রাত আটটা। শক্তিগড়ে রাস্তার ধারে সারি সারি ল্যাংচার দোকান। ব্যস্ততম সময়। ঠিক তখনই ঘটল প্রকাশ্য শুটআউট- গুলিবৃষ্টি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা’র। আহত আরেকজন। আততায়ীরা একটি নীল রঙের চারচাকায় ছিল। টানা ছয় রাউন্ড গুলি চালিয়ে কলকাতার দিকে দ্রুত গতিতে চম্পট দেয় ঐ গাড়িটি। রাত পর্যন্ত আততায়ীদের গাড়িটিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
শক্তিগড়ের এই শুট আউটের ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষজনও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঐ সময় দোকানগুলিতে সাধারণভাবে ভিড় থাকায় দ্রুত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনাক্রমে স্পষ্ট, এটা স্রেফ অপরাধীদের হামলা, শুট আউটের ঘটনা নয়। নির্দিষ্ট পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গোটা ঘটনায় এমন কিছু সূত্র মিলছে যা রীতিমতো উদ্বেগজনক, রাজ্য পুলিশ সূত্রেই মিলছে এমন তথ্য।
গুলিবৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ভিতরেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে দুর্গাপুরের এক কয়লা মাফিয়া। দুর্গাপুরে তাঁর হোটেল ব্যবসাও আছে। আসানসোল কয়লাঞ্চলের পরিচিত নাম রাজু ঝা। জানা গেছে, এদিন সন্ধ্যায় দুর্গাপুরে তাঁর হোটেল থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রাজু ঝা। সঙ্গে ছিলেন বারিন মুখার্জি বলে এক ব্যক্তি। গাড়িটি শেখ আবদুল লতিফের। সাদা রঙের ফরচুনা। গাড়ির নম্বর ডব্লিউবি ৪৮ডি ৭০৩২। গাড়ির মালিক শেখ আবদুল লতিফও গাড়িতেই ছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন নূর নামের এক ব্যক্তি। এখানেই দেখা দিয়েছে একাধিক প্রশ্ন।
কে এই লতিফ? গোরু পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত এই শেখ আবদুল লতিফ। গত বছরের ৮ আগস্ট সিবিআই গোরু পাচারকাণ্ডে যে চার্জশিট দায়ের করেছিল তাতে গোরু পাচারের কিংপিন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এনামুল হকের আত্মীয় শেখ আবদুল লতিফের নাম ছিল। যদিও ফেরার। গ্রেপ্তার হয়নি। ইলামবাজারের বাসিন্দা। স্থানীয় পশুহাট সুখবাজার অনুব্রতের লোক হিসাবে নিয়ন্ত্রণ করত এই ব্যক্তি। কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাকে নিজের গাড়িতে নিয়ে কলকাতার দিকে কেন যাচ্ছিলেন শেখ আবদুল লতিফ, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, দুর্গাপুরের দিক থেকে আসা ঐ সাদা রঙের ফরচুনা গাড়ি নির্দিষ্ট একটি ল্যাংচার দোকানে দাঁড়ায়। ওখানেই মুড়ি কেনেন রাজু ঝা। গুলি চলার মুহূর্তে গাড়িতে ছিলেন না শেখ আবদুল লতিফ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে সেই সময় তিনি নাকি বাথরুমে গিয়েছিলেন। গাড়ির ভিতরে পিছনের সিটে তখন রাজু ঝা, সঙ্গে বারিন মুখার্জি। পরপর গুলি। কাচ ভেদ করে গুলি লাগে রাজু ঝায়ের বুকে। হাতে গুলি লাগে আরেকজনের।
গুলি চালানোর পরেই আততায়ীরা গাড়িতে ঝড়ের গতিতে কলকাতার দিকে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে রাজু ঝাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ গুলিবিদ্ধ গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। তদন্ত শুরু করেছে।
রাজু ঝা কয়লা কারবারেরই একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে দুর্গাপুরে একটি যোগদান মেলায় দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পতাকা নিয়ে বিজেপি’তে যোগ দিয়েছিলেন। কয়লা পাচারকাণ্ডে লালার গ্রেপ্তারির পরে ক্রমেই প্রভাব বাড়ছিল রাজু ঝায়ের। ঘটনার পিছনে কোনও রাজনৈতিক যোগ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Comments :0