কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর শনিবার থেকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁ, সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির তৎপরতায় রাজ্য রাজনীতিতে ফের হৈচৈ পড়ে যায়। একদিকে সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শাহজাহান শেখ অন্যদিকে বনগাঁর শঙ্কর আঢ্য। দুদিন কেটে যাওয়ার পরেও এখনও অধরা শাহজাহান সহ বাকিরা। শঙ্কর আঢ্য ইডির হেপাজতে। বনগাঁ পৌরসভার এই প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়িতে শুক্রবার তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ইডি। একই দিনে একই সময়ে ইডি সন্দেশখালিতে জেলা পরিষদ সদস্য সেখ শাজাহানের বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় ইডির আধিকারীকরা সহ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক সন্দেশখালি ১-ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের মত্স্যস ও প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সেখ শাহজাহানের এই বিপুল সম্পত্তি বেআইনি ব্যাবসা ও রেশন দুর্নীতির টাকা থেকেই, বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে শাহজাহানের দিকে নজর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির।
যদিও শুক্রবার সকালে ইডির উপর হামলার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহজাহান। সূত্রের খবর তিনি বাংলাদেশে পালানোরও চেষ্টাও করেছিলেন। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের জন্য সীমান্ত সিল থাকায় তাকে ফিরে আসতে হয়। এখন শাহজাহান ফেরার। ৬০ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও অধরা শাহজাহান শেখ। তারই প্রেরিত অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পরেও শাহজাহানের গ্রেপ্তারি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে অভিযোগ।
এদিকে বিগত কয়েক বছর আগে একটি খুনের ঘটনায় শঙ্কর আঢ্যের জড়িত থাকার বিষয়ে জানা গিয়েছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে খুন হয়েছিলেন বনগাঁ পৌরসভা এলাকার কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের যুব নেতা হিমাংশু বৈরাগী। এই ঘটনার নেপথ্যেও তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে দাবি মৃত কাউন্সিলারের পরিবারের। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ দাপুটে তৃণমূল নেতা শঙ্করের নামে অভিযোগটুকুও দায়ের করতে পারেননি তাঁরা। এমনকী, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় পুরো বৈরাগী পরিবারকে। রাকেশের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মা পর্যন্ত সেই ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাননি। নাতিকে হারিয়ে উল্টে জেল খাটতে হয় তাঁকে। পরে জামিনে ছাড়া পেলেও শঙ্করের নামে আর এফআইআর দায়ের করা হয়নি। দোর্দন্ড প্রতাপ শঙ্কর আঢ্যের চাপের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয় বৈরাগী পরিবার। হিমাংশুর বাবা রাকেশ বৈরাগীর অভিযোগ, ছেলের খুনের মামলায় কোথাও অভিযুক্ত হিসেবে শঙ্করের নাম পাওয়া যাবে না। কারণ, সেই সময় শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের লোকজন ক্রমাগত তাঁদের চাপ এবং হুমকি দিতে থাকে। শঙ্করের নামে কোন অভিযোগ দায়ের করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। ১০ বছর কেটে গেছে, হিমাংশু হত্যা মামলা এখন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিচারাধীন। কাউন্সিলর হিমাংশু বৈরাগী খুনের মাস্টারমাইন্ড শঙ্করের সাজা হওয়া তো দূর, উল্টে এতদিন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। সেই মামলায় না হলেও রেশন দুর্নীতির তদন্তে শঙ্কর গ্রেপ্তার হওয়ায় খুশির হাওয়া বৈরাগী পরিবারে। এখন সুবিচারের আশায় দিন গুনছেন তাঁরা।
Shahjahan Sheikh
৬০ ঘন্টা পার এখনও অধরা শাহজাহান সহ বাকিরা
×
Comments :0