US CAMPUS PROTEST

মার্কিন ছাত্র বি‍ক্ষোভ ভিয়েতনাম যুদ্ধের স্মৃতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় নিরীহ মানুষের উপর মার্কিন মদত পুষ্ট ইজরায়েলি বর্বরতা ও নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যা লয়গুলিতে ছাত্র বিক্ষোভ দ্রুত ছড়াতে শুরু করেছে। সেই ছাত্র বিক্ষোভের ধাক্কায় এসে আচড়ে পড়ছে অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও। ইতিমধ্যে কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে, পোস্টার লাগিয়ে বিক্ষোভ অবস্থানে শামিল হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। সর্বত্র এই যুদ্ধবিরোধী ও গণহত্যা বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভে খ্রিস্টান, মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু সহ নানান ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন রয়েছে তেমনি আছে আরব দুনিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকি প্যালেস্তাইন এবং ইজরায়েল থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরাও রয়েছে। ফলে মার্কিন ভূখণ্ডে এবং অন্য বেশ কয়েকটি দেশের ক্যাম্পাসে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চললেও আদতে সেটা আন্তর্জাতিক। সর্বত্র ছাত্রদের প্রধান দাবি গাজায় ইজরায়েলি গণহত্যা বন্ধ হোক। তারা যুদ্ধ চায় না। শান্তির পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে। যুদ্ধোন্মাদ এই বিশ্বে যৌবনের দূতরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির যুদ্ধে ক্যাম্পাসগুলিকে শান্তির রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে। তারা স্লোগান দিচ্ছে ধ্বংসের বিরুদ্ধে, শিশু হত্যার বিরুদ্ধে, বর্বরতার বিরুদ্ধে সভ্য মানবিক সমাজের পক্ষে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত অনুচর জায়নবাদী অতি দক্ষিণপন্থী ইজরায়েল ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে প্যালেস্তাইনের গাজায় নির্বিচারে বোমা, বন্দুক, ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে কার্যত সবকিছু ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। টিকে নেই কোনও হাসপাতাল, শিক্ষাকেন্দ্র, এমনকি বসতবাড়িও। আশ্রয়হারা লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে। সেই শিবিরও ইজরায়েলি খুনিদের হাতে নিরাপদ নয়। সেখানেও আক্রমণ চালিয়ে রক্তের হোলি খেলছে ইজরায়েলি নরপিশাচরা। খাবার নেই, পানীয় জল নেই, নেই বেঁচে থাকার ন্যূনতম উপকরণ। গোলাবারুদে সরাসরি মারার পাশাপাশি স্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্ণ ব্যবস্থা করে রেখেছে ইজরায়েলের দখলদার সেনারা। না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মিছিল চলছে গাঁজায়। ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে। আহত-জখমের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। মৃতদের মধ্যে ১৪ হাজার নিষ্পাপ ‍‌শিশু। ২০ হাজার শিশু বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ। মানবতার বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর অপরাধ চালিয়ে বুক ফুলিয়ে এই নরমেধ যজ্ঞকে বৈধতা দিয়ে চলেছে ইজরায়েল। ইজরায়েলের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ পশ্চিমী দেশগুলি। রাষ্ট্রসঙ্ঘে বারেবারে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এলেও তাকে আটকে দেয় আমেরিকা। মার্কিন মদতেই ইজরায়েল আজও গণহত্যা চালানোর দুঃসাহস দেখিয়ে তুরস্ক ইজরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করেছে। কলম্বিয়া ও বলিভিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আরও বহু দেশ ইজরায়েলের দূরত্ব তৈরি করেছে।
মার্কিন সরকারের এমন যুদ্ধোন্মাদ অমানবিকতা মেনে নিতে পারেনি সেদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা। গত দু’সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছে তারা। বিক্ষোভ দমনে চলছে নির্মম পুলিশি অভিযান। ইতিমধ্যে দু’হাজারের বে‍‌শি ছাত্র-ছাত্রী গ্রেপ্তার হয়েছে। এত দমনপীড়ন চলছে ততই বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে। ৩৩টি শ্বিবিদ্যালয় ক্যাম্পা‍সে এখন চলছে তুমুল প্রতিবাদ। প্রতিবাদের সেই ঢেউ আলোড়িত করেছে অন্যদে‍‌শের ছাত্র-ছাত্রীদেরও। ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার ডজনের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গেড়ে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রদের এই বিক্ষোভকে সমর্থন করছেন অধ্যাপকরা। অনেক অধ্যাপকের মতে বাইরের বিষয়ে মার্কিন ছাত্র-ছাত্রীদের এমন ব্যাপকতর বিক্ষোভ গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। এ যেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে অর্ধশতাব্দী আগের উত্তাল ছাত্র বিক্ষোভেরই প্রতিচ্ছবি।

Comments :0

Login to leave a comment