Exit Poll

জিতছে গণতন্ত্র

সম্পাদকীয় বিভাগ

সাত দফায় অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে এখন সকলের নজর ৪ জুন ভোগ গণনার ফলাফলের দিকে। মধ্যবর্তী সময়ে ফলাফল নিয়ে চর্চার জন্য বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এই ধরনের সমীক্ষার ফল অনেকটাই জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎবাণীর মতো। এত কম সংখ্যক নমুনার ভিত্তিতে এই সমীক্ষা হয় যে তাতে প্রকৃত বাস্তবকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকটা আন্দাজে ঢিল ছোঁড়ার মতো। লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে। রাশি বিজ্ঞানের সমস্ত শর্ত মেনে যেভাবে নমুনা সংগ্রহ করে সমীক্ষা করার প্রয়োজন তার সিকিভাগও এক্ষেত্রে হয় না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল কাজে লাগে না। একমাত্র যখন শাসক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে জোরালো হাওয়া থাকে তখন এই ধরনের সমীক্ষায় ফলাফলের কিছুটা প্রবণতা ধরা পড়ে। যখন তেমন কোনও হাওয়া থাকে না, আমজনতার মধ্যে অনেকাংশে নীরবতা লক্ষ্য করা যায়। উভয়পক্ষই জেতা-হারার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে তখন এই ধরনের সমীক্ষা কোনও কাজে লাগে না। সেটা নিয়ে অকারণ চর্চায় সময় নষ্ট হয় শুধু।

এবছর নির্বাচনে হাওয়া বলতে যা বোঝায় তার কোনও কিছুই ছিল না। অবশ্য মোদী অতি প্রত্যাশী ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৪০০ আসনে জেতার। সেই মতো প্রচারের ছক কষে আসরে নেমেছিলেন। গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনও ধরনের ভোটে প্রধান বিবেচ্য হয় সরকারের পূর্ব প্রতিশ্রুতি কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন। তাই প্রচারের অনুষঙ্গ হবার কথা কাজ। শুরুতে মোদীরা সেই মতোই প্রচারে নেমেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝে যান কাজের বিচারে ভোট হলে গো হারা অনিবার্য। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রচারের ধারা বদলে সরাসরি ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক ও জাতপাতের বিভাজনে ঢুকে পড়লেন। যেভাবেই হোক সংখ্যাগুরু ভোটকে এক জায়গায় না আনলে জয় অসম্ভব। পাশাপাশি শুরুতে বিরোধী ইন্ডিয়া মঞ্চও ছিল অনেকটা ছাড়া ছাড়া। জয় সম্পর্কে তারা ততটা প্রত্যাশী বা আত্মবিশ্বাসী ছিল না। কিন্তু ভোট যত এগিয়েছে ততই তাদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। যৌথ প্রচারের মাত্রা বেড়েছে। জনগণের পক্ষ থেকেও সাড়া বেড়েছে। শেষের দিকে মোদী-শাহদের মনে হারের ভীতি যত বেড়েছে ইন্ডিয়া তত উদ্দীপ্ত হয়েছে। আড়াই-তিন মাস ধরে এই নির্বাচনী লড়াইয়ের চরিত্র ও বৈশিষ্ট পরিবর্তন বুথ ফেরত সমীক্ষা ধরতে পারবে না। সেটা অনেকটা আন্দাজ করতে পারে গ্রাউন্ড জিরোতে থেকে লড়াই করে তারা। আর তাদের কাছ থেকেই পাওয়া বিভিন্ন দলের রিপোর্টের সংমিশ্রণ জানাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর বিদায়ের পূর্বাভাস। শেষ দিন দিল্লিতে ইন্ডিয়া মঞ্চের নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করে যা বুঝেছেন তাতে বিরোধী মঞ্চ ২৯৫ আসনে জিততে চলেছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রের, ধর্মনিরপেক্ষতার জয় অনিবার্য।

Comments :0

Login to leave a comment