Dengue Jalpaiguri

ডেঙ্গু নিয়ে দিশাহারা জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন

জেলা

Dengue Jalpaiguri

দীপশুভ্র সান্যাল- জলপাইগুড়ি

রাজ্যে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা এড়িয়ে যাচ্ছে। জেলার প্রতিটি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগাযোগ করে ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করে চলেছেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। কারণ রাজ্য স্বাস্থ দপ্তর ডেঙ্গু সংক্রান্ত কোন সঠিক  তথ্য দিচ্ছে না। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে উঠে আসছে ডেঙ্গুর ভয়াভয়তা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জমে থাকা জল ও আবর্জনা রয়ে যাচ্ছে। এই কারণে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কর্মসূচি নেই। প্রশাসনের নেই এলাকা পরিষ্কারের কোনো উদ্যোগ। এমনই অভিযোগ তুলছেন  বিভিন্ন এলাকার সাধারন মানুষ। অন্য দিকে কলকাতার মেয়র বলেছেন, এখন করোনা নেই, লকডাউন নেই। তাই মানুষ কাজের মধ্যে, যাওয়া-আসার মধ্যে রয়েছেন। এই কারণে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। সতর্কতার প্রচার জোরদার চলছে, আরও বাড়ানো হবে এরপর। তথ্য বলছে কলকাতায় এই মুহূর্তে অন্তত ৪ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। কলকাতার এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী মশা। ওদিকে উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলী, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি, দুই বর্ধমান এবং মেদিনীপুর জেলা থেকেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। প্রতি সপ্তাহেই লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী, চলতি মরশুমে এই পর্যন্ত রাজ্যে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুর শিকার হয়ে ৪৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলেও বেসরকারি সূত্র জানাচ্ছে। তবে রাজ্য সরকার মাত্র ৩ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে।  


এদিন সকালে জেলা স্বাস্থ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এই মূহুর্তে জলপাইগুড়ি জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছুঁতে চলেছে। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিন জন। মযয়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন জন। মালবাজার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি চার জন। জেলার অন্তর্গত শিলিগুড়ি পৌর এলাকা সহ রাজগঞ্জ ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত একশো জন। ময়নাগুড়ি ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৬৮জন। ময়নাগুড়ি পৌরসভা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১০ জন।  জলপাইগুড়ি পৌরসভা এলাকাতেও আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ২২ জন। জেলার বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে ডেঙ্গিু আক্রান্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের হাতে নেই বলে জানিয়েছেন এক আধিকারিক। তাঁর দাবি ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে যথেষ্টই বেগ পেতে হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর জলপাইগুড়ি জেলাশাসক শামা পারভীন ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু মোকাবিলায় জেলা জুড়ে সতর্কতা জারি করেছেন বলে। শারদোৎসবের মুখে ভয়ঙ্কর বিপদের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারীকরা। তাদের কথায় , বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতে নতুন বোর্ড গঠনের পরও ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজে তেমন নজরদারি দেখা যাচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব ঘটছে।
জেলার গ্রামীণ জনপদে পরিষ্কার জমা জল অপসারণের কাজ নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। বেশিরভাগ হাট বাজারগুলিতে জমা জল সাফাই করতে তৎপরতা বাড়ানো এই মুহূর্তে খুবই জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। ডেঙ্গু প্রতিরোধের কাজে নজরদারি আরও বেশি বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে শিবির বসানোর পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারীকরা।


জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার বলেন, ‘‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্টোর কন্ট্রোল টিমের কাজে নজরদারি বাড়ানো খুবই জরুরি। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজ করা উচিত। ডেঙ্গু মোকাবিলায় কোথাও কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’’।

Comments :0

Login to leave a comment