Editorials on Gujrat model

গুজরাট মডেল

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি দে‍‌শের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন ‘বন্দে ভারত’ প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল গুজরাটে। বিদেশি প্রযুক্তির বুলেট ট্রেন প্রথম চলবে গুজরাটে। প্রথম যাত্রীবাহী ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হয়েছিল গুজরাটে। বিগত প্রায় এক দশক ধরে সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগের সেরা ঠিকানা গুজরাট। শিল্পোৎপাদনের নিরিখে মাথাপিছু আয়ে সেরা গুজরাট। মোদী সরকারের চোখে গুজরাট প্রথম পছন্দ। কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান সফরে এলে সাধারণভাবে রাজধানীতেই তাঁদের যাবতীয় কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। এটাই বরাবরের প্রথা। গুজরাটের প্রতি অতি ভালোবাসার দৌলতে নরেন্দ্র মোদী সেই প্রথা ভেঙে বিশ্বের সবচেয়ে দুই দেশ আমেরিকা ও চীনের রাষ্ট্রপ্রধানদের ভারত সফরের সময় দিল্লির বদলে গুজরাটকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ভারতের কর্পোরেট পুঁজির অধিকাংশের মালিক গুজরাটের ধনপতিরা। গুজরাটের শিল্পপতিদের দখলে দেশের শিল্প-বাণিজ্যের লাগাম। বিগত সাত-আট বছরে ভারতের অর্থনীতিতে গুজরাটের প্রভাব সর্বাধিক গতি পেয়েছে। দেশের অধিকাংশ বিমানবন্দর এবং জলবন্দর হস্তান্তরিত হয়েছে মোদীর বন্ধু শিল্পপতি গৌতম আদানির হাতে। বাকিগুলি হাতাতে সম্ভবত বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। যেভাবে রেল বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে তাতে একদিন দেখা যাবে ভারতীয় রেলের মালিক হয়ে গেছে গুজরাটের কোনও শিল্পপতি। একইভাবে হস্তান্তর হতে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প, ব্যাঙ্ক, বিমা ইত্যাদি। বিজেপি-আরএসএস সরকারের প্রধান নরেন্দ্র মোদী দুনিয়াকে সাথে সাথে ভারতবাসী‍কেও এই বার্তা দিতে চাইছেন ভারত মানেই গুজরাট, গুজরাট মানেই ভারত। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় মোদীরা গুজরাট মডেলকেই তুলে ধরেছিলেন গোটা দেশে। বলেছিলেন যেভাবে গুজরাট অগ্রসর হয়েছে, উন্নত হয়েছে মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে সেভাবে গোটা দেশ তরতর করে উন্নত হবে। গোটা দেশ হবে গুজরাটের মতো। মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর গুজরাট মডেল কার্যত হাওয়া। এখন গুজরাটই হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানজ্ঞান। তিনি যতটা না ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন তার থেকে অনেক বেশি গুজরাটের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। গোটা দে‍‌শের শ্রমজীবী মানুষের শ্রম নিঙড়ে একদিকে যেমন বিত্তবানদের সম্পদের পাহাড় বানিয়ে দিচ্ছেন অন্যদিকে তেমনি গোটা দেশকে শুকিয়ে গুজরাটকে সুজলা-সুফলা করছেন।
ধরে নেওয়া যায় এই এহেন গুজরাটের মানুষ সবচেয়ে সুখী ও আত্মতৃপ্ত। কিন্তু বাস্তব কি তাই? মোটেই না। আদানিদের মতো ধনপতিদের পোয়াবারো হলেও সাধারণ গুজরাটিরা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই। গুজরাটে জীবন যাপনে একটা বড় অংশের গুজরাটির অনীহা বাড়াচ্ছে। তারা ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশে চলে যেতে চাইছেন। বৈধ পথে সেটা সম্ভব নয় বলে বেছে নিচ্ছেন অবৈধ পথ। এদের বিদেশে পাঠানোর জন্য গুজরাটে মানব পাচারকারীরা অতি সক্রিয়। বহু এজেন্ট কাজ করছে রাজ্যজুড়ে। বিশেষ করে উত্তর গুজরাটে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ভারী ব্যাগ, বাচ্চা কোলে নিয়ে কীভাবে জোরে দৌড়ানো যায়, কম খেয়ে কীভাবে দীর্ঘদিন থাকা যায়। কীভাবে মেক্সিকো সীমান্তে ১৫ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকানো যায়, কাঁটা তারের বেড়া ডিঙানো যায় ইত্যাদি। মোদীর রাজ্যে রীতিমতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে শেখানো হচ্ছে আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের কৌশল। কয়েকদিন আগে ব্রিজ কুমার যাদব সহ ৪০ জনের এক গুজরাটি দল মেক্সিকোর রিজুয়ানা এলাকা দিয়ে পাঁচিল টপকে আমেরিকায় ঢোকার সময় যাদব তার তিন বছরের ছেলে সহ পড়ে যায়। ছেলে এবং স্ত্রী গুরুতর আহত হলেও যাদবের মৃত্যু ঘটে। গুজরাট মডেলের প্রচারের বিপরীতে এটা অন্য বাস্তব।
 

Comments :0

Login to leave a comment