Farmers Long march

ফের দাবি আদায় করেই ছাড়লেন মহারাষ্ট্রের কৃষকরা

জাতীয়

Farmers Long march

আবারও দাবি আদায় করেই ছাড়লেন কৃষকরা। সারা ভারত কিষানসভার ডাকে ১৯টি জেলা থেকে ১৫হাজারের বেশি কৃষক বড় জয় আদায়েই শেষ হলো আকোলে লং মার্চও। নাসিক-মুম্বাই লঙ মার্চের পর এক মাসের ব্যবধানে ফের দাবি আদায়েই আপাতত স্থগিত হলো কিষান আন্দোলন। 


তিনদিনের লঙ মার্চে নামার আগেই হুঁশিয়ারি ছিল, দাবি মানা না হলে শেষ গন্তব্য লোনিতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিক্ষোভে বসে থাকবেন কৃষকরা। কিন্তু লঙ মার্চ একদিন গড়াতেই সমস্ত দাবিই মেনে নিতে বাধ্য হলো মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্য সরকারের তরফে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং সময় বেঁধে সব দাবি পূরণের আশ্বাস আদায় করেই বৃহস্পতিবার আপাতত স্থগিত হলো সারা ভারত কৃষকসভার নেতৃত্বে আকোলে থেকে লোনি পর্যন্ত আহমেদনগর জেলার এই কৃষক পদযাত্রার। 


এদিন দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জীবন-জীবিকার দাবিদাওয়া নিয়ে কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজস্ব ও ডেয়ারি উন্নয়ন মন্ত্রী রামকৃষ্ণ ভিখে পাতিল। বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আশ্বাস দিয়েছি যে সময় বেঁধে সব সিদ্ধান্তই রূপায়ণ করা হবে।’ কিষানসভা নেতাদের নিয়ে ওই যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে পাতিল আরও বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কিষানসভা লঙ মার্চ থেকে আপাতত সরে আসায় তিনি খুবই খুশি। 
গত মাসেই এআইকেএস-এর ডাকে নাসিক থেকে মুম্বাই লঙ মার্চে শামিল হয়েছিলেন কৃষকরা। পেঁয়াজের দাম থেকে জমির মালিকানা, ঋণ মকুব সহ ১৪দফা দাবিতে ছিল সেই লঙ মার্চ। চারদিন পায়ে হেঁটে পদযাত্রা যখন মুম্বাই উপকণ্ঠে পৌঁছায়, তখনই মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কৃষকসভার দফায় দফায় আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। 

পেঁয়াজের ভরতুকি কুইন্টালে ৫০টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০টাকা করে দেওয়া হয়। বাকি দাবিগুলি নিয়ে তৎক্ষণাৎ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বনভূমি অধিকারের বিষয়টি রূপায়ণের জন্য মন্ত্রী, সরকারি আধিকারিক ও কিষানসভার নেতাদের নিয়ে যৌথ কমিটি ঘোষণা করা হয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে নিজে এব্যাপারে বিস্তারিত বিবৃতি দেন বিধানসভায়। তারপরই আন্দোলন স্থগিত করেন কৃষক নেতারা। সেসময়েও কৃষকসভা জানিয়ে দিয়েছিল, আন্দোলন প্রত্যাহার নয়, স্থগিত রাখা হলো। সরকার সব দাবি না মানলে আবার শুরু হবে লড়াই। বৃহস্পতিবার আহমেদনগরের কৃষকরাও লঙ মার্চ আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা করলেও জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি ঠিকঠাক পূরণ না হলে আবারও পথে নামবেন কৃষকরা।
আর এবার চাষজমির জমির পাট্টা চাই, দুধ,  তুলো,  সয়াবিন,  অড়হর সহ ফসলের লাভজনক দাম চাই, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা চাই, এমন কৃষি বিষয়ক বেশ কিছু দাবির পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকদের বিমা, আবাসন এবং অঙ্গনওয়াড়ি, আশা, মিড ডে মিল কর্মী ও অন্যান্য অসংগঠিত কর্মীদের জন্য বর্ধিত হারে সাম্মানিক ঘোষণার দাবিতে বুধবার আকোলে থেকে লঙ মার্চ শুরু করেছিলেন হাজার পনেরোরও বেশি কৃষক। কথা ছিল, টানা তিন দিন বিভিন্ন এলাকা হয়ে শুক্রবার পৌঁছাবেন আহমেদনগর জেলার লোনিতে মহারাষ্ট্রের রাজস্ব ও ডেয়ারি উন্নয়ন মন্ত্রী রামকৃষ্ণ ভিখে পাতিলের দপ্তরের সামনে। দাবি আদায় না হলে, অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানেই অবরোধ করে রাখবেন কৃষকরা।


বুধবার সারাদিন পথ হেঁটে রাতে সেই কৃষক পদযাত্রা সঙ্গমনের তহশিলের ধান্ডারফল গ্রামে পৌঁছেছিল। রাতটা কেটেছে সেখানকার রামেশ্বরম মন্দিরে সামনের মাঠে। গতকাল পদযাত্রায় কৃষকদের সঙ্গে পথ হেঁটেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক পি সাইনাথ। বৃহস্পতিবার সকালে ধান্ডারফলের সভায় ভাষণ দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আর রামাকুমার।


বড় সংখ্যায় কৃষকরা রাজস্ব মন্ত্রীর শহর লোনিতে পৌঁছে যাচ্ছে, আর সেখানে মহাপাড়াও অবরুদ্ধ করে রাখবে লোনিকে, এমনটা বুঝেই সরকার পক্ষ মাথা নত করে। খবর পাঠানো হয়, আপাতত লঙ মার্চ স্থগিত রেখে আলোচনায় আসুন। সেই মতোই বৃহস্পতিবার দুপুরে সঙ্গমনেরে কৃষক নেতাদের আলোচনায় বসেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী। কৃষকসভার দাবি মতো রাধাকৃষ্ণ ভিখে পাতিল ছাড়াও সেই বৈঠকে ছিলেন আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী বিজয়কুমার গাভিট ও শ্রম মন্ত্রী সুরেশ খাড়ে। আর অশোক ধাওয়ালের নেতৃত্বে এআইকেএস-এর প্রতিনিধি দলে বৈঠকে হাজির ছিলেন অজিত নাওয়ালে, উমেশ দেশমুখ, কিষান গুজর সব সমস্ত পদাধিকারী, সিআইটিইউ-র ডি এল কারাড ও আহমেদনগরের নির্বাচিত নেতা। 


প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনায় মন্ত্রীরা এআইকেএস-এর বেশিরভাগ দাবিই মেনে নিয়েছেন। ঠিক হয়, বিকেলে মন্ত্রীরা ধান্ডারফলে অবস্থানরত কৃষকদের কাছে এসে সমস্ত দাবি মানার কথা জানিয়ে যাবেন। সেই মতোই বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানেই বিজয় সমাবেশে এসে ভিখে পাতিল সহ তিন মন্ত্রী আসেন। সমবেত কৃষকদের জানান, সরকারের আপনাদের সব দাবিই মানছে। সময়ে বেঁধে এগুলির এবার রূপায়ণ হবে। এছাড়াও এই সমাবেশে ভাষণ দেন অশোক ধাওলে, কৃষক নেতা বাদল সরোজ, অজিত নাওলে প্রমুখ।

Comments :0

Login to leave a comment