ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতে নির্দিষ্টভাবে কয়েকটি দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু বা শরণার্থীদের ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেবার জন্য আগের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে সংসদে পাশ করানো হয় নতুন সিএএ। মোদী গত লোকসভা নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েই একরকম জোর করে পর্যাপ্ত আলোচনা-বিতর্ক ছাড়াই পাশ করান সিএএ। আসামে এনআরসি নিয়ে তখন তুলকালাম চলছে। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছে ১৮ লক্ষ মানুষ। এদিকে আধার কার্ড দিতে অস্বীকার করা হয়েছে আরও ৬লক্ষাধিক মানুষকে। সব মিলিয়ে আসামে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষকে অসহায় করে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। সেই আবহের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দেশের মানুষকে ক্রোনোলজি শিখিয়েছিলেন। বলেছিলেন এনআরসি হবে সারা দেশেই। বিদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী উইপোকাদের খুঁজে বার করে তাড়ানো হবে দেশ থেকে। তারপর সিএএ চালু করে মুসলিমদের বাদ দিয়ে অন্যদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। আসামের বাইরে কোথাও এনআরসি করা যায়নি প্রবল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের জেরে। থমকে গেছে সিএএ-ও। কয়েক মাস আগে আচমকা অমিত শাহ জানিয়ে দেন ভোটের আগেই চালু হয়ে যাবে সিএএ। বোঝাই যাচ্ছে নাগরিকত্ব দেওয়া বা কেড়ে নেওয়া মুখ্য বিষয় নয়। এনআরসি, সিএএ নিয়ে ঘোর আতঙ্ক তৈরি করে ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণের মাধ্যমে ভোটে ফায়দা লোটাই আসল উদ্দেশ্য। যথারীতি হিসাব কষে ভোটের দিন ঘোষণার কয়েকদিন আগে সিএএ লাগু করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে প্রচার শুরু করলেন যেন এরাজ্যের লক্ষ লক্ষ মতুয়ারা সকলে রাতারাতি নাগরিক হয়ে যাবেন। প্রচারটা এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে মুসলিম বিদ্বেষের জমি পোক্ত হয় এবং বিভাজন তীব্র হয়।
সিএএ’র ঘোষিত বিধি অনুযায়ী আবেদনকারীকে ঘোষণা করতে হবে তিনি পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে মুসলিমদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে ভারতে এসেছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে। তাকে প্রমাণ দিতে হবে তিনি মুসলিম নন, অন্য দেশের নাগরিক, ধর্মের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাধ্য হয়েছেন ভারতে আসতে। এমন কিছু নথি প্রমাণ হিসাবে জমা দিতে হবে। সবকিছু বিচার করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ যদি সেই আবেদন গ্রহণ করেন তবে তিনি নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু বাতিল হলে কি হবে কোথাও বলা নেই।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো যে আবেদন যিনিই করবেন তাকে ঘোষণা করতে হবে বিদেশি। আবেদন বাতিল হলে তিনি বিদেশি হিসাবেই চিহ্নিত হবেন। তাছাড়া যে নথি দাখিল হলে আবেদন গ্রাহত্য হবার নিশ্চয়তা আছে তেমনি নথি কয়জনের আছে বলা মুশকিল। ফলে সিএএ’র ছলনা জালে জড়িয়ে নাগরিকত্ব পাবার থেকে নাগরিকত্ব চলে যাবার আশঙ্কাই বেশি বাস্তব হয়ে উঠেছে। সরকার যদিও বলছে সিএএ নাগরিকত্ব দেবার আইন, কাড়ার নয়। কিন্তু বাস্তবে নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ই প্রবল হয়ে উঠেছে। তাই আজও পর্যন্ত কেউ সিএএ আইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেননি। খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও বড়গলা করে বলেছিলেন তিনি আবেদন করবেন। কিন্তু ভয়ে তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একবার আবেদন করলেই তিনি বিদেশি। তাই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছেন। একজন বিদেশি ভোটে জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয় কি করে?
CAA
বিশ বাঁও জলে
×
Comments :0