CPI(M) LOK SABHA WOMEN

মহিলাদের জন্য সাংসদ তহবিলের ৩৩%, ‘আত্মমর্যাদা কেন্দ্র’ গড়তে চায় সিপিআই(এম)

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

রবিবার কলকাতায় মুজফফ্‌র আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে মীনাক্ষী মুখার্জি, দীপ্সিতা ধর, সোনামণি টুডু মুর্মু, জাহানারা খান, সায়রা শাহ হালিম, শ্যামলী প্রধান। ছবি:অমিত কর

‘‘মহিলাদের মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য, পায়ের তলায় মাটি শক্ত করার লড়াই চলে সারা বছর। লোকসভা ভোটে সেই লড়াইকেই তুলে ধরছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হলে মহিলাদের জন্য সিপিআই(এম) সাংসদরা বিশেষ প্রকল্প নেবেন। সাংসদ তহবিলের এক তৃতীয়াংশ টাকা খরচ হবে মহিলাদের আত্মমর্যাদা, আত্মরক্ষার জন্য।’’
এবারের লোকসভা ভোটে সিপিআই(এম)’র মহিলা প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। সিপিআই(এম)’র এই রাজ্য কমিটি সদস্যের সঙ্গে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন মহিলা প্রার্থীরা। ‘নিজের হক্‌ নিজের ধকে’ স্লোগান তুলেছে সিপিআই(এম)।
ছিলেন শ্রীরামপুর কেন্দ্রের প্রার্থী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী দীপ্সিতা ধর, দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম, আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী এবং মহিলা আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা খান, ঝাড়গ্রামের প্রার্থী সোনামণি টুডু মুর্মু এবং বোলপুরের প্রার্থী এবং সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য শ্যামলী প্রধান। 
রবিবার মুজফফ্‌র আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে পরিকল্পনা বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন দীপ্সিতা। তিনি বলেছেন, ‘‘শুধু আত্মরক্ষা বললে মহিলাদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দিই। যেন তাঁরা শারীরিক ভাবে দুর্বল বলে নির্যাতিতা। আসলে সমস্যা সামাজিক। তাই আত্মমর্যাদার কথাও বলছি।’’ তিনি জানান যে বহুচর্চিত ‘নির্ভয়া তহবিল’ থেকে টাকা ব্যবহার ২০১৪’র পর থেকে বন্ধ প্রায়। সাংসদ নির্বাচিত হলে এই তহবিলকে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করবে সিপিআই(এম)।
দীপ্সিতার ব্যাখ্যা, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার আমাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতায়ন হচ্ছে কি? যদি ধরেও নেই হচ্ছে, প্রশ্ন হলো সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আরও কমেছে এগারো সালের পর। যখন কিশোরী নির্যাতিতা হয়ে খুন হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন নাবালিকা মেয়েটির সঙ্গে ধর্ষক ছেলেটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল, অতএব যেন তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা যায়, কী ক’রে নাগরিক হিসেবে ক্ষমতায়ন হয়।’’
দীপ্সিতা জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র পরিকল্পনা। সাংসদ তহবিলের এক তৃতীয়াংশ টাকায় আত্মমর্যাদা কেন্দ্র গড়া হবে। গড়া হবে আত্মরক্ষা সমিতি। যে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা কর্মী হতে পারেন সমিতির প্রতিনিধি। 
আত্মরক্ষা সমিতির কাজ হবে বহুমুখী। আইনি সমস্যায় সহায়তা। মহিলাদের আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। গার্হস্থ্য হিংসায় হেল্পলাইন নম্বর, বেশিভাগই অচল থাকে, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সজীব হেল্পলাইন সযোগ গড়ে তোলার কাজ করতে চায় সিপিআই(এম)। সাংসদের দায়িত্ব সেই লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চায়। 
দীপ্সিতা বলেছেন, ‘‘গণউদ্যোগ গড়া দরকার গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে। তৈর করা হবে  গণসচেতনতা। নির্যাতিতার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ট্রমা কেয়ার ইউনিট করবে আত্মরক্ষা সমিতি। কোনও না কোনও ভাবে নিগ্রহের শিকার হলে শিকার হলে সারাজীবন ‘ট্রমা’ বয়ে বেড়াতে হয়।’’ 
আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে আত্মরক্ষা কেন্দ্রে। তবে দীপ্সিতা বলেন, ‘‘আত্মরক্ষা কেবল শারীরিক শক্তির বিষয় ওপর নয়। সামাজিক শক্তির বিন্যাসে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ভরকেন্দ্র থাকে। তবে শাহজাহানরা থাকলে প্রশিক্ষণও থাকা ভালো।’’ 
বাল্য বিবাহ এবং পণপ্রথা আটকাবে আত্মরক্ষা সমিতি। কন্যাশ্রী থাকলেও মেয়েদের কমবয়সে বিয়ে হচ্ছে। কিভাবে বাঁচানো যায়। তার ভবিষ্যত বা কী। শ্রমজীবী পরিবারের মেয়েদের ভবিষ্যত কী। সরকারি কাজ নেই। হলে ঘুষ দিতে হচ্ছে। ভবিষ্যত সম্পর্কে জানে না। জীবিকা রোজগারের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে এই পরিবারের ছাত্রী বা যুবতীদের ধারণা দেওয়ার কাজও করবে আত্মমর্যাদা কেন্দ্র।
পরিকল্পনার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিধায়ক সাংসদদের মধ্যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে, মামলা রয়েছ। কোন রাজ্যে, কোন দেশে আমরা থাকছি। হাড়হিম করা সন্ত্রাস আমরা দেখছি। জেলের ভেতর ১৯৬ জন মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। আমরা কোথায় রয়েছি। আরেকদিকে দেখছি উন্নাও, হাথরসের মতো একের পর এক ঘটনায় বিজেপি’র ভূমিকা।’’ দুই বিপদকেই রোখার ডাক দেন তিনি।

Comments :0

Login to leave a comment