North Bengal weather

ফের দুর্যোগের আশঙ্কা উত্তরে, উৎকণ্ঠায় বন্যা বিধ্বস্ত মানুষ

জেলা

গত ৫ অক্টোবর ধূপগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনও দগদগে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের দুর্যোগের কালো মেঘ ঘনিয়েছে উত্তরবঙ্গের আকাশে। মন্থার ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আগামী কয়েকদিনে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। এই সতর্কবার্তায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জলপাইগুড়ি জেলার বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাবাসী, যাঁদের কাছে বিগত ২৫ দিনেও পৌঁছায়নি সরকারের কোনো কার্যকরী ও স্থায়ী সাহায্য।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, বৃহস্পতিবার থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 
​এই সতর্কবার্তা অনুযায়ী, বুধবার রাতেই ধূপগুড়ি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার বন্যা বিধ্বস্ত ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি ও নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙা এলাকায় বুধবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
কিন্তু বৃষ্টি পড়া শুরু হতেই এই এলাকার বাসিন্দাদের চোখে ভেসে উঠছে গত ৫ অক্টোবরের সেই ভয়াবহ, আকস্মিক বন্যার স্মৃতি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো— বন্যার প্রায় ২৫ দিন কেটে গেলেও আজও ভাঙা বাঁধের সংস্কার হয়নি। কৃষিজমি থেকে সরানো হয়নি পলি, যার ফলে ফসল তোলার কোনো আশাই নেই।
​প্রশাসনের কোনো সক্রিয় বা কার্যকর উদ্যোগ দেখা না যাওয়ায় এখনও বহু দুর্গত মানুষ পলিথিনের তাঁবুতেই অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের তরফে আবাসন নির্মাণের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ফের যদি ভারী বৃষ্টি হয়, তাহলে গধেয়ারকুঠি ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা আবারও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাব এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে চরম ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
​স্থানীয় দুর্গত চম্পা মন্ডল, সরলা সরকার, সুখবালা রায়ের বক্তব্য, “বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখনই যদি বাঁধ মেরামত, কৃষিজমি পুনরুদ্ধার ও ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু না হয়, তাহলে সামান্য বৃষ্টিতেই ফের বিপর্যয় নেমে আসবে। আমরা ত্রাণের রাজনীতি চাই না, চাই স্থায়ী সমাধান।”
​বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকে তীব্র কটাক্ষ করে স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতৃত্ব নিরঞ্জন রায় বলেন, “সরকার বন্যা পরবর্তী স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ত্রাণ নিয়ে শুধু ফটোশুট হয়েছে, কিন্তু ভাঙা বাঁধ মেরামত, ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং কৃষি ঋণ মকুবের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোনো উদ্যোগ নেই। মানুষের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে।”
​গত ৫ অক্টোবর ধূপগুড়ি ব্লক ও সংলগ্ন এলাকায় অপ্রত্যাশিত প্রবল বৃষ্টিতে জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি, তারই মধ্যে ফের বৃষ্টির পূর্বাভাসে ভয়, উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভে ফুঁসছে উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষ।

Comments :0

Login to leave a comment