিনই চলছে রাস্তা দখল, রাত দখলের কর্মসূচি, তখন উৎসব অন্তঃপ্রাণ মুখ্যমন্ত্রী একরকম দিশাহারা হয়ে পড়েন কীভাবে আন্দোলন থামিয়ে উৎসবে মাতবেন সেই কথা ভেবে। উৎসবের জন্য তিনি উতলা হয়ে উঠলেও রাজ্যের সাধারণ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে আছে আর জি করের অভয়াকে। যে নজিরবিহীন নৃশংসতায় ও পৈশাচিকতায় কর্মরত এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এবং সরকারি চৌহদ্দির মধ্যে সরকারি মদতে ও পুলিশি সহায়তায় সংগঠিত অপরাধকে আড়াল করার ব্যবস্থা হয়েছে তাকে কোনও অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছেন না মানুষ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য ও অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ফেটে বেরতে থাকে প্রতিবাদে-বিক্ষোভে। ক্রমাগত সেটা এক অভূতপূর্ব সামাজিক আন্দোলনের চেহারা নিতে থাকায় ভয় পেয়ে যায় শাসক দল। ন্যায় বিচারের দাবি, অপরাধীদের শাস্তির দাবি অনিবার্যভাবেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের জমি তৈরি করতে থাকে। তাতেই চোখে সরষে ফুল দেখতে শুধু করেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তাঁর সময় ঘনিয়ে আসছে।
এই অবস্থায় তৃণমূলকে রক্ষা এবং তাঁর ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষার জন্য দু’টি রাস্তা তার সামনে খোলা ছিল। যেভাবেই হোক ন্যায় বিচারের দাবিতে ডাক্তারদের ও সাধারণ মানুষের আন্দোলনে ইতি টানা এবং গোটা ঘটনা পরম্পরা থেকে নজর ঘুরিয়ে মানুষকে শারদ উৎসবে মাতিয়ে সরকার বান্ধব করা। তাই আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন মুখ্যমন্ত্রী ন্যায় বিচার, দোষীদের সাজা ইত্যাদিকে শিকেয় তুলে রেখে আন্দোলনকারীদের বার্তা দেন আন্দোলন ছাড়ুন, পূজায় ফিরুন, উৎসবে মাতুন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটতন্ত্র, হুমকি রাজ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, আন্দোলনকে ধামাচাপা দিতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র শারদোৎসব। তাই পূজা কমিটিকে অনুদান এবং অন্যান্য সরকারি আর্থিক সহায়তা অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আন্দোলন দমন করতে পুলিশকে দিয়ে নানা ধরনের কৌশল প্রয়োগ শুরু হয়। নানা বিধি-নিষেধের শৃঙ্খলে আন্দোলনকে দমিয়ে দেবার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তাতে কাজ বিশেষ হয়নি। অতঃপর দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় ভয়াবহ বন্যাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবাদে দাড়ি টানার চেষ্টা হয়। কিন্তু প্রতিবাদীরা দুর্গতদের পাশে থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠকে সোচ্চার রাখায় মুখ্যমন্ত্রীর ফন্দি কাজে আসেনি।
তিনি কিন্তু জানেন তাঁকে বাঁচতে হলে উৎসবেই মাততে হবে। তিনি তাই করছেন। বিবেক শিকেয় তুলে আড়ম্বর আর ফুর্তিকেই উৎসাহিত করতে থাকেন। উৎসবের বহর বা জাঁকজমক কমানোয় তাঁর সম্মতি নেই। দ্বিগুণ সাড়ম্বরে কার্নিভাল হচ্ছে। তিনিও উল্কা গতিতে নেমেছেন পূজা উদ্বোধনে। তিনদিনে ১২০০ মণ্ডপ উদ্বোধন করে উৎসবের এমন রোশনাই হাজির করতে চান যাতে তিলোত্তমার জাস্টিসের দাবিতে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনকে ভুলিয়ে দেওয়া যায়। যত চুরি, দুর্নীতি, লুঠতরাজ জাঁকিয়ে বসে আছে তাকে সামাজিকভাবে বৈধতা দেওয়া যায়। চোর, ডাকাত, তোলাবাজ, গুন্ডা, দুষ্কৃতীরা যাতে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়।
Editorial
উৎসবে মেতেছেন বিবেকহীন মুখ্যমন্ত্রী
×
Comments :0