Raigunj

অভাবে জোটেনি অ্যাম্বুলেন্স, মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে ফিরলেন বাবা!

জেলা

অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে সদ্য মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগে ঢুকিয়ে বেসরকারি বাসে চাপিয়ে আনতে বাধ্য হলেন এক শোকার্ত বাবা। অত্যন্ত মর্মান্তিক ও ভয়াবহ এই ঘটনার সাক্ষী রইল কালিয়াগঞ্জ।
অ্যাম্বুলেন্সের টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেৃও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। কপর্দকশূন্য বাবা টাকার অভাবে ছেলের মৃতদেহ ব্যাগে ভরে বাড়িতে পৌঁছালেন। রবিবার এ খবর জানাজানি হতেই ফের শোরগোল উঠল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে। পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রেড ভলান্টিয়াররা।
পাঁচ মাসের যমজ দুই শিশু সন্তান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুধবার রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে আনা হয়। দুজনের মধ্যে এক শিশুর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই শিশুকে রেফার করা হয়। বাবা অসীম দেবশর্মা ছেলেকে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যান সেখানে। অপর এক শিশু সন্তানকে নিয়ে রায়গঞ্জ হাসপাতালেই থেকে যান তাদের মা। শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ মাসের শিশু সন্তানটির মৃত্যু হয়।
পরিবারটিতে অভাব নিত্যসঙ্গী। দুই শিশুর এই বাবা পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। যেটুকু টাকা সম্বল ছিল তা চিকিৎসা করাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। ৫ মাসের শিশু সন্তানের দেহ নিয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরবেন— সেই দুশ্চিন্তায় অধীর হয়ে পড়েন অসীম দেববর্মা। সন্তানের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসতে গিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। 
প্রথমে ভেবেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স করে ছেলের দেহ ফিরিয়ে আনবেন বাড়িতেই। কিন্তু ৮ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করে অ্যাম্বুলেন্স। সে টাকা জোগাড় করা তো সম্ভব হয়নি পুত্রহারা বাবার। তাঁর অভিযোগ, ছেলের দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও কাজের কাজ হয়নি। এমনকি কেউ শোনেননি তাঁর কথা। অবশেষে রবিবার ভোরে জামাকাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে মৃত সন্তানের দেহ নিয়ে বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এইভাবেই নিথর শিশুর দেহ পৌঁছায় কালিয়াগঞ্জে। অমানবিক এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে উত্তর দিনাজপুর জেলায়। 
যদিও কালিয়াগঞ্জ পৌঁছানোর পর অবশ্য ঘটনার কথা জানতে পেরে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন কালিয়াগঞ্জ শহরের এক সহৃদয় ব্যক্তি। পুত্রহারা বাবা অসীম দেবশর্মা বলেন, যাতায়াত ও চিকিৎসার জন্যই সম্বল ১৬০০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আরও আট হাজার টাকা জোগাড় করতে পারিনি। শিলিগুড়িতে কোথায় টাকা পাব?  বাধ্য হয়েই ব্যাগে ভরে বাসে করে শিশুর দেহ নিয়ে এসেছি। 
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা দেবাশিস পাট্টাদার বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা জানা ছিল না। জানা থাকলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করাই যেত। এই রাজ্যে অসহায় মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও ব্যবস্থা নেই, এটাই আশ্চর্যের। গরিব মানুষের বেঁচে থাকাটা এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার রেড ভলান্টিয়ার কাজল সাহা, রিপন পাল, বুবাই চ্যাটার্জি প্রমুখ বলেন, মোস্তাফানগর ডাঙিপাড়ার বাড়িতে অসীম দেবশর্মার সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে যাবেন। এই পরিবারকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রেড ভলান্টিয়াররা।

 

Comments :0

Login to leave a comment