হাতে মাত্র একদিন বাকি। গোটা রাজ্যের মানুষ একজোট হয়ে ব্রিগেড সমাবেশে সোচ্চার হবে রবিবার। ব্রিগেড সমাবেশের জন্য প্রস্তুত চলছে গোটা রাজ্যে। শিলিগুড়ি সহ সমগ্র উত্তরবঙ্গের ছাত্র, যুব, মহিলা, শ্রমিক, কৃষক সহ সর্বস্তরের মানুষ আসতে চলেছেন ব্রিগেড সমাবেশে। ব্যানার ফেস্টুনে শহর সেজে উঠেছে সমগ্র উত্তরবঙ্গ। গত প্রায় একমাসেরও বেশী সময় ধরে ব্রিগেডকে সফল করার লক্ষ্যে উত্তরের পাহাড় থেকে সমতল, তরাই থেকে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ কৃষি ও চা বলয় জুড়ে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি হয়েছে। শিলিগুড়িতে প্রচারের অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন গণ সংগঠনের উদ্যোগে প্রচার কর্মসূচিগুলিতে আওয়াজ উঠেছে ‘শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ করো’। পশ্চিমবাংলায় কাজ নেই। ছোট, মাঝারি বা ভারি কোন শিল্পও নেই। দুর্নীতি বন্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি রোধ ও শ্রম কোড বাতিলের দাবিতে ব্রিগেডে উত্তরের মানুষের ঢল নামবে ওইদিন।
চা শ্রমিকদের প্রতিদিনের যন্ত্রণা বাড়ছেই। জীবনযন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেতে চা বাগিচার প্রতিটি মহল্লাও সামিল হয়েছে প্রচার কর্মসূচিতে। ব্রিগেডের প্রচার কর্মসূচিগুলিতে সব অংশের সব বয়সের মানুষ হাজির থেকেছেন। প্রচারে অংশ নিয়েছেন কৃষক ও শ্রমিক পরিবারগুলির ঘরের ছেলেমেয়েরাও। প্রচারের ক্ষেত্রে কোন রকম ফাঁকফোকড় নেই। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে কর্মসংস্থানমুখী ও কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, বন্ধ চা বাগান চালু, জমির পাট্টা, ন্যূনতম মজুরি, বেকারের হাতে স্থায়ী কাজের দাবি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ব্রিগেডে হাজির হবেন।
রাজ্যে পালা বদলের পর থেকে দুর্বিসহ আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে কৃষি ও কৃষকদের ওপর। সেচের জল নেই। বাড়ছে কৃষিজ পন্য উৎপাদনের উপকরনের দাম। সার বীজের দাম বাড়ছে। কাজের গতি নেই। কৃষক পরিবারের ছেলেমেয়েরা কলেজের সীমানা পেরিয়েছে। কিন্তু কাজ নেই। কৃষক পরিবারের সন্তানরা পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। কৃষকের ঘরে অভাব। কৃষকদের জন্য কোন পরিকল্পনা নেই এই সরকারের। তাই তো আওয়াজ উঠেছে অবিলম্বে উত্তরবঙ্গে কৃষি ভিত্তিক শিল্প স্থাপন করা। বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে বহু লড়াই করে আদায় করা কৃষকদের জমির অধিকার আজ লুটেরাদের হাতে। আর কুলোচ্ছে না। প্রতিশ্রুতির তালিকা ছিলো দীর্ঘ। অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রাজ্যে নতুন কোন শিল্প আসেনি। দার্জিলিঙ জেলায় শিল্প নেই। ফলে উত্তরবঙ্গের যুব সমাজ দিশেহারা। কর্মসংস্থানের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প হলে কর্মসংস্থান হবে। বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে জেলা জুড়ে যে শিল্পোন্নয়ন গড়ে তোলা হয়েছিলো, বর্তমান সরকারের অবহেলায় সেগুলির অস্তিত্বও সঙ্কটাপন্ন। প্রতিদিন কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে নতুন করে। ফলে কর্মক্ষেত্র আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে।
বানারহাট থেকে ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন কলাবাড়ি চা বাগানের শ্রমিকরা।
চা বাগিচা শ্রমিকরাও কষ্টে রয়েছে। একের পর এক বাগান বন্ধ হয়ে আছে। বন্ধ বাগানে শ্রমিকদের জীবন যন্ত্রণা বাড়ছে। চা বাগানের শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরাও আজ পড়াশুনা শিখে ঘরে বসে আছে। সরকারি চাকরি নেই। বন্ধ বাগানে কাজ নেই। বাধ্য হয়েই অন্যত্র কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে। দৈনন্দিন জীবনযন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে চা শ্রমিক পরিবারের যুবতী সহ ছোট ছোট মেয়েরা নানা প্রলোভনে পা দিয়ে অন্যত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে। চা বাগিচা এলাকায় নারী পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসএসসি’তে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়কালে। পুনরায় এসএসসি’তে নিয়োগ চালুর দাবিতে সোচ্চার হয়েছে শিক্ষিত যুবক যুবতীরা। চা শ্রমিকদের ঘরের ছেলেমেয়েরাও কাজের দাবিতে ব্রিগেড সমাবেশে যাবেন।
ব্রিগেডের প্রচারের প্রায় শেষ পর্বে শহর শিলিগুড়িতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আরও একবার একজোট হচ্ছেন মানুষ। জাত পাত, ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে সর্ববৃহৎ সমাবেশের রূপ দেবার লক্ষ্যে ব্রিগেডের প্রচার যেন রোজ নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
Comments :0